মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরও এক বার অন্তরীক্ষে নয়া ইতিহাস তৈরি করল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মাণ দু’টি কৃত্রিম উপগ্রহকে জুড়ে একটি মহাকাশযান তৈরি করল ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। ইসরোর এই পরীক্ষার পোশাকি নাম ‘স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট মিশন’ (স্পাডেক্স)। মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’-র (ISRO) তৈরি করা পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যাল (পিএসএলভি)-সি৬০। পাড়ি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পৃথিবীর কক্ষপথে পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যাল-এর পেলোডগুলো সফল ভাবে স্থাপন করা হয়।
সফল উৎক্ষেপণ
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সোমবার রাতে সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে পিএসএলভি-সি৬০ (PSLV-C60) রকেটটির সফল উৎক্ষেপণ হয়েছে। ইসরো এ ব্যাপারে বলেছে, পিএসএলভি-সি৬০-র প্রধান পেলোড হিসাবে রয়েছে দু’খানা মহাকাশযান। একটি স্পাডেক্স ১ এবং অন্যটি স্পাডেক্স ২। এ ছাড়াও ২৪টি সেকেন্ডারি পেলোড রয়েছে। যা ইসরোর বিজ্ঞানীদের ‘মহাকাশ ডকিং’ মিশনের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মিশনের প্রধান জয়কুমার জানিয়েছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে নিজস্ব আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করতে জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এই ‘মহাকাশ ডকিং’ পরীক্ষা।
Slow-motion liftoff and onboard views! 🚀✨
SpaDeX’s historic mission onboard PSLV-C60 delivers breathtaking visuals, showcasing India’s strides in space exploration. 🌌🛰️
📖 More info: https://t.co/jQEnGi3W2d#SpaDeX #ISRO 🚀
📍 @DrJitendraSingh pic.twitter.com/5eJ6FAiIxI— ISRO (@isro) December 31, 2024
বুলেটের চেয়ে ১০ গুণ গতি
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবীর কক্ষপথে বুলেটের চেয়ে ১০ গুণ গতিতে ঘুরে চলা দু’টি কৃত্রিম উপগ্রহকে জুড়ে একটি মহাকাশযান তৈরি করা যেমন কঠিন, তেমনই চ্যালেঞ্জিং। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই বিষয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। বর্তমানে কেবলমাত্র আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার কাছে রয়েছে এই প্রযুক্তি। ৩০ ডিসেম্বরের মিশনের পর চতুর্থ দেশ হিসাবে এই ক্লাবে যোগ দিতে চলেছে ভারত। মহাকাশ স্টেশন তৈরির ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি অত্যাবশ্যক।
কেমন হল গবেষণা
ইসরো সূত্রে খবর, দু’টি বিশেষ ধরনের কৃত্রিম উপগ্রহকে পৃথিবীর কক্ষপথে নিয়ে যাবে ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (পিএসএলভি) নামের রকেট। উপগ্রহগুলির প্রতিটির ওজন ২২০ কেজি। মহাশূন্যে সেগুলিকে ‘ডকিং’ এবং ‘আনডকিং’ করবেন এ দেশের মহাকাশ গবেষকেরা। মহাশূন্যে তীব্র গতিতে ঘূর্ণায়মান দু’টি বস্তুকে কাছাকাছি এনে জুড়ে দেওয়াকেই বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ডকিং’। সেই কাজটাই করতে চলেছে ইসরো। পরীক্ষা সফল হলে ফের ওই দুই উপগ্রহকে আলাদা করা হবে। যাকে ‘আনডকিং’ বলে চিহ্নিত করেছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
🎥 Relive the Liftoff! 🚀
Experience the majestic PSLV-C60 launch carrying SpaDeX and groundbreaking payloads. Enjoy breathtaking images of this milestone in India’s space journey! 🌌✨#SpaDeX #PSLV #ISRO
📍 @DrJitendraSingh pic.twitter.com/PWdzY0B7nQ
— ISRO (@isro) December 30, 2024
পৃথিবীর ৪৭০ কিলোমিটার উপরে পরীক্ষা
ইসরো জানিয়েছে, পৃথিবীর ৪৭০ কিলোমিটার উপরে চলে এই পরীক্ষা। এর জন্য বিশেষ একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ভারতীয় গবেষণা সংস্থা। এর নাম ‘ভারতীয় ডকিং সিস্টেম’। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এই কাজে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ডকিং সিস্টেম স্ট্যান্ডার্ড’ (আইডিএসএস)। ভারতীয় প্রযুক্তিটি সমমানের বলে দাবি করা হয়েছে ইসরোর তরফে। এই প্রসঙ্গে ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, ‘‘ভারত নিজস্ব ডকিং প্রযুক্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এই ধরনের জটিল এবং সুক্ষ্ম প্রযুক্তি কখনওই কোনও দেশ হস্তান্তর করে না। এটা সত্যিই গর্বের।’’ ইসরো ইতিমধ্যেই এই ডকিং প্রযুক্তির স্বত্ব নিয়েছে। ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেছেন, ‘‘ডকিং হল একটা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। পদার্থবিদ্যার বহু হিসাব-নিকাশ মাথায় রাখতে হয়েছে। ওই সময়ে দু’টি উপগ্রহকে একই কক্ষপথে থাকতে হবে। জুড়ে যাওয়ার পর তারা যেন রাস্তা হারিয়ে না ফেলে সে দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখব আমরা।’’
🎉 SpaDeX Deployed! 🛰️
Successful separation of SpaDeX satellites marks another milestone in India’s space journey.
🎥 Watch live: https://t.co/D1T5YDD2OT
📖 More info: https://t.co/jQEnGi3W2d#ISRO #SpaDeX 🚀
— ISRO (@isro) December 30, 2024
ডকিং সিস্টেম-এর গুরুত্ব
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি, অন্তরীক্ষে স্টেশন তৈরির ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি সবচেয়ে জরুরি। কারণ, ওই স্টেশন কখনওই একবারে নির্মাণ করা সম্ভব নয়। পৃথিবী থেকে ধাপে ধাপে মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়া হয় এর এক একটি অংশ। এর পর ভাসমান অবস্থাতেই সেগুলি জুড়ে গিয়ে আত্মপ্রকাশ করে আস্ত একটা মহাকাশ স্টেশন। সোমনাথ জানিয়েছেন, পরবর্তী ‘চন্দ্রযান-৪’ মিশনেও ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হবে এই ডকিং প্রযুক্তি। আগামী দিনে চাঁদে নভচারী পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। মহাকাশযান নিয়ে পৃথিবীর উপগ্রহে নামতে প্রয়োজন হবে এই ডকিং প্রযুক্তির। স্পাডেক্স মিশনে এই প্রযুক্তির পরীক্ষার জন্য যে মোটর ব্যবহার হচ্ছে, তার ব্যাস ৪৫০ মিলিমিটার। তবে আগামী দিনে ৮০০ মিলিমিটারের ডকিং সরঞ্জাম তৈরির লক্ষ্য রয়েছে ইসরোর। গগনযান মিশনের মহাকাশচারীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন বলে জানা গিয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
Leave a Reply