মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রেও আত্মনির্ভরতার পথে ভারত (India’s Mineral Independence)। আর টাংস্টেনের জন্য চিনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না ভারতকে। এই খনিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি বিরলতম প্রাকৃতিক সম্পদগুলির মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি ভারতে প্রথম টাংস্টেন ও কোবাল্ট ব্লক নিলাম করা হল। এই নিলামে ভেদান্ত গ্রুপের হিন্দুস্তান জিংক লিমিটেড দুটি টাংস্টেন ব্লক জিতে নেয়। ওই দুটি ব্লকের একটি তামিলনাড়ুর নয়াক্কারপট্টি এবং অন্যটি অন্ধ্রপ্রদেশের বালেপাল্যাম এলাকায়। এর পাশাপাশি, ভেদান্ত একটি কোবাল্ট ব্লকও পেয়েছে। এটি কর্ণাটকের শিমোগায় রয়েছে। এটি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ অনুসন্ধানে একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
সফল নিলাম অনুষ্ঠান
এই নিলামটি মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ১৯৫৭-এর আওতায় অনুষ্ঠিত হয়। তিনটি খনিজ ব্লকেই কম্পোজিট লাইসেন্স (CL) প্রদান করা হয়েছে। এই লাইসেন্সগুলির আওতায়, সরকার প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পন্ন করেছে, কিন্তু খনিজ কোম্পানিগুলিকে আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হবে। একবার খনিজের মজুত নিশ্চিত হলে, কোম্পানিগুলি রাজ্য সরকারের কাছে খনি খননের জন্য আবেদন করতে পারবে। খনন কার্য শুরুর আগে সমস্ত প্রয়োজনীয় অনুমতি, লাইসেন্স এবং "নো অবজেকশন" সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
Successful Auction of Strategic Mineral Blocks in Tranche IV: A Major Milestone for AtmaNirbhar Bharat in Mineral Sector https://t.co/SoC23oBIlH pic.twitter.com/F1T0vKXFE1
— Ministry of Mines (@MinesMinIndia) November 7, 2024
টাংস্টেন-এর গুরুত্ব
উল্লেখ্য, যেসব খনিজ — যেমন কপার, লিথিয়াম, নিকেল এবং কোবাল্ট — বিশ্বজুড়ে ক্লিন এনার্জি প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাদের মধ্যে টাংস্টেন অন্যতম। টাংস্টেন, বা 'ওলফ্রাম', উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারার কারণে বিভিন্ন শিল্পে এর ব্যবহার করা হয়। এর ফলে এটি অত্যন্ত মূল্যবান। এটি সেমিকন্ডাক্টর, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, মহাকাশ ও মেডিক্যাল ডিভাইসগুলিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
চিনের প্রাধান্য হ্রাস
বর্তমানে, চিন বিশ্বব্যাপী টাংস্টেন উৎপাদনে ৮৫ শতাংশেরও বেশি অংশীদার। এরপর রয়েছে রাশিয়া। চিন ও রাশিয়া এক সঙ্গে বিশ্বের ৯০ শতাংশ টাংস্টেন সরবরাহ করে। ভারত এখনও টাংস্টেন সম্পূর্ণভাবে আমদানি করে। এখানে এখনও কোনও টাংস্টেন খনিজের উৎস তৈরি করা যায়নি। এই মুহূর্তে ভারতের কোথাও টাংস্টেন উত্তোলিত না হওয়ায়, ভারতকে তার চাহিদার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এই আমদানিকারক দেশগুলিতে সব চেয়ে বেশী আমদানি হয় চিন থেকে। ভারত তার মোট চাহিদার ৫৬ শতাংশ টাংস্টেন চিন থেকে আমদানি করে। এবার দেশে টাংস্টেন মিললে চিনের উপর আর নির্ভর করতে হবে না। বাঁচবে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রাও। পাশাপাশি চিনের অর্থনীতিকেও ধাক্কা দেওয়া যাবে। এই কারণে, ভারতের প্রথম টাংস্টেন ব্লক নিলামে বিক্রির সাফল্য দেশের খনিজ সরবরাহ (India’s Mineral Independence) চেইনে সম্ভাব্য ঝুঁকি কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কোবাল্ট কেন প্রয়োজন
কোবাল্ট একটি অত্যন্ত মূল্যবান রৌপ্যধাতু, যা বিশেষভাবে বৈদ্যুতিন যানবাহনের (ইভি) ব্যাটারির জন্য অপরিহার্য। ২০৩৫ সালের মধ্যে কোবাল্টের চাহিদা তিনগুণ বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা ইভি শিল্পের বৃদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হবে। বর্তমানে, কোবাল্টের প্রধান উৎস হল কঙ্গো প্রজাতান্ত্রিক গণতন্ত্র (ডিআরসি), যা বিশ্বের কোবাল্ট সরবরাহের ৬৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কঙ্গোর রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শিশু শ্রমের সমস্যা কোবাল্ট সরবরাহের উপর সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী কোবাল্ট পরিশোধন প্রক্রিয়া প্রায় সম্পূর্ণরূপে চিনের হাতে, যা অন্য দেশগুলোর জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
➤ @MinesMinIndia successfully concluded the auction of 8 critical mineral blocks, launched under Tranche IV of the Auction of Critical and Strategic Mineral Blocks
— PIB India (@PIB_India) November 7, 2024
➤ This achievement underscores the government’s commitment to bolstering mineral security and ensuring the…
ভারতে কোবাল্টের সন্ধান
ভারতে (India’s Mineral Independence) প্রচুর পরিমাণে কোবাল্ট মজুত রয়েছে। বিশেষ করে ওডিশা, ঝাড়খণ্ড ও নাগাল্যান্ডে কোবাল্টের ভাণ্ডার রয়েছে। তবে, বর্তমানে ভারত সম্পূর্ণভাবে কোবাল্টের চাহিদা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। শিমোগার কোবাল্ট ব্লক নিলামের মাধ্যমে ভারতের কোবাল্টের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এছাড়া, ভারত সমুদ্রের তলদেশে কোবাল্ট অনুসন্ধানেও মনোযোগ দিয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে, ভারত আন্তর্জাতিক সি-বেড অথরিটির (ISA) কাছে আফানাসি নিকিতিন সিমাউন্টের কোবাল্ট অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে, যা মলদ্বীপের পূর্বে ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
আরও পড়ুন: রাতভর অভিযান কাশ্মীরে সাফল্য সেনার, নিহত ২ জঙ্গি, উদ্ধার বিপুল অস্ত্র
ভবিষ্যতে লাভের পথে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত এখন অমৃত যুগের দিকে এগোচ্ছে। খনিজ স্বাধীকারের পথে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে দেশের সম্ভাব্য কৌশলগত খনিজ সম্পদের মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম অনুসন্ধান করা গিয়েছে। কেন্দ্র নিরন্তর প্রয়াস জারি রেখেছে। আগামী দিনে ভারত (India’s Mineral Independence) এই খনিজগুলি খুঁজে বের করার এবং এর জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও চুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে। টাংস্টেন ও কোবাল্ট ব্লকের মতো নিলামগুলি এক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ। ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির সঙ্গে সাপ্লাই চেন তৈরি করাই এখন সরকারের প্রথম লক্ষ্য। দেশে গবেষণার মধ্য দিয়ে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সচেষ্ট মোদি সরকার।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours