মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বয়স মাত্র ২৭ বছর। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। বি-টেক পাশ করে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কোনও মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে সহজেই কাজ করতে পারতেন দার্জিলিঙের (Darjeeling) ছেলে ব্রিজেশ থাপা (Brijesh Thapa)। কিন্তু ছোট থেকেই সেনার পোশাক তাঁকে টানত। বাবা ভারতীয় সেনার কর্নেল। ছোট বেলা থেকেই 'জয় হিন্দ' ছিল ব্রিজেশের মন্ত্র। সেই মন্ত্র জপ করতে করতেই সোমবার সন্ধ্যায় কাশ্মীরের (Jammu-Kashmir) ডোডা জেলায় (Doda Encounter) জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করছিলেন ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ। হঠাতই গুলির পর গুলি, ঝাঁঝরা হয়ে গেল শরীর। শহিদ হয়ে গেলেন বাংলার ছেলে। শহিদের রক্তে চোখে জল পড়তে নেই তাই মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়েও বাড়ির বাইরে থমথমে, উদাস ব্রিজেশের বাবা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ভুবনেশ থাপা। বললেন, ‘‘কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আক্ষেপ নেই। আমার সন্তান দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছে।”
ব্রিজেশের স্মৃতিচারণায় বাবা ভুবনেশ
ব্রিজেশের জন্ম দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) লেবংয়ে। সেখানেই প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। কিন্তু ভুবনেশকে কর্মসূত্রে যেতে হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাই তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যেতে হয়েছে পরিবারকেও। ২০১৪ সালে সেনা থেকে অবসর নেন কর্নেল ভুবনেশ। তার পর তিনি দার্জিলিংয়ের লেবংয়েই এক্স সার্ভিসম্যান হেলথ্ সার্ভিস স্কিমে কাজ করেন। বাবা-মা ছাড়াও ব্রিজেশের এক দিদিও রয়েছেন। বর্তমানে সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করতে অস্ট্রেলিয়াতে রয়েছেন নিকিতা থাপা। স্কুল জীবনের পড়াশোনা শেষ করে মুম্বইয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ব্রিজেশ। সেখান থেকে বি-টেক শেষ করে কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন তিনি। ২০১৮ সালে ব্রিজেশ ডিফেন্স সার্ভিসের শর্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় পাশ করেন ও ২০১৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তারপর ১০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের মোতায়েন ছিলেন। এরপর এক্সট্রা রেজিমেন্টাল ডিউটির জন্য ভারতীয় সেনার বিশেষ বিভাগ ১৪৫ আর্মি এয়ার ডিফেন্সের অধীন জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা সেনা ছাউনিতে বদলি হন। সেখানে ব্রিজেশ থাপা এ-কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে ফের জঙ্গি হামলা! নিহত মেজর-সহ চার জওয়ান, ডোডায় চলছে তল্লাশি অভিযান
ব্রিজেশকে শ্রদ্ধা
সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) লেবংয়ের বড়াগিঙ্গের বাড়িতে ব্রিজেশের শহিদ (Doda Encounter) হওয়ার খবর এসে পৌঁছেছে। বুধবার ব্রিজেশের দেহ বিশেষ বিমানে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হবে। এর পর তাঁকে বাগডোগরা সেনা ছাউনিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা জানানো হবে। সেখান থেকে তাঁর দেহ সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হবে লেবংয়ে তাঁর বাড়িতে। সেখানে রয়েছেন ব্রিজেশের মা নীলিমা। দেশ মা-য়ের জন্য ব্রিজেশ বলিদান দিলেও মঙ্গলবার থেকে সারা জীবন পুত্র হারানোর যন্ত্রণা নিয়েই যে বাঁচতে হবে নীলিমাকে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours