মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মন্ত্রিসভাকে পার্টি করে তৃণমূলের (TMC) প্রতীক কেড়ে নিতে বলব কি? শুক্রবার এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gganguly)। নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) নিয়ে গত কয়েক মাসে নজিরবিহীন বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন সে সবকে ছাপিয়ে গেল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য। তিনি বলেন, হয় ক্যাবিনেটকে বলতে হবে যে আমরা অযোগ্যদের পাশে নেই এবং ১৯ শে মে-র বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে। নাহলে এমন পদক্ষেপ করব যেটা গোটা দেশে কখনও হয়নি। তিনি বলেন, আমার সন্দেহ আছে যে, হয় গণতন্ত্র সঠিক হাতে নেই। আর নাহলে গণতন্ত্র বিকশিত হয়নি। আমি ক্যাবিনেটকে পার্টি করে দেব। সবাইকে এসে উত্তর দিতে হবে। শোকজ করতে পারি।
সওয়াল জবাব...
এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং মণীশ জৈনের দীর্ঘ সওয়াল জবাব চলে আদালতে। এক প্রশ্নের উত্তরে মণীশ বলেন, অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশ এসেছিল। তিনিই আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
প্রশ্ন: আপনি কি জানেন যে কমিশনের আইন অনুযায়ী কোন বেআইনি নিয়োগ করা যায় না?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: তাহলে অতিরিক্ত শূন্যপদ কেন তৈরি করা হল?
উত্তর: উপযুক্ত স্তর থেকে নির্দেশ এসেছিল। ব্রাত্য বসুর নির্দেশ এসেছিল। তিনি আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমার আইনজীবী এবং অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। আইন দফতরের সঙ্গেও কথা হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়। মুখ্যসচিবকে জানানো হয়। ক্যাবিনেটে নোট পাঠানো হয়।
প্রশ্ন: অবৈধদের নিয়োগ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীরা?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় না যে অবৈধদের বাঁচানোর জন্য এই অতিরিক্ত শূন্যপদ? অবৈধদের সরানোর কোন সিদ্ধান্ত হয়েছিল?
উত্তর: আমরা আইন দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।
প্রশ্ন: আমি বিস্মিত যে কীভাবে ক্যাবিনেটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? যেখানে আইনে এর কোন সংস্থান নেই। আপনি কি মনে করেন যে অবৈধদের চাকরি বাঁচানো দরকার?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: কোন ক্যাবিনেটে এই সিদ্ধান্ত হয়?
উত্তর: আমরা আইন দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।
প্রশ্ন: এটা কোনও রাজ্যের নীতি হতে পারে? আবার বলা হচ্ছে, যে কারও চাকরি যাবে না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবীর কাছে আবেদন দাখিল করার কোনও লিখিত নির্দেশিকা নেই। অতিরিক্ত প্রায় ২৬২ কোটি টাকা কেন প্রতি বছর ব্যয় করা হবে এই অযোগ্যদের জন্য?
উত্তর: আমরা অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গেও এবিষয়ে কথা বলেছিলাম।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় না যে ক্যাবিনেট তার এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংবিধানবিরোধী কাজ করেছে? ক্যাবিনেটের সদস্যরা সই করলেন? কেউ তাঁদের সতর্ক করলেন না?
উত্তর: আমি সেখানে ছিলাম না।
এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন, বিধানসভায় দলনেতা মুখ্যমন্ত্রী। আর লোকসভায় দলনেতা প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি ইলেকশন কমিশনকে বলব তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো প্রত্যাহার করার জন্য। দল হিসাবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করতে বলব নির্বাচন কমিশনকে। সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছা করা যায় না, হুঁশিয়ারি বিচারপতির। তিনি বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীর যন্ত্রণা বুঝতে পারি। কিন্তু কিছু দালাল যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত তারা আদালতের নামে যা ইচ্ছা বলছে। বলছে, যে নিয়োগ হলেই আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছে। আদালত কি এগরোল নাকি যে এলেই স্থগিতাদেশ পেয়ে যাবে? প্রশ্ন বিচারপতির।
আরও পড়ুন: অভিষেকই ‘কয়লা ভাইপো’? মেনে নিচ্ছে তৃণমূল?
+ There are no comments
Add yours