দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
গৃহস্থাশ্রমকথা-প্রসঙ্গে—নির্লিপ্ত সংসারী
“খুব ভক্তি (Ramakrishna)! আমি বরাহনগরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, তা আমায় ছাতা ধরে! ওর বাড়িতে লয়ে গিয়ে কত যত্ন! বাতাস করে—পা টিপে দেয়—আর নানা তরকারি করে খাওয়ায়। আমি একদিন ওর বাড়িতে পাইখানায় বেহুঁশ হয়ে গেছি। ও তো আচারী, পাইখানার ভিতর আমার কাছে গিয়ে পা ফাঁক করে বসিয়ে দেয়। অত আচারী, ঘৃণা করলে না।
“কাপ্তেনের অনেক খরচা। কাশীতে ভায়েরা থাকে, তাদের দিতে হয়। মাগ আগে কৃপণ ছিল, এখন এত বিব্রত হয়েছে যে সবরকম খরচ করতে পারে না।
“কাপ্তেনের পরিবার আমায় বললে যে, সংসার ওঁর (Ramakrishna) ভাল লাগে না। তাই মাঝে বলেছিল, সংসার ছেড়ে দেব। মাঝে মাঝে ছেড়ে দেব, ছেড়ে দেব করত।
“ওদের বংশই ভক্ত। বাপ লড়ায়ে যেত। শুনেছি লড়ায়ের সময় এক-হাতে শিবপূজা, একহাতে তরবার খোলা, যুদ্ধ করত।
“লোকটা ভারী আচারী। আমি কেশব সেনের কাছে যেতুম, তাই এখানে একমাস আসে নাই। বলে, কেশব সেন ভ্রষ্টাচার—ইংরাজের সঙ্গে খায়, ভিন্ন জাতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, জাত নাই। আমি (Ramakrishna) বললুম, আমার সে সবের দরকার কি? কেশব হরিনাম করে, দেখতে যাই, ঈশ্বরীয় কথা শুনতে যাই—আমি কুলটি খাই, কাঁটায় আমার কি কাজ? তবুও আমায় ছাড়ে না; বলে তুমি কেশব সেনের ওখানে কেন যাও? তখন আমি বললুম, একটু বিরক্ত হয়ে, আমি তো টাকার জন্য যাই না—আমি হরিনাম শুনতে যাই—আর তুমি লাট সাহেবের বাড়িতে যাও কেমন করে? তারা ম্লেচ্ছ, তাদের সঙ্গে থাকো কেমন করে? এই সব বলার পর তবে একটু থামে।
“কিন্তু খুব ভক্তি। যখন পূজা করে, কর্পূরের আরতি করে। আর পূজা করতে করতে আসনে স্তব করে। তখন আর-একটি মানুষ। যেন তন্ময় হয়ে যায়।”
Leave a Reply