৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
সংকীর্তনানন্দে ভক্তসঙ্গে
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তুই বাপ-মাকে খুব ভক্তি করবি।—কিন্তু ঈশ্বরের পথে বাধা দিলে মানবিনি। খুব রোখ আনবি—শালার বাপ!
ছোট নরেন—কে জানে, আমার কিছু ভয় হয় না।
গিরিশ বাড়ি হইতে আবার আসিয়া উপস্থিত। ঠাকুর ত্রৈলোক্যের সহিত আলাপ করিয়া দিতেছেন; আর বলিতেছেন, ‘একটু আলাপ তোমরা কর।’ একটু আলাপের পর ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন, ‘সেই গানটি আর একবার,’—ত্রৈলোক্য গাইতেছেন (Kathamrita):
ঝিঁঝিট খাম্বাজ—ঠুংরী
জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর।
কিবা সুন্দর মুরতিমোহন আঁখিরঞ্জন কনকবরণ
ঝিঁঝিট খাম্বাজ—ঠুংরী
জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর।
কিবা সুন্দর মুরতিমোহন আঁখিরঞ্জন কনকবরণ,
কিবা মৃণালনিন্দিত, আজানুলম্বিত, প্রেম প্রসারিত, কোমল যুগল কর
কিবা রুচির বদন-কমল, প্রেমরসে ঢল ঢল,
চিকুর কুন্তল, চারু গণ্ডস্থল, হরিপ্রেমে বিহ্বল, অপরূপ মনোহর।
মহাভাবে মণ্ডিত হরি রসে রঞ্জিত, আনন্দে পুলকিত অঙ্গ,
প্রমত্ত মাতঙ্গ, সোনার গৌরাঙ্গ,
আবেশে বিভোর অঙ্গ, অনুরাগে গরগর।
হরিগুণগায়ক, প্রেমরস নায়ক,
সাধু-হৃদিরঞ্জক, আলোকসামান্য, ভক্তিসিন্ধু শ্রীচৈতন্য,
আহা! ‘ভাই’ বলি চণ্ডালে, প্রেমভরে লন কোলে,
নাচেন দুবাহু তুলে, হরি বোল হরি বলে,
অবিরল ঝরে জলে নয়নে নিরন্তর!
‘কোথা হরি প্রাণধন’ — বলে করে রোদন,
মহাস্বেদ কম্পন, হুঙ্কার গর্জন,
পুলকে রোমাঞ্চিত, শরীর কদম্বিত,
ধুলায় বিলুণ্ঠিত সুন্দর কলেবর।
হরি-লীলা-রস-নিকেতন, ভক্তিরস-প্রস্রবণ;
দীনজনবান্ধব, বঙ্গের গৌরব, ধন্য ধন্য শ্রীচৈতন্য প্রেম শশধর।
‘গৌর হাসে কাঁদে নাচে গায়’—এই কথা শুনিয়া ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইয়া দাঁড়াইয়া পড়িলেন,-একেবারে বাহ্যশূন্য!
কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া—ত্রৈলোক্যকে অনুনয় বিনয় করিয়া বলিতেছেন, “একবার সেই গানটি!—কি দেখিলাম রে।”
ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:
কি দেখিলাম রে, কেশব ভারতীর কুটিরে,
অপরূপ জ্যোতি; গৌরাঙ্গ মূরতি, দুনয়নে প্রেম বহে শত ধারে।
গান সমাপ্ত হইল। সন্ধ্যা হয়। ঠাকুর এখনও ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (রামের প্রতি)—বাজনা নাই! ভাল বাজনা থাকলে গান খুব জমে। (সহাস্যে) বলরামের আয়োজন কি জান,—বামুনের গোড্ডি (গরুটি) খাবে কম, দুধ দেবে হুড়হুড় করে! (সকলের হাস্য) বলরামের ভাব,—আপনারা গাও আপনারা বাজাও! (সকলের হাস্য)
Leave a Reply