মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এ যেন ক্রাইম থ্রিলার, নিখুঁত ওয়েব সিরিজ! বাংলাদেশি সংসদ (Bangladesh MP Murder) সদস্য ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনওয়ারুল আজিমকে যেভাবে খুন করা হয়েছিল, তা নিয়ে তৈরি হয়ে যাবে চিত্রনাট্য। খুনের মাস্টার মাইন্ড সাংসদের বাল্যবন্ধু শাহিন। ব্যবসায়ে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েই সমস্যার সূত্রপাত। তা থেকেই খুনের ছক। ব্যবহার করা হয়েছে হানিট্র্যাপ, তদন্তে এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সাংসদ ‘খুনের’ ঘটনায় আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি (CID)। ধৃতের নাম জিহাদ হাওলাদার। তাঁর বয়স ২৪ বছর। জেরায় সে সব কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
কীভাবে খুন ও দেহ লোপাট
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, পেশায় কসাই জিহাদ আদতে বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা (Bangladesh MP Murder)। অবৈধ ভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আজিমকে ‘খুনে’র প্রায় দু’মাস আগে অভিযুক্তেরা জিহাদকে মুম্বই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। জেরায় সে জানিয়েছে, অভিযুক্ত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ সব কাজ করেছিলেন। জিহাদ ছাড়াও আরও চার জন বাংলাদেশি নাগরিক এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। আনওয়ারুলকে তাঁরা প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। মৃতের পরিচয় যাতে বোঝা না যায় তাই তাঁরা শরীরের হাড় এবং মাংস আলাদা করে ফেলেন। এর পর হাড় ও মাংস টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে সব কিছু পলিথিন ব্যাগে ভরে ফ্ল্যাটের বাইরে গিয়ে ফেলে দেন।
বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের খবর
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, এই খুনের ঘটনা দুদেশের পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। আনারকে হত্যাকাণ্ডের (Bangladesh MP Murder) সঙ্গে জড়িতরা সবাই বাংলাদেশি। এই খুনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশে সৈয়দ আমানুল্লাহ, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। খুনের কিনারা করতে সিআইডির (CID) একটি দল বৃহস্পতিবারই ঢাকা পৌঁছে গিয়েছে। সেখানেই ধৃতদের জেরা করবেন গোয়েন্দারা। চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন আজিম। তারপরই এই ঘটনা।
শহরে বসেই খুনের পরিকল্পনা
সিআইডির (CID) তদন্তে উঠে এসেছে, আজিম কলকাতায় আসার অনেক আগেই এখানে চলে এসেছিলেন অভিযুক্তেরা। শহরে বসেই তাঁরা খুনের ছক কষেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। দুই অভিযুক্ত কলকাতার সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে ছিলেন গত ২ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত। উল্লেখ্য, ১২ তারিখ কলকাতায় আসেন আজিম। অর্থাৎ, তাঁর আসার অন্তত ১০ দিন আগে কলকাতায় এসে পড়েছিলেন ওই দুই অভিযুক্ত। তাঁরা হোটেল ছাড়েন আজিম আসার এক দিন পরেই। গোয়েন্দাদের অনুমান, এই ১০ দিন ধরে শহরে থেকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন অভিযুক্তেরা।
যুক্ত হানিট্র্যাপ
আনারকে খুন করতে ব্যবহার করা হয় ‘হানি ট্র্যাপ’ বলে জানা গিয়েছে। আনারকে (Bangladesh MP Murder) খুন করার পরিকল্পনা অন্তত একমাস আগে করা হয়েছিল। এই কারণে কলকাতার নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আনারের বাল্যবন্ধু এবং বর্তমানে মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহিন। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কথা উল্লেখ করে তাতে বলা হয়েছে, ‘শিলাস্তি রহমান হলেন আক্তারুজ্জামান শাহিনের বান্ধবী। শাহিন আনারকে কলকাতা নিতে এই মহিলাকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। সব পরিকল্পনা করে শাহিন ১০ মে ঢাকায় ফিরে এলেও শিলাস্তি থেকে যান কলকাতায়। তিনি ১৫ তারিখে বিমানে ঢাকা ফেরেন। জানা গিয়েছে, ১৩ তারিখেই খুন করা হয় আনারকে।
খুনের মাস্টার মাইন্ড শাহিন
আনওয়ারুল আজিমের হত্যাকাণ্ডে (Bangladesh MP Murder) জড়িতদের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। মোট ৬ জন অংশ নিয়েছিল এই হত্যার ষড়যন্ত্রে। মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড ছিল আক্তারুজ্জামান শাহিন নামে এক ব্যক্তি। জানা গিয়েছে, শাহীন, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম সেলিমের ছোট ভাই। নিহত আজিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল সে। কিন্তু, ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে আজিমের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বেধেছিল। তার জেরেই এই খুন। তার আগে, সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে এই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল শাহিন। সম্পর্কে আমানুল্লাহ তার বেয়াই হয়। তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই ভারতে এসেছিলেন বাংলাদেশি সাংসদ।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, কতটা ভয়াবহ হবে? কবে, কোথায় ল্যান্ডফল?
বাংলাদেশি পুলিশ আরও জানিয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে শাহিন ও আমানুল্লাহর। নিউটাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে আজিমকে হত্যা করা হয়েছে, সেটারও মালিক শাহিনই। তবে ফ্ল্যাটটা সে বেনামে কিনেছিল। ওই ফ্ল্যাটটি থেকেই চোরাচালান ও অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ড চালাত শাহিন। হত্যার পর শাহিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে, বাংলাদেশে ফিরেছিল তার বেয়াই সৈয়দ আমানুল্লাহ। তাকে ইতিমধ্য়ে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশি পুলিশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা শাহিন, নিয়মিত বাংলাদেশে আসত। জড়িয়ে পড়েছিল চোরাচালানে। এই অবৈধ ব্যবসার জোরেই বাংলাদেশ ও ভারতে বিপুল সম্পত্তি করেছে সে। তাদের কোটচাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি এখন বিশাল বাগানবাড়িতে পরিণত হয়েছে। কোটচাঁদপুরে শাহিনই ছিল শেষ কথা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours