Ramakrishna 255: “তোমার সমস্ত—দেহ, মন, গৃহ, পরিবার, জীব, জগৎ—এ-সব তোমার, আমার কিছু নয়—এইটির নাম জ্ঞান”

Ramakrishna_

শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ও ভক্তগৃহে

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ২১শে জুলাই

৺খেলাৎ ঘোষের বাটীতে শুভাগমন—বৈষ্ণবকে শিক্ষা

সকলে চুপ করিয়া আছেন।

বৈষ্ণবভক্ত—মহাশয়, ঈশ্বরকে ভাববই বা কেন?

বৈষ্ণবকে শিক্ষা—জীবন্মুক্ত কে? উত্তম ভক্ত কে? ঈশ্বরদর্শনের লক্ষণ 

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—এ-বোধ যদি থাকে, তাহলে তো জীবন্মুক্ত। কিন্তু সকলের এটি বিশ্বাস নাই, কেবল মুখে বলে। ঈশ্বর আছেন, তাঁর ইচ্ছায় এ-সমস্ত হচ্ছে, বিষয়ীরা শুনে রাখে—বিশ্বাস করে না।

“বিষয়ীর (Kathamrita) ঈশ্বর কেমন জান? খুড়ী-জেঠীর কোঁদল শুনে ছেলেরা যেমন যেমন ঝগড়া করতে করতে বলে, আমার ঈশ্বর আছেন।

“সব্বাই কি তাঁকে ধরতে পারে? তিনি ভাল লোক করেছেন, মন্দ লোক করেছেন, ভক্ত করেছেন, অভক্ত করেছেন—বিশ্বাসী করেছেন, অবিশ্বাসী করেছেন। তাঁর লীলার ভিতর সব বিচিত্রতা, তাঁর শক্তি কোনখানে বেশি প্রকাশ, কোনখানে কম প্রকাশ। সূর্যের আলো মৃত্তিকার চেয়ে জলে বেশি প্রকাশ, আবার জল অপেক্ষা দর্পণে বেশি প্রকাশ।

“আবার ভক্তদের ভিতর থাক থাক আছে, উত্তম ভক্ত, মধ্যম ভক্ত, অধম ভক্ত। গীতাতে এ-সব আছে।”

বৈষ্ণবভক্ত—আজ্ঞা হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—অধম ভক্ত বলে, ঈশ্বর আছেন—ওই আকাশের ভিতর অনেক দূরে। মধ্যম ভক্ত বলে, ঈশ্বর সর্বভূতে চৈতন্যরূপে—প্রাণরূপে আছেন। উত্তম ভক্ত বলে, ঈশ্বরই নিজে সব হয়েছেন, যা কিছু দেখি ঈশ্বরের (Kathamrita) এক-একটি রূপ। তিনিই মায়া, জীব, জগৎ এই সব হয়েছেন—তিনি ছাড়া আর কিছু নাই।

বৈষ্ণবভক্ত—এরূপ অবস্থা কি কারু হয়?

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তাঁকে দর্শন না করলে এরূপ অবস্থা হয় না, কিন্তু দর্শন করেছে কিনা তার লক্ষণ আছে। কখনও সে উন্মাদবৎ—হাঁসে কাঁদে নাচে গায়। কখনও বা বালকবৎ—পাঁচ বৎসরের বালকের অবস্থা। সরল, উদার, অহংকার নাই, কোন জিনিসে আসক্তি নাই, কোন গুণের বশ নয়, সদা আনন্দময়। কখনও পিশাচবৎ— শুচি-অশুচি ভেদবুদ্ধি থাকে না, আচার-অনাচার এক হয়ে যায়! কখনও বা জড়বৎ, কি জেন দেখেছে! তাই কোনরূপ কর্ম করতে পারে না—কোনরূপ চেষ্টা করতে পারে না।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কি নিজের অবস্থা সমস্ত ইঙ্গিত করিতেছেন?

শ্রীরামকৃষ্ণ (বৈষ্ণবভক্তের প্রতি)—“তুমি আর তোমার”—এইটি জ্ঞান (Kathamrita)। “আমি আর আমার”—এইটি অজ্ঞান।

“হে ঈশ্বর, তুমি কর্তা, আর আমি অকর্তা—এইটি জ্ঞান। হে ইশ্বর, তোমার সমস্ত—দেহ, মন, গৃহ, পরিবার, জীব, জগৎ—এ-সব তোমার, আমার কিছু নয়—এইটির নাম জ্ঞান।

“যে অজ্ঞান সেই বলে, ঈশ্বর ‘সেথায় সেথায়’,—অনেক দূরে। যে জ্ঞানী, সে জানে ঈশ্বর ‘হেথায় হেথায়’—অতি নিকটে, হৃদয়মধ্যে অন্তর্যামীরূপে, আবার নিজে এক-একটি রূপ ধরে রয়েছেন।”

আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share