মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পরীক্ষার আগে (Pariksha Pe Charcha) ছাত্রছাত্রীদের চ্যালেঞ্জ নিতে বললেও চাপ না-নেওয়ার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মোদির অষ্টম বার্ষিক ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ সম্প্রচারিত হয় সোমবার ৷ আজ,১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষা ৷ ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে সিবিএসসি দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা ৷ আর আইসিএসই বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১৮ ফেব্রুয়ারি ৷ তার আগে শারীরিক পুষ্টি, চাপ আয়ত্ত করা এবং নেতৃত্বের মতো বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
পরীক্ষা পে চর্চা
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা (Pariksha Pe Charcha) দিতে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের ভীতি কাটাতে, উৎসাহ দিতে প্রতিবছরই পরীক্ষা পে চর্চা করেন প্রধানমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদির পরীক্ষা পে চর্চার PPC 2025) এবার অষ্টম সংস্করণ। পরীক্ষা পে চর্চায় প্রতি বছরের মতোই প্রধানমন্ত্রী উত্তর দিলেন ছাত্রছাত্রীদের নানা প্রশ্নের। এই বছর ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে মোদির সেশন। “পরীক্ষা পে চর্চা”য় রেজিস্টার করিয়েছেন, ৩.৩০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী। থাকছেন ২০.৭১ লক্ষ শিক্ষক । সাড়ে ৫ লক্ষ অভিভাবকও অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন।
ব্যাটারের মতো ফোকাস
পরীক্ষার আগে ফোকাস বাড়াতে ক্রিকেট ম্যাচের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখান ব্যাটারের টোটকা। পরীক্ষার সময়ে হই-হট্টগোলের মাঝে নিজের ফোকাস যাতে না নড়ে তার জন্য মোদি তুলে ধরেন ক্রিকেট মাঠে ব্যাটারের উদাহরণ। তিনি বলেন, সারা স্টেডিয়ামের চিৎকার সব কিছুর মাঝেও ব্যাটারের ফোকাস থাকে শুধু বলের উপর। সে আর কিছু শুনতে পায় না। পরীক্ষাতেও পরীক্ষার্থীদের এরকমই মনযোগ দিতে হবে। মোদির কথায়, চিন্তা-উদ্বেগ ভুলে শুধু পরীক্ষাতেই নয়, জীবনেও হতে হবে ওয়ারিয়র অর্থাৎ যোদ্ধা।
প্রকৃতির মাঝে থাকা ও শরীর চর্চা
পরীক্ষার চাপ সামলে সুস্থ থাকতে পড়ুয়াদের প্রকৃতির মাঝে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতি আমাদের চাপ কমাতে সাহায্য করে। সূর্যোদয়ের পরেই গাছের নীচে দাঁড়িয়ে লম্বা নিঃশ্বাস নিলে অনেকটাই কমে মানসিক চাপ।’ এছাড়া পড়ার ফাঁকে নিয়মিত শরীর চর্চারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সময়ের সঠিক ব্যবহার
প্রধানমন্ত্রী মোদি সবসময় সময়ের সঠিক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেন। সময়কে কাজে লাগানোর কৌশলটা ঠিক করার উপর জোর দিতে বললেন পড়ুয়াদের। পরীক্ষার হলে কীভাবে সময়টাকে ভাগ করে নেবে, কীভাবে নির্দিষ্ট সময়ে নিজেকে উজাড় করে দেবে, তার মহড়া নিতে হবে আগে থেকেই। রণকৌশল ঠিক করে নিতে হবে আগে থেকেই।
পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপে উৎসাহ
পরীক্ষার (Pariksha Pe Charcha) প্রয়োজনীয়তা তো আছেই। তবে প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি জোর দিলেন, সিলেবাসভিত্তিক পরীক্ষা আর জীবনের সত্যিকারের শিক্ষাটা আলাদা। সেটা গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।শিক্ষার্থীদের কেবল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলে হবে না, জ্ঞান অর্জনের উপর মনোনিবেশ করা দরকার, মনে করেন মোদি। পরীক্ষার সিলেবাসের বাইরে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপেও উৎসাহ জোগান প্রধানমন্ত্রী। অভিভাবকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির টিপস, পড়াশোনা তো আছেই, কিন্তু শিশুদের বিশেষ আগ্রহের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেদের পছন্দ খুঁজে বের করার স্বাধীনতা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, শিক্ষার্থীদের কেবল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় এবং তাদের শখের দিকটিও নজর দিতে হবে। কারণ তা শিশুর সামগ্রিক বিকাশে সাহায্য করে।
রিল নয় প্রযুক্তির সাহায্য
পড়ুয়াদের রিল দেখার বিষয়েও সাবধান করেন নরেন্দ্র মোদি। বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় রিল না দেখে পড়ুয়ারা যদি সে সময়ে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নতুন কিছু জানার চেষ্টা করেন তা হলে উপকার হবে। এ ছাড়া নিজেদের লক্ষ্য স্থির রাখতে রোজ একটা কাগজে পড়ুয়াদের উচিত নিজের পরিকল্পনা লিখে রাখা এবং দিন শেষে কতটুকু বাস্তবায়ন হল তা টিক চিহ্ন দিয়ে মার্কিং করা।
বাবা-মা-শিক্ষককে টিপস
পড়ুয়াদের সঙ্গে সঙ্গে এদিন বাবা-মা ও শিক্ষকদের উদ্দেশেও বিশেষ টিপস প্রধানমন্ত্রীর (PM Modi)। পরীক্ষা বলে পড়ুয়াদের বাড়তি চাপ না দেওয়ার পরামর্শ। শুধু পড়ার বইয়ে মুখ গুঁজে থাকলে হবে না। নিজেদের ভালো লাগার কাজও পড়ুয়াদের করতে দেওয়া উচিত। তাতে শারীরিক-মানসিক বিকাশ কোনওটাই আটকাবে না। মোদি ছাত্রছাত্রীদের বলেন ‘জ্ঞান’ এবং পরীক্ষা দু’টি ভিন্ন জিনিস। পরীক্ষাকে জীবনের সর্বস্ব হিসেবে দেখা উচিত নয়। দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের কোনও কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়।
পর্যাপ্ত ঘুম ও সুষম আহার
ভালো করে পরীক্ষা দিতে সুষম খাদ্য খাওয়া ও পর্যাপ্ত ঘুমও দরকার বলে পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর। খাবার খাওয়ার সময়ে যেমন চিবিয়ে ভালো করে খেতে হবে তেমনি আট ঘণ্টা ঘুমিয়ে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম না দিলে শরীর-মন তরতাজা হবে না। ফলে পরীক্ষার সময়ে পড়ুয়াদের মনসংযোগে সমস্যা হতে পারে।