তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার দাপট অব্যাহত। তাপমাত্রার পারদ কমতেই ফুসফুস ও শ্বাসনালীর একাধিক সংক্রমণে জেরবার আট থেকে আশি, বিভিন্ন বয়সের মানুষ। আর এর মধ্যেই নতুন আরেক রোগের দাপট। যার জেরে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল। আর এই নতুন আতঙ্কের নাম ব্রুসেলোসিস (Brucellosis)।
কী এই ব্রুসেলোসিস?
ব্রুসেলোসিস হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গবাদি পশু থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গরু, উট, কুকুরের মতো প্রাণী থেকে এই রোগের ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। অনেক সময় গরু, ছাগল, মোষের মতো গবাদি পশু এই রোগে আক্রান্ত হলে, আক্রান্ত প্রাণীর দুধ থেকেও মানুষের শরীরে এই রোগ ছড়াতে পারে। মূলত, পশুর থেকেই এই রোগ (Brucellosis) মানুষের শরীরে প্রবেশ করে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
কীভাবে চিহ্নিত হয়?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই রোগে আক্রান্ত হলে কয়েকটি উপসর্গ স্পষ্ট জানান দেয়। তাই উপসর্গ সম্পর্কে সজাগ থাকলে এই রোগ দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত হলে পেটে, পিঠে অসহ্য যন্ত্রণা, হাঁটু কিংবা গোড়ালিতে ব্যথা, জ্বরের মতো উপসর্গ (Brucellosis) দেখা দেয়। তার সঙ্গে হয় কাশি ও মাথার যন্ত্রণার মতো উপসর্গ। খাওয়ার ইচ্ছে চলে যায়। রাতে অতিরিক্ত ঘাম হয়। পাশপাশি ওজন দ্রুত কমতে থাকে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসক মহল।
কীভাবে রোগ নির্ণয় সম্ভব?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত হলে নির্দিষ্ট শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যায়। রক্ত পরীক্ষা এবং অস্থিমজ্জার কিছু নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত কিনা, তা নিশ্চিত করা যায়।
কেন রাজ্যের জন্য বাড়তি উদ্বেগ?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্রুসেলোসিস (Brucellosis) আক্রান্তের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যার জেরেই উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি কলকাতার আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তির বাড়ি নদীয়ায়। তাঁর বাড়িতে গরু রয়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গরুর থেকেই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করেছে। পরিস্থিতি জটিল হয়। তাই বাঁচানো যায়নি। এর আগেও বর্ধমান, আসানসোল সহ একাধিক জায়গায় ব্রুসেলোসিস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল। আরও কয়েকজনের ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। কয়েক সপ্তাহ আগেই কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে একজন ব্রুসেলোসিস আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছিল।ইতিমধ্যেই রাজ্যে প্রায় আড়াইশো জন ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানাচ্ছেন এক স্বাস্থ্য কর্তা।
কী পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যাদের বাড়িতে গবাদি পশু রয়েছে, তাদের বাড়তি সতর্ক থাকা জরুরি। পশুর শরীরে কোনও রকম ঘা বা অন্য কোনও সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। গবাদি পশুর দেহে যাতে কোনও রকম বড় রোগ না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তবে বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে জ্বর বা পেট ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলে একেবারেই অবহেলা করা চলবে না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ব্রুসেলোসিস (Brucellosis) চিকিৎসার নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। সময় মতো চিকিৎসা শুরু করলে প্রাণ সংশয় এড়ানো সম্ভব বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours