মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আগামী বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার শিবরাত্রি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিনটা অতি পবিত্র একটা দিন। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই দিনেই শিব ও পার্বতী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ভক্তরা তাই মনে করেন, এই দিন যদি শিব-পার্বতীর পুজো করা হয় তা হলে সংসারে শান্তি বজায় থাকে। এ ছাড়াও এই দিন শিবের পুজো করলে মোক্ষলাভ হয় বলেও কথিত রয়েছে, এমনটাই বিশ্বাস। প্রসঙ্গত, শিবরাত্রির (Maha Shivratri 2025) পুজো মহিলা ও পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই করতে পারেন বলে শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। শিবরাত্রির (Shivratri) পুজোর বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে যা অবশ্যই সঠিক ভাবে পালন করতে হবে।
মহা শিবরাত্রির তাৎপর্য (Maha Shivratri 2025)
সাধারণভাবে প্রতি মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি পালিত হয়, কিন্তু ফাল্গুন মাসের শিবরাত্রি, মহা শিবরাত্রি (Maha Shivratri 2025) নামে প্রসিদ্ধ। হিন্দু ধর্ম অনুসারে, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবলিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন মহাদেব। এই ব্রতে ভক্তরা শিবলিঙ্গে দুধ নিবেদন করেন এবং মোক্ষ প্রার্থনা করে। সারা রাত ধরে চলে ভক্তদের প্রার্থনা। শিবলিঙ্গকে স্নান করানোর জন্য মূলত গঙ্গাজল বা গঙ্গাজল মেশানো জল ব্যবহার করা হয়। শিবলিঙ্গের মাথায় অর্পণ করা হয় তিনটি পাতাযুক্ত যৌগিক বেলপাতা।
আগের দিন থেকেই খান নিরামিষ (Maha Shivratri 2025)
শিবরাত্রির আগের দিন থেকেই নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে বলছেন শাস্ত্রবিদরা। অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই কোনও প্রকার আমিষ আহার গ্রহণ করা যাবে না। তার পর শিবরাত্রির দিন থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত উপবাস করতে বলছেন শাস্ত্রবিদরা। যাঁরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এই ব্রত পালন করেন তাঁরা শিবরাত্রির রাত না ঘুমিয়ে কাটান। শাস্ত্রবিদরা বলছেন, চেষ্টা করুন শিবরাত্রির রাতে একেবারে না ঘুমিয়ে জেগে কাটাতে। পরের দিন পুজো করে প্রসাদ মুখে দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করুন।
চার প্রহরের পুজো
প্রসঙ্গত, শিবরাত্রির পবিত্র দিনে রাত জেগে চার প্রহরে শিবের পুজো করতে হয়। প্রথম প্রহরে জল দিয়ে পুজো হয়, দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ঘি এবং চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে শিবের অভিষেক করার রীতি দেখা যায়। শিবরাত্রির পুণ্যতিথিতে পুজো করার সময় শিবলিঙ্গে কাঁচা দুধ এবং গঙ্গাজল অবশ্যই অর্পণ করতে বলছেন শাস্ত্রবিদরা। এই পুজোয় অপরাজিতা, ধুতরো ফুল এবং বেলপাতা ব্যবহার করা উচিত। পুজোর শেষে শিবের নাম ১০৮বার জপ করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পরের দিন পর্যন্ত যদি উপবাস না রাখা যায়, অথবা সারা রাত জেগে কাটাতে না পারলে শিবরাত্রির দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস থেকে পুজো করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর প্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করা যেতে পারে। তারপর ফল ও দুধ খেতে পারেন।
মহা শিবরাত্রির পুজোর নিয়ম
শিবরাত্রিতে (Maha Shivratri 2025) ব্রহ্ম মুহূর্তে উঠে শিব ও পার্বতীকে প্রণাম করে পুজোর সংকল্প গ্রহণ করুন। এর পর গঙ্গায় স্নান করুন। গঙ্গা দূরে থাকলে গঙ্গাজল মেশানো জলে স্নান করুন। নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে সূর্যকে অঞ্জলি দিন। মন্দিরে গিয়ে দুধ, গঙ্গাজল দিয়ে শিবের অভিষেক করুন। এ ছাড়াও বাড়িতে একটি চৌকিতে লাল কাপড় বিছিয়ে দিন। তার উপর রাখুন শিব মূর্তি। দুধ-গঙ্গাজল দিয়ে সেই প্রতিমার অভিষেক করুন। এর পর পঞ্চোপচার নিয়মে শিব ও পার্বতীর অভিষেক করুন।
কেন শিবলিঙ্গের ওপর জল ঢালা হয় জানেন?
পুরাণ অনুসারে, দেবতা এবং অসুররা যখন অমৃত পাওয়ার জন্য সাগর মন্থন শুরু করেন, তখন সেখান থেকে উঠেছিল বিষ বা হলাহল। মহাবিশ্বের সমস্ত সৃষ্টিকে ধ্বংস করে দিতে পারত সেই হলাহল। দেবতা এবং দানবরা মিলে ভগবান শিবকে বিষ পান করার জন্য অনুরোধ করেন। মহাবিশ্বকে রক্ষা করতে মহাদেব দেবতা ও অসুরদের অনুরোধ মেনে নেন। এবং সেই বিষ পান করেন। এই বিষ মহাদেবের শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র পীড়া হতে পারতো। তাই, ভোলানাথকে যন্ত্রণা থেকে বাঁচানোর জন্য দেবী পার্বতী তাঁর গলায় হাত রাখেন। বিষ শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা রোধ হয়ে যায়। শরীর জুড়ে হলাহল ছড়িয়ে না পড়লেও ভগবান শিবের গলায় থাকার কারণে তা তাঁর গলাকে নীল করে দিয়েছিল। একারণেই তাঁকে নীলকণ্ঠ বলা হয়ে থাকে। বিষের কারণে প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মহাদেবের শরীর। তাই ভগবান বিষ্ণু সেই তাপ কমানোর জন্য দেবতাদের (Maha Shivratri 2025) নির্দেশ দেন শিবের মাথায় জল ঢালতে। ভক্তদের এই বিশ্বাস থেকেই আজও শিবের মাথায় জল ঢালার রীতি দেখা যায়।
Leave a Reply