Ramakrishna 421: ভক্তরা নিস্তব্ধ হইয়া গান শুনিতেছেন, তাঁহারা একদৃষ্টে ঠাকুরের অদ্ভুত, আত্মহারা, মাতোয়ারা ভাব দেখিতেছেন

ramkrishna kathamrita by mahendra gupta 403th copy

ভক্তেরা নিস্তব্ধ হইয়া গান শুনিতেছেন। তাহারা একদৃষ্টে ঠাকুরের অদ্ভুত, আত্মহারা, মাতোয়ারা ভাব দেখিতেছেন। গান সমাপ্ত হইলে কিয়ৎকাল পরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলিতে লাগিলেন,
“আমার আজ গান ভালো হলো না—সর্দি হয়েছে।”

১৮৮৫, ১১ই মার্চ।

সন্ধ্যার সমাগমে ক্রমে সন্ধ্যা হইল। সিন্ধু-বক্ষে যেখানে অনন্তের নীল ছায়া পড়িয়াছে, নিবিড় অরণ্যের মধ্যে অম্বরস্পর্শী পর্বতশীর্ষে বায়ু দুলিতেছে। নদীর তীরে, দিগন্তব্যাপী প্রান্তরের মধ্যে, এক ক্ষুদ্র মানবের মনে সহজেই ভাবান্তর হইল।

এই সূর্য—এই যে সূর্য চরাচরকে আলোকিত করিতেছিল, তিনি কোথায় গেলেন?

এক বালক ভাবিতেছে। আবার ভাবিতেছে—বালক-স্বভাবাপন্ন মহাপুরুষ। সন্ধ্যা হইল, কি আশ্চর্য! পাখিরা শাখায় আশ্রয় করিয়া রব করিতেছে। মানুষের মধ্যে যেন চৈতন্য এসেছে। তারা সেই আদি কবির, কারণের কারণ, পুরুষোত্তমের নাম পড়িতেছে।

কথা কহিতে কহিতে সন্ধ্যা হইল। ভক্তেরা যে যে আসনে বসিয়া ছিলেন, তিনি সেই আসনেই বসিয়া রহিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ মধুর নাম করিতেছেন, সকলে উদ্‌গ্রীব হইয়া সেই নাম শুনিতেছেন।

অমন মিষ্টি নাম—তারা যেন কখনও শোনেন নাই! যেন সুধাবর্ষণ হইতেছে! এমন প্রেম মাখা বালকের মা,মা বলে ডাকা—তারা যেন কখনও শুনেন নাই, দেখেন নাই। আকাশ, পর্বত, মহাসাগর, প্রান্তর—তাদের পরেও আর কিছু দেখিবার প্রয়োজন কী? গরুর শৃঙ্গ, পদাদি ও শরীরের অন্যান্য অংশ—আর কিছু দেখিবার প্রয়োজন আছে কি?

দয়াময় গুরুদেব যে “গরুর বাট”-এর কথা বলিলেন, এই গৃহমধ্যেই কি তাহা আমরা দেখিতেছি?

সকলের অশান্ত মন কিসের শান্তি লাভ করিল? আনন্দ ধরা কিসে? কিসে ভক্তরা আনন্দে ভাসিলেন?

দেখিতেছি—ভক্তরা শান্ত, আর আনন্দময়।

এই প্রেমিক সন্ন্যাসী—কি সুন্দর রূপধারী! যেন অনন্ত ঈশ্বর! এইখানেই কি দুগ্ধপান-পিপাসুর পিপাসা শান্ত হইবে?

অবতার হোন, আর না হোন—ইহারই চরণপ্রান্তে মন বিকাশের, চিত্ত নিবেশের, আর কিছুর প্রয়োজন নাই।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share