PM Modi: প্রধানমন্ত্রী মোদির হাত ধরে ‘স্বপ্ন সফল’ কাশ্মীরের, খুলে গেল জেড-মোড় সুড়ঙ্গ

parliament_(60)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফের প্রমাণ হল যে, মোদি (PM Modi) হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে খুলে গেল শ্রীনগর-লাদাখের সংযোগ পথ জেড-মোড় টানেল (Z Morh Tunnel in Sonamarg)। এই টানেলকে ঘিরে উপত্যকায় উৎসবের আমেজ। সাধারণের সঙ্গে সেই উৎসবে পা মিলিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। সোনমার্গের এই সুড়ঙ্গের হাত ধরে কাশ্মীরে বদলের হাওয়া। এর ফলে সব ঋতুতেই কাশ্মীর ও লাদাখের যোগাযোগ খুলে যাবে। বাড়বে পর্যটন। উন্নত হবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। খুব সহজেই বাধা বিপত্তিকে এড়িয়ে লাদাখের একাধিক সেনাঘাঁটিতে প্রতিরক্ষা সামগ্রী-সহ সেনাদের জন্য খাবার ও ওষুধপত্র পৌঁছানো সহজ হয়ে যাবে।

টানেল পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

সোমবার সোনমার্গে জেড মোড় টানেলের (Z Morh Tunnel in Sonamarg) উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করি এবং জিতেন্দ্র সিং, জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং অন্যান্য আধিকারিকরা৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি টানেলের পূর্ব পোর্টালে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী টানেল পরিদর্শন করেন। রুটম্যাপ এবং নির্মাণকাজ নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে চান। নির্মাণকারী সংস্থার আধিকারিক এবং নির্মাণকাজে যুক্ত থাকা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। যাঁরা চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও টানেল তৈরির কাজ করে গিয়েছেন। আজ টানেল উদ্বোধনের পরে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

সারা বছর সোনমার্গ

জোজিলা টানেল প্রকল্পের প্রথম ধাপ হিসেবে জেড-মোর টানেলটি নির্মিত হচ্ছে। ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলটি শ্রীনগর ও সোনমার্গের মধ্যে সারা বছর যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করবে। শীতকালে প্রবল তুষারপাতের জন্য বাকি উপত্যকার সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সোনমার্গ। সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে এই টানেলের মাধ্যমে। জেড-মোড় টানেলের উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে সোনমার্গ সারা বছর পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সোনমার্গ এখন একটি দুর্দান্ত স্কি রিসর্টে পরিণত হতে চলেছে। স্থানীয় লোকজনকে শীত উপভোগ করতে আর বাইরে কোথাও যেতে হবে না। 

কমবে শ্রীনগর থেকে কার্গিল-লেহ ভ্রমণের সময়

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৬৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই সুড়ঙ্গ পথ তৈরিতে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্র। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে খুলে যাবে কাশ্মীরের জোজিলা পাসও। যার মাধ্যমে লাদাখের সঙ্গে শ্রীনগরের পথের দূরত্ব ৪৯ কিলোমিটার থেকে কমে নেমে আসবে ৪৩ কিলোমিটারে। এর ফলে শ্রীনগর থেকে কার্গিল-লেহ ভ্রমণের সময়ও আগের তুলনায় অনেকটা কমে যাবে। সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে এই টানেলের উদ্বোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

উপত্যকায় উন্নয়নযজ্ঞ

উপত্যকায় উন্নয়নযজ্ঞ দেখে আবেগে ভাসছেন সেখানকার বাসিন্দারাও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরেই জম্মু-কাশ্মীরের স্বপ্ন সফল হয়েছে, বলে দাবি করেন এক বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘আজ বিরাট খুশির দিন। এই সুড়ঙ্গের হাত ধরে ভোল বদলে যাবে কাশ্মীরের। লাদাখ যাওয়ার রাস্তা আরও সহজ হবে। বাড়তি শক্তি পাবে প্রতিরক্ষাও।’ ইতিমধ্যে এই সুড়ঙ্গের উদ্বোধন ঘিরে বদলে গিয়েছে কাশ্মীরের রাজনৈতিক আবহাওয়াও। এদিন উপত্যকায় সুড়ঙ্গ উদ্বোধন করতে আসেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। আর তার আগেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্ব সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে আসেন কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। দিল্লির সঙ্গে যে সহযোগিতার সমীকরণেই নেমেছেন তিনি, এমনটাই দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

কবে খুলবে টানেল

জানা গিয়েছে, টেস্ট রান এবং প্রযুক্তিগত সিস্টেম ইনস্টলেশনের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই এই টানেল সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। জেড-মোড় টানেল জোজিলা টানেলের জন্য এক বড় পদক্ষেপ। এই টানেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নিউ অস্ট্রিয়ান টানেলিং মেথড।  ২০১৫ সালে শুরু হয়েছিল টানেলের নির্মাণকাজ। গান্দেরবল জেলায় নির্মিত এই টানেল কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১২ সালে সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও) এই সুড়ঙ্গের কাজ শুরু করে। প্রকল্পটি টানেলওয়ে লিমিটেডকে দেওয়া হয়েছিল। পরে এটি জাতীয় মহাসড়ক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেড কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়। এটি জরুরি অবস্থার জন্য একটি সমান্তরাল ৭.৫-মিটার-প্রশস্ত এস্কেপ প্যাসেজ দিয়ে সজ্জিত।

আরও পড়ুন: পুজো দিলেন কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে, মহাকুম্ভে স্টিভ জোবসের স্ত্রী লরেন এখন কমলা

পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

যেখানে জেড-মোড় টানেল তৈরি করা হয়েছে, সেখানে শীতকালে প্রবল তুষারপাত হয়ে থাকে। আশঙ্কা থাকে তুষারঝড়েরও। ফলে বছরের একটা বড় সময় সোনমার্গ যাওয়ার রাস্তা বন্ধ থাকত। এখন টানেল তৈরি হয়ে যাওয়ার ফলে যে কোনও আবহাওয়া, প্রবল তুষারপাত সত্ত্বেও সোনমার্গে পৌঁছানো যাবে। তাতে সবদিক থেকে লাভ হবে। সোনমার্গের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল পর্যটন। আর নয়া টানেলের ফলে সারা বছর সোনমার্গে আসতে পারবেন পর্যটকরা। স্থানীয় মানুষের আয় আরও বাড়বে। টানেল উদ্বোধনের দিন অনেক আশা নিয়ে শ্রীনগরের এক ট্যুর অপারেটর বলেন, “সোনমার্গ আমাদের পর্যটন প্যাকেজের অন্যতম আকর্ষণ। জেড-মোড় টানেল চালু হলে শীতকালেও পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাব। কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে এটা বিপ্লব আনবে।”

প্রতিরক্ষা-সামরিক দিক থেকে গুরুত্ব

মূলত সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নতির লক্ষ্যে এই টানেল তৈরি হয়েছে। এর ফলে লাদাখের সঙ্গে সংযোগ আরও দৃঢ় হবে। এই টানেলের ফলে শীতকালেও সহজেই পৌঁছানো যাবে কার্গিল, লেহ্-এর মতো সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। ২০২৮ সালের মধ্যেই জোজিলা টানেলের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর তারপরই কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে লাদাখের দ্রাসে অনায়াসে পৌঁছানো যাবে। পাকিস্তান এবং চিনের সঙ্গে সীমান্ত আছে লাদাখের। সেখানে বছরভর সামরিক সরঞ্জাম, দৈনন্দিন জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই দুটি টানেলকে ব্যবহার করা হবে। সহজেই লাদাখে পৌঁছে যেতে পারবেন জওয়ানরা। ওই অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য যে আকাশপথের উপরে অনেকটা নির্ভর করতে হত, সেটা কমে যাবে।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share