ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ প্রহ্লাদচরিত্রাভিনয় দর্শনে স্টার থিয়েটারে
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
১৮৮৪, ১৪ই ডিসেম্বর
ঈশ্বরদর্শনের উপায় — ব্যাকুলতা
পাপীতাপী ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ
গিরিশ (Ramakrishna)—এ পাপীর কি হবে?
ঠাকুর ঊর্ধ্বদৃষ্টি করিয়া করুণস্বরে গান ধরিলেন:
ভাব শ্রীকান্ত নরকান্তকারীরে।
নিতান্ত কৃতান্ত ভয়ান্ত হরি ॥
ভাবিলে ভব ভাবনা যায় রে —
তরে তরঙ্গে ভ্রূভঙ্গে ত্রিভঙ্গে যেবা ভাবে।
এলি কি তত্ত্বে, এ মর্তে কুচিত্ত কুবৃত্ত করিলে কি হবে রে —
উচিত তো নয়, দাশরথিরে ডুবাবি রে —
কর এ চিত্ত প্রাচিত্ত, সে নিত্য পদ ভেবে ॥
(গিরিশের প্রতি)—“তবে তরঙ্গে ভ্রূভঙ্গে ত্রিভঙ্গে যেবা ভাবে (Kathamrita)।”
আদ্যাশক্তি মহামায়ার পূজা ও আমমোক্তারি বা বকলমা
মহামায়া দ্বার ছাড়লে তাঁর দর্শন হয়। মহামায়ার দয়া চাই। তাই শক্তির উপাসনা। দেখ না, কাছে ভগবান আছেন তবু তাঁকে জানবার জো নাই, মাঝে মহামায়া (Ramakrishna) আছেন বলে। রাম-সীতা, লক্ষ্মণ যাচ্ছেন। আগে রাম, মাঝে সীতা—সকলের পিছনে লক্ষ্মণ। রাম আড়াই হাত অন্তরে রয়েছেন, তবু লক্ষ্মণ দেখতে পাচ্ছেন (Kathamrita) না।
“তাঁকে উপাসনা করতে একটা ভাব আশ্রয় করতে হয়। আমার তিন ভাব,—সন্তান ভাব, দাসী ভাব আর সখীভাব। দাসী ভাব, সখীভাবে অনেক-দিন ছিলাম। তখন মেয়েদের মতো কাপড়, গয়না, ওড়না পরতুম। সন্তান ভাব খুব ভাল।
“বীরভাব ভাল না। নেড়া-নেড়ীদের, ভৈরব-ভৈরবীদের বীরভাব। অর্থাৎ প্রকৃতিকে স্ত্রীরূপে দেখা আর রমণের দ্বারা প্রসন্ন করা, এ-ভাবে প্রায়ই পতন আছে।”
গিরিশ—আমার এক সময়ে ওই ভাব এসেছিল (Kathamrita)।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) চিন্তিত হইয়া গিরিশকে দেখিতে লাগিলেন।
গিরিশ—ওই আড়টুকু আছে, এখন উপায় কি বলুন?
শ্রীরামকৃষ্ণ (কিয়ৎক্ষণ চিন্তার পর)—তাঁকে আমমোক্তারি দাও—তিনি যা করবার করুন।
সংসারে কি ঈশ্বরলাভ হয়?
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—সংসারে হবে না কেন? তবে বিবেক-বৈরাগ্য চাই। ঈশ্বর বস্তু আর সব অনিত্য, দুদিনের জন্য,—এইটি পাকা বোধ চাই। উপর উপর ভাসলে হবে না, ডুব দিতে হবে!
এই বলিয়া ঠাকুর গান গাহিতেছেন:
ডুব্ ডুব্ রূপসাগরে আমার মন।
তলাতল পাতাল খুঁজলে পাবি রে প্রেম রত্নধন ॥
Leave a Reply