দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ
সপ্তম পরিচ্ছেদ
১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
মাতৃসেবা ও শ্রীরামকৃষ্ণ—হাজরা মহাশয়
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ওর মা রামলালের কাছে অনেক দুঃখ করেছে; তাই বললুম, তিনদিনের জন্য না হয় যাও, একবার দেখা দিয়ে এসো; মাকে কষ্ট দিয়ে কি ইশ্বরসাধনা হয়? আমি বৃন্দাবনে রয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মাকে মনে পড়ল; ভাবলুম—মা যে কাঁদবে; তখন আবার সেজোবাবুর সঙ্গে এখানে চলে এলুম।
“আর সংসারে যেতে জ্ঞানীর ভয় কি (Kathamrita)?”
মহিমাচরণ (সহাস্যে)—মহাশয়! জ্ঞান হলে তো।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—হাজরার সবই হয়েছে, একটু সংসারে মন আছে—ছেলেরা রয়েছে, কিছু টাকা ধার রয়েছে। মামীর সব অসুখ সেরে গেছে, একটু কসুর আছে! (মহিমাচরণ প্রভৃতি সকলের হাস্য)
মহিমা—কোথায় জ্ঞান হয়েছে, মহাশয় (Ramakrishna)?
শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিয়া)—না— গো তুমি জান না। সব্বাই বলে, হাজরা একটি লোক, রাসমণির ঠাকুরবাড়িতে আছে। হাজরারই নাম করে, এখানকার নাম কেউ করে? (সকলের হাস্য)
হাজরা—আপনি নিরুপম—আপনার উপমা নাই, তাই কেউ আপনাকে বুঝতে পারে না।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তবেই নিরুপমের সঙ্গে কোন কাজ হয় না; তা এখানকার নাম কেউ করবে কেন?
মহিমা—মহাশয়! ও কি জানে? আপনি যেরূপ উপদেশ দেবেন ও তাই করবে।
শ্রীরামকৃষ্ণ—কেন, তুমি ওকে বরং জিজ্ঞাসা কর; ও আমায় বলেছে, তোমার সঙ্গে আমার লেনা-দেনা নাই।
মহিমা—ভারী তর্ক করে (Kathamrita)!
শ্রীরামকৃষ্ণ—ও মাঝে মাঝে আমায় আবার শিক্ষা দেয়। (সকলের হাস্য) তর্ক যখন করে, হয়তো আমি গালাগালি দিয়ে বসলুম। তর্কের পর মশারির ভিতর হয়তো শুয়েছি; আবার কি বলেছি মনে করে বেরিয়ে এসে হাজরাকে প্রণাম করে যাই, তবে হয় (Kathamrita)!
বেদান্ত ও শুদ্ধাত্মা
(হাজরার প্রতি)—“তুমি শুদ্ধাত্মাকে ঈশ্বর বল কেন? শুদ্ধাত্মা নিষ্ক্রিয়, তিন অবস্থার সাক্ষিস্বরূপ। যখন সৃষ্টি, স্থিতি প্রলয় কার্য ভাবি তখন তাঁকে ঈশ্বর বলি। শুদ্ধাত্মা কিরূপ—যেমন চুম্বক পাথর অনেক দূরে আছে, কিন্তু ছুঁচ নড়ছে—চুম্বক পাথর চুপ করে আছে নিষ্ক্রিয়।”
Leave a Reply