Ramakrishna 243: “যাঁর চৈতন্যে জগৎ চৈতন্য হয়ে রয়েছে,—তাঁর চিন্তা করে কেউ কি অচৈতন্য হয়?”

Ramakrishna_

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পেনেটীর মহোৎসবক্ষেত্রে রাখাল, রাম, মাস্টার,

ভবনাথ প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ১৮ই জুন

শ্রীযুক্ত নবদ্বীপ গোস্বামীর প্রতি উপদেশ

শ্রীগৌরাঙ্গের মহাভাব, প্রেম ও তিন দশা 

সমাধিস্থ শ্রীরামকৃষ্ণ—গোস্বামীর যোগ ও ভোগ 

“কৃষ্ণ অর্জুনের সহিত কথা কহিতেছেন—এই কথা বলিতে বলিতে ঠাকুর (Ramakrishna) আবার সমাধিস্থ হইতেছেন। দেখিতে দেখিতে সমস্ত স্থির—চক্ষু পলকশূন্য। নিঃশ্বাস বহিতেছে কি না বহিতেছে বুঝা ঝায় না। নবদ্বীপ গোস্বামী, তাঁহার পুত্র ও ভক্তগণ অবাক্‌ হইয়া দেখিতেছেন।

কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া ঠাকুর নবদ্বীপকে বলিতেছেন:

“যোগ ভোগ। তোমরা গোস্বামীবংশ তোমাদের দুই-ই আছে।

“এখন কেবল তাঁকে প্রার্থনা কর, আন্তরিক প্রার্থনা—‘হে ঈশ্বর, তোমার এই ভুবনমোহিনী মায়ার ঐশ্বর্য—আমি চাই না—আমি তোমায় চাই (Kathamrita)।’

“তিনি তো সর্বভূতেই আছেন—তবে ভক্ত কাকে বলে? যে তাঁতে থাকে—যার মন-প্রাণ-অন্তরাত্মা সব, তাঁতে গত হয়েছে।”

“ঠাকুর (Ramakrishna) এইবার সহজাবস্থা প্রাপ্ত হইয়াছেন। নবদ্বীপকে বলিতেছেন:

“আমার এই যে অবস্থাটা হয় (সমাধি অবস্থা) কেউ কেউ বলে রোগ। আমি বলি যাঁর চৈতন্যে জগৎ চৈতন্য হয়ে রয়েছে,—তাঁর চিন্তা করে কেউ কি অচৈতন্য হয়?”

শ্রীযুক্ত মণি সেন অভ্যাগত ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবদের বিদায় করিতেছেন—কাহাকে এক টাকা, কাহাকে দুই টাকা—যে যেমন ব্যক্তি।

ঠাকুরকে পাঁচ টাকা দিতে আসিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলিলেন (Kathamrita):

“আমার টাকা নিতে নাই।”

মণি সেন তথাপি ছাড়েন না।

ঠাকুর তখন বলিলেন, যদি দাও তোমার গুরুর দিব্য। মণি সেন আবার দিতে আসিলেন। তখন ঠাকুর যেন অধৈর্য হইয়া মাস্টারকে বলিতেছেন, “কেমন গো নেব?” মাস্টার ঘোরতর আপত্তি করিয়া বলিলেন, “আজ্ঞা না—কোন মতেই নেবেন না।”

শ্রীযুক্ত মণি সেনের লোকেরা তখন আম সন্দেশ কিনিবার নাম করিয়া রাখালের হস্তে টাকা দিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) (মাস্টারের প্রতি)—আমি গুরুর দিব্য দিয়েছি।—আমি এখন খালাস। রাখাল নিয়েছে সে এখন বুঝুগগে।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে গাড়িতে আরোহণ করিলেন (Kathamrita)—দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ফিরিয়া যাইবেন।

নিরাকার ধ্যান ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ 

পথে মতিশীলের ঠাকুরবাড়ি। ঠাকুর মাস্টারকে অনেকদিন হইল বলিতেছেন—একসঙ্গে আসিয়া এই ঠাকুরবাড়ির ঝিল দর্শন করিবেন—নিরাকার ধ্যান কিরূপ আরোপ করিতে হয়, শিখাইবার জন্য।

ঠাকুরের খুব সর্দি হইয়াছে। তথাপি ভক্তসঙ্গে ঠাকুরবাড়ি দেখিবার জন্য গাড়ি হইতে অবতরণ করিলেন।

ঠাকুরবাড়িতে (Ramakrishna) শ্রীগৌরাঙ্গের সেবা আছে। সন্ধ্যার এখনও একটু দেরি আছে। ঠাকুর ভক্তসঙ্গে শ্রীগৌরাঙ্গ-বিগ্রহের সম্মুখে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন।

এইবার ঠাকুরবাড়ির পূর্বাংশে যে ঝিল আছে তাহার ঘাটে আসিয়া ঝিল ও মৎস্য দর্শন করিতেছেন। কেহ মাছগুলির হিংসা করে না, মুড়ি ইত্যাদি খাবার জিনিস, কিছু দিলেই বড় বড় মাছ দলে দলে সম্মুখে আসিয়া ভক্ষণ করে—তারপর নির্ভয়ে আনন্দে লীলা করিতে করিতে জলমধ্যে বিচরণ করে।

ঠাকুর মাস্টারকে বলিতেছেন, “এই দেখ, কেমন মাছগুলি। এইরূপ চিদানন্দ-সাগরে এই মাছের ন্যায় আনন্দে বিচরণ করা।”

আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share