Ramakrishna 338: “শিবে সনাতনী সর্বাণী ঈশানী, সদানন্দময়ী, সর্বস্বরূপিণী, সগুণা নির্গুণা সদাশিব প্রিয়া”

ramakrishna-kathamrita-by-mahendranath-gupta-328th-copy-2

দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ৯ই-১০ই নভেম্বর
সেবকসঙ্গে

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এই কথা শুনিয়া উচ্চহাস্য করিলেন।

মণি (অতি বিনীতভাবে)—আচ্ছা, কর্তব্য কর্ম—হাঙ্গাম— কমানো তো ভাল?

শ্রীরামকৃষ্ণ—হাঁ, তবে সম্মুখে কেউ পড়ল, সে এক। সাধু কি গরিব লোক সম্মুখে পড়লে তাদের সেবা করা উচিত।

মণি—আর সেদিন ঈশান মুখুজ্জেকে খোসামুদের কথা বেশ বললেন। মড়ার উপর যেমন শকুনি পড়ে। ও-কথা আপনি পণ্ডিত পদ্মলোচনকে বলেছিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ—না, উলোর বামনদাসকে।

কিয়ৎপরে মণি ছোট খাটের পার্শ্বে পাপোশের নিকট বসিলেন।

ঠাকুরের (Ramakrishna) তন্দ্রা আসিতেছে,—তিনি মণিকে বলিতেছেন, তুমি শোওগে। গোপাল কোথায় গেল? তুমি দোর ভেজিয়ে রাখ।

পরদিন (১০ই নভেম্বর) সোমবার। শ্রীরামকৃষ্ণ বিছানা হইতে অতি প্রতূষ্যে উঠিয়াছেন ও ঠাকুরদের নাম করিতেছেন, মাঝে মাঝে গঙ্গাদর্শন করিতেছেন। এদিকে মা-কালীর ও শ্রীশ্রীরাধাকান্তের মন্দিরে মঙ্গলারতি হইতেছে। মণি ঠাকুরের ঘরের মেঝেতে শুইয়াছিলেন। তিনি শয্যা হইতে উঠিয়া সমস্ত দর্শন করিতেছেন ও শুনিতেছেন (Kathamrita)।

প্রাতঃকৃত্যের পর তিনি ঠাকুরের কাছে আসিয়া বসিলেন।

ঠাকুর আজ স্নান করিলেন। স্নানান্তে ৺কালীঘরে যাইতেছেন। মণি সঙ্গে আছেন। ঠাকুর তাঁহাকে ঘরে তালা লাগাইতে বলিলেন।

কালীঘরে যাইয়া ঠাকুর আসনে উপবিষ্ট হইলেন ও ফুল লইয়া কখনও নিজের মস্তকে কখনও মা-কালীর পাদপদ্মে দিতেছেন। একবার চামর লইয়া ব্যজন করিলেন। আবার নিজের ঘরে ফিরিলেন। মণিকে আবার চাবি খুলিতে বলিলেন। ঘরে প্রবেশ করিয়া ছোট খাটটিতে বসিলেন। এখন ভাবে বিভোর—ঠাকুর নাম করিতেছেন। মণি মেঝেতে একাকী উপবিষ্ট। এইবার ঠাকুর গান গাহিতেছেন। ভাবে মাতোয়ারা হইয়া গানের ছলে মণিকে কি শিখাইতেছেন যে, কালীই ব্রহ্ম, কালী নির্গুণা, আবার সগুণা, অরূপ আবার অনন্তরূপিণী।

গান   —   কে জানে কালী কেমন, ষড়দর্শনে।

গান   —   এ সব ক্ষেপা মেয়ের খেলা।

গান   —   কালী কে জানে তোমায় মা (তুমি অনন্তরূপিণী!)
তুমি মহাবিদ্যা, অনাদি অনাদ্যা, ভববন্ধের বন্ধনহারিণী তারিণী!
গিরিজা, গোপজা, গোবিন্দমোহিনী, সারদে বরদে নগেন্দ্রনন্দিনী,
জ্ঞানদে মোক্ষদে, কামাখ্যা কামদে, শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণহৃদিবিলাসিনী।

গান   —   তার তারিণী! এবার ত্বরিত করিয়ে,
তপন-তনয়-ত্রাসে ত্রাসিত প্রাণ যায়।
জগত অম্বে জনপালিনী, জন-মিহিনী জগত জননী,
যশোদা জঠরে জনম লইয়ে, সহায় হরি লীলায় ॥
বৃন্দাবনে রাধাবিনোদিনী, ব্রজবল্লভ বিহারকারিণী,
রাসরঙ্গিনী রসময়ী হ’য়ে, রাস করিলে লীলাপ্রকাশ ॥
গিরিজা গোপজা গোবিন্দমোহিনী, তুমি মা গঙ্গে গতিদায়িনী,
গান্ধার্বিকে গৌরবরণী গাওয়ে গোলকে গুণ তোমার ॥
শিবে সনাতনী সর্বাণী ঈশানী, সদানন্দময়ী, সর্বস্বরূপিণী,
সগুণা নির্গুণা সদাশিব প্রিয়া, কে জানে মহিমা তোমার ॥

মণি মনে মনে করিতেছেন ঠাকুর যদি একবার এই গানটি গান—

“আর ভুলালে ভুলবো না মা, দেখেছি তোমার রাঙ্গা চরণ।”

কি আশ্চর্য! মনে করিতে না করিতে ওই গানটি গাহিতেছেন (Kathamrita)।

কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিতেছেন—আচ্ছা, আমার এখন কিরকম অবস্থা তোমার বোধ হয়!

মণি (সহাস্যে)—আপনার সহজাবস্থা।

ঠাকুর (Ramakrishna) আপন মনে গানের ধুয়া ধরিলেন,—“সহজ মানুষ না হলে সহজকে না যায় চেনা।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share