Ramakrishna 480: “যশোদা বললেন, মা, আর কি লব? তবে এই বল, যেন কায়মনোবাক্যে কৃষ্ণেরই সেবা করতে পারি”

ramakrishna kathamrita by mahendranath gupta 480th copy

৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
সত্যকথা কলির তপস্যা — ঈশ্বরকোটি ও জীবকোটি

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—অবতার বা অবতারের অংশ, এদের বলে ঈশ্বরকোটি আর সাধারণ লোকদের বলে জীব বা জীবকোটি। যারা জীবকোটি তারা সাধনা করে ঈশ্বরলাভ করতে পারে; তারা সমাধিস্থ হয়ে আর ফেরে না।

“যারা ঈশ্বরকোটি—তারা যেমন রাজার বেটা; সাততলার চাবি তাদের হাতে। তারা সাততলায় উঠে যায়, আবার ইচ্ছামতো নেমে আসতে পারে। জীবকোটি যেমন ছোট কর্মচারী, সাততলা বাড়ির খানিকটা যেতে পারে ওই পর্যন্ত।”

জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় 

“জনক জ্ঞানী, সাধন করে জ্ঞানলাভ করেছিল; শুকদেব জ্ঞানের মূর্তি।”

গিরিশ—আহা!

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সাধন করে শুকদেবের জ্ঞানলাভ করতে হয় নাই। নারদেরও শুকদেবের মতো ব্রহ্মজ্ঞান ছিল, কিন্তু ভক্তি নিয়ে ছিলেন—লোকশিক্ষার জন্য। প্রহ্লাদ কখনও সোঽহম্‌ ভাবে থাকতেন, কখনও দাসভাবে—সন্তানভাবে। হনুমানেরও ওই অবস্থা।

“মনে করলে সকলেরই এই অবস্থা হয় না। কোনও বাঁশের বেশি খোল, কোনও বাঁশের ফুটো ছোট।”

৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল

কামিনী-কাঞ্চন ও তীব্র বৈরাগ্য

একজন ভক্ত—আপনার এ-সব ভাব নজিরের জন্য, তাহলে আমাদের কি করতে হবে?

শ্রীরামকৃষ্ণ—ভগবানলাভ করতে হলে তীব্র বৈরাগ্য দরকার। যা ঈশ্বরের (Kathamrita) পথে বিরুদ্ধ বলে বোধ হবে তৎক্ষণাৎ ত্যাগ করতে হয়। পরে হবে বলে ফেলে রাখা উচিত নয়। কামিনী-কাঞ্চন ঈশ্বরের পথে বিরোধী; ও-থেকে মন সরিয়ে নিতে হবে।

“ঢিমে তেতালা হলে হবে না। একজন গামছা কাঁধে স্নান করতে যাচ্ছে। পরিবার বললে, তুমি কোন কাজের নও, বয়স বাড়ছে, এখন এ-সব ত্যাগ করতে পারলে না। আমাকে ছেড়ে তুমি একদিনও থাকতে পার না। কিন্তু অমুক কেমন ত্যাগী!

স্বামী—কেন, সে কি করেছে?

পরিবার—তার ষোলজন মাগ, সে এক-একজন করে তাদের ত্যাগ করছে। তুমি কখনও ত্যাগ করতে পারবে না।

স্বামী—এক-একজন করে ত্যাগ! ওরে খেপী, সে ত্যাগ করতে পারবে না। যে ত্যাগ করে সে কি একটু একটু করে ত্যাগ করে!

পরিবার—(সহাস্যে) — তবু তোমার চেয়ে ভাল।

স্বামী—খেপী, তুই বুঝিস না। তার কর্ম নয়, আমিই ত্যাগ করতে পারব, এই দ্যাখ্‌ আমি চললুম!

“এর নাম তীব্র বৈরাগ্য। যাই বিবেক এল তৎক্ষণাৎ ত্যাগ করলে। গামছা কাঁধেই চলে গেল। সংসার গোছগাছ করতে এল না। বাড়ির দিকে একবার পেছন ফিরে চাইলেও না।

“যে ত্যাগ করবে তার খুব মনের বল চাই। ডাকাত পড়ার ভাব। অ্যায়!!!—ডাকাতি করবার আগে যেমন ডাকাতেরা বলে মারো! লোটো! কাটো! (Kathamrita)

“কি আর তোমরা করবে? তাঁতে ভক্তি, প্রেম লাভ করে দিন কাটানো। কৃষ্ণের অদর্শনে যশোদা পাগলের ন্যায় শ্রীমতীর কাছে গেলেন। শ্রীমতী তাঁর শোক দেখে আদ্যাশক্তিরূপে দেখা দিলেন। বললেন, মা, আমার কাছে বর নাও। যশোদা বললেন, মা, আর কি লব? তবে এই বল, যেন কায়মনোবাক্যে কৃষ্ণেরই (Ramakrishna) সেবা করতে পারি। এই চক্ষে তার ভক্তদর্শন,—যেখানে যেখানে তার লীলা, এই পা দিয়ে সেখানে যেতে পারি,—এই হাতে তার সেবা আর তার ভক্তসেবা,—সব ইন্দ্রিয়, যেন তারই কাজ করে।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share