মোহিনী বললেন: “এখানে এলেই একটু শান্ত হন। ওখানে মাঝে মাঝে খুব হাঙ্গামা করেন। সেদিন তো মরতে গিয়েছিলেন!”
ঠাকুর কিছুক্ষণ নীরবে চিন্তায় ডুবে রইলেন।
মোহিনী বিনীতভাবে বললেন:
“আপনার দু-একটা কথা বলে দিতে হবে।”
শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন:
“রাঁধতে দিও না। ওতে মাথা আরও গরম হয়ে যায়। আর লোকজনের সঙ্গে রাখো—তাতে উপকার হবে।”
শ্রীরামকৃষ্ণের অদ্ভুত সন্ন্যাসের অবস্থা-তারক সংবাদ
সন্ধ্যা হয়েছে। ঠাকুরবাড়িতে আরতির প্রস্তুতি চলছে। শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরে আলো জ্বালানো হয়েছে। ঠাকুর একটি ছোট খাটে বসে জগতমাতাকে প্রণাম করে কোমল সুরে তাঁর নাম জপ করছেন। ঘরে আর কেউ নেই, কেবল মাস্টার (মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত) বসে আছেন।
ঠাকুর উঠে দাঁড়ালেন, মাস্টারও দাঁড়ালেন। ঠাকুর ঘরের পশ্চিম ও উত্তর দিকের দরজাগুলির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন — “ওগুলো বন্ধ করো।”
মাস্টার দরজাগুলি বন্ধ করে বারান্দায় এসে ঠাকুরের কাছে দাঁড়ালেন।
ঠাকুর বললেন, “একবার কালীঘরে যাব।”
এই বলে মাস্টারের হাত ধরে তাঁর উপর ভর করে কালীঘরের সম্মুখ চাতালে উপস্থিত হলেন এবং সেখানে বসে পড়লেন। বসার পূর্বে বললেন,
— “তুমি বরং ওকে ডেকে দাও।”
মাস্টার বাবুরামকে (পরবর্তীকালে স্বামী প্রেমানন্দ) ডেকে পাঠালেন।
ঠাকুর মা কালী দর্শন করে বৃহৎ উঠোনের মধ্যে দিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসছেন। মুখে উচ্চারিত হচ্ছে—
— “মা… মা… রাজরাজেশ্বরী…”
ঘরে এসে আবার ছোট খাটে বসে পড়লেন। ঠাকুরের এক অদ্ভুত অবস্থা দেখা যাচ্ছে। কোনও ধাতুর বস্তুতে তিনি হাত দিতে পারছেন না। বলেছিলেন,
— “মা বুঝি ঐশ্বর্যের ব্যাপারটি মন থেকে একেবারে তুলে দিচ্ছেন। এখন কলাপাতায় আহার করি, মাটির ভাড়ে জল খাই। গাড়ু (পিতলের পাত্র) ছুঁতে পারি না। তাই ভক্তদের বলেছি মাটির ভাড়া নিয়ে আসতে। গাড়ু বা ধাতুর থালায় হাত দিলে ঝনঝন শব্দ হয়, যেন শিঙি মাছের কাঁটা বিঁধছে হাতের মধ্যে।”
Leave a Reply