তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বর্ষার মরশুমে রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গির দাপট! কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা সহ একাধিক জেলায় ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গির আক্রমণ। আর তার জেরেই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে শয্যাসঙ্কট চরমে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠছে, ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্তের ভর্তির জায়গা নেই। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। অনেক সময় মশারি টাঙিয়ে হাসপাতালের মেঝেতেই পড়ে থাকছেন ডেঙ্গি-আক্রান্ত। অনেক সময় আক্রান্তকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি আক্রান্ত বাড়িতে থাকলে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ নজরদারি জরুরি। না হলে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হতে পারে!
রাজ্যের ডেঙ্গি আক্রান্ত কত?
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এ বছরের ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্ত ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ৩ জন মারা গিয়েছেন। যদিও বেসরকারি হিসাবে পরিসংখ্যান অনেকটাই আলাদা। বেসরকারি হিসাবে এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্ত ৫৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী মাসে আরও কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হবেন। তাই হাসপাতালে শয্যার চাহিদা বাড়বে। কিন্তু আক্রান্তের অনুপাতে পরিষেবা দেওয়া কতখানি সম্ভব, সে নিয়েও সংশয় থাকছেই। তাই বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা জরুরি।
বাড়িতে চিকিৎসায় (Dengue) কোন দিকে নজরদারি জরুরি?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, হাসপাতালে ভর্তি ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। তাই আগে থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে হবে। অনেকে জ্বর হলেও রক্ত পরীক্ষা করাতে দেরি করছেন। ফলে, রোগ নির্ণয় হচ্ছে না। চিকিৎসা শুরু হতেই অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি আগে থেকেই জটিল হয়ে থাকছে। সেক্ষেত্রে হয়রানি বাড়ছে। বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা জরুরি। আবার অনেকের ডেঙ্গির (Dengue) সব উপসর্গ প্রকট হচ্ছে না। অর্থাৎ, উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যাও অনেক। তাই সামান্য সর্দি-কাশির মতো সমস্যা কয়েক দিন ভোগান্তির কারণ হলেও রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জল খাওয়ায় নজর
ডেঙ্গি রিপোর্ট পজিটিভ হলে সবচেয়ে বেশি নজরদারি দিতে হবে জল খাওয়ায়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বডি ফ্লুইড অর্থাৎ শরীরে তরল পদার্থ যাতে কোনও ভাবেই না কমে, সেদিকে নজরদারি জরুরি। কারণ শরীরে তরল উপাদান কমলে মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি সহ একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই জল খাওয়ার দিকে বিশেষ নজরদারি জরুরি। চিকিৎসকদের পরামর্শ, ডেঙ্গি আক্রান্ত নিয়মিত যে পরিমাণ জল খান, তার থেকে অন্তত ১ লিটার বেশি জল খাবেন। অর্থাৎ, কেউ যদি নিয়মিত ৩ লিটার জল খান, ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে অন্তত ৪ লিটার খেতেই হবে। এর পাশপাশি ফলের রস, দুধ, স্ট্রু জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কারণ, এই সব খাবারে একদিকে শরীরের পুষ্টি হবে, আরেকদিকে শরীরে জলের চাহিদা পূরণ করবে।
অক্সিজেনের মাত্রা ও প্লেটলেট
ডেঙ্গি আক্রান্তকে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে। যাতে তার থেকে অন্যদের রোগ না ছড়ায়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি সংক্রমণ খুব দ্রুত হয়। তাই আক্রান্তকে আলাদা ঘরে রাখার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি জরুরি। ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্তের নিয়ম করে অক্সিজেনের মাত্রা ও প্লেটলেট মাপা জরুরি। বাড়িতে থাকলেও নিয়মিত এই দুটি বিষয় মাপার বিষয়ে নজরদারি রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কারণ, তাহলে বড় বিপদ এড়ানো যাবে। হঠাৎ অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে শ্বাসকষ্ট হবে, আবার প্লেটলেট কমলে নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই দুই ঠিক রয়েছে কিনা, তা নজরদারি করা প্রয়োজন।
ডেঙ্গি আক্রান্তের শরীরের কোনও অংশ লাল হচ্ছে কিনা, রক্তপাত হচ্ছে কিনা, তা দেখা দরকার। কারণ, এগুলো পরিস্থিতি বিপজ্জনক হওয়ার লক্ষণ। তাই বাড়িতে ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্ত থাকলে এসব বিষয়ে নজরদারি জরুরি বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ
+ There are no comments
Add yours