দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ পাঠ
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
১৮৮৪, ২৭শে ডিসেম্বর
ঈশ্বরদর্শনের উপায়—শ্রীমুখ-কথিত চরিতামৃত
পূর্বকথা—ঠাকুরের ব্রহ্মজ্ঞানের অবস্থা ও সর্বভূতে ঈশ্বরদর্শন
“তাঁকে সর্বভূতে দর্শন (Ramakrishna) করতে লাগলুম। পূজা উঠে গেল! এই বেলগাছ! বেলপাতা তুলতে আসতুম! একদিন পাতা ছিঁড়তে গিয়ে আঁশ খানিকটা উঠে এল। দেখলাম গাছ চৈতন্যময়! মনে কষ্ট হল। দূর্বা তুলতে গিয়ে দেখি, আর-সেরকম করে তুলতে পারিনি। তখন রোখ করে তুলতে গেলুম।
“আমি লেবু কাটতে পারি না। সেদিন অনেক কষ্টে, ‘জয় কালী’ বলে তাঁর সম্মুখে বলির মতো করে তবে কাটতে পেরেছিলুম। একদিন ফুল তুলতে গিয়ে দেখিয়ে দিলে,—গাছে ফুল ফুটে আছে, যেন সম্মুখে বিরাট—পূজা হয়ে গেছে—বিরাটের মাথায় ফুলের তোড়া! আর ফুল তোলা হল না (Kathamrita)!
“তিনি মানুষ হয়েও লীলা করছেন। আমি দেখি, সাক্ষাৎ নারায়ণ। কাঠ ঘষতে ঘষতে আগুন বেরোয়, ভক্তির জোর থাকলে মানুষেতেই ঈশ্বর দর্শন (Ramakrishna) হয়। তেমন টোপ হলে বড় রুই কাতলা কপ্ করে খায়।
প্রেমোন্মাদ হলে সর্বভূতে সাক্ষাৎকার হয়। গোপীরা সর্বভূতে শ্রীকৃষ্ণ দর্শন করেছিল। কৃষ্ণময় দেখেছিল। বলেছিল, আমি কৃষ্ণ! তখন উন্মাদ অবস্থা! গাছ দেখে বলে, এরা তপস্বী, শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করছে। তৃণ দেখে বলে, শ্রীকৃষ্ণকে স্পর্শ করে ওই দেখ পৃথিবীর রোমাঞ্চ হয়েছে।
“পতিব্রতাধর্ম; স্বামী দেবতা। তা হবে না কেন? প্রতিমায় পূজা হয়, আর জীয়ন্ত মানুষে কি হয় না?”
প্রতিমায় আবির্ভাব—মানুষে ঈশ্বরদর্শন (Ramakrishna) কখন? নিত্যসিদ্ধি ও সংসার
“প্রতিমায় আবির্ভাব হতে গেলে তিনটি জিনিসের দরকার,—প্রথম পূজারীর ভক্তি, দ্বিতীয় প্রতিমা সুন্দর হওয়া চাই, তৃতীয় গৃহস্বামীর ভক্তি। বৈষ্ণবচরণ বলেছিল, শেষে নরলীলাতেই মনটি কুড়িয়ে আসে।
“তবে একটি কথা একটি আছে(Kathamrita),—তাঁকে সাক্ষাৎকার না করলে এরূপ লীলাদর্শন হয় না। সাক্ষাৎকারের লক্ষণ কি জান? বালকস্বভাব হয়। কেন বালকস্বভাব হয়? ঈশ্বর নিজে বালকস্বভাব কি না! তাই যে তাঁকে দর্শন করে, তারও বালকস্বভাব হয়ে যায়।”
Leave a Reply