৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
কামিনী-কাঞ্চন ও তীব্র বৈরাগ্য
পরিবারের বন্ধন
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) হরির প্রতি—তুই কেন আসিস নাই? তোর পরিবার এসেছে বুঝি?
আর একটি ছোকরা ভক্ত (পূর্ণ) আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ঠাকুর তাঁহাকে অনেক কষ্টে ডাকাইয়া আনিয়াছেন, বাড়ির লোকেরা কোনও মতে আসিতে দিবেন না। মাস্টার যে বিদ্যালয়ে পড়ান সেই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে এই ছেলেটি পড়েন। ছেলেটি আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রনাম করিলেন। ঠাকুর নিজের কাছে তাহাকে বসাইয়া আস্তে আস্তে কথা কহিতেছেন — মাস্টার শুধু কাছে বসিয়া আছেন, অন্যান্য ভক্তেরা অন্যমনস্ক হইয়া আছেন। গিরিশ এক পাশে বসিয়া কেশবচরিত পড়িতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ছোকরা ভক্তটির প্রতি)—এখানে এস।
গিরিশ (মাস্টারের প্রতি)—কে এ ছেলেটি?
মাস্টার (বিরক্ত হইয়া)—ছেলে আর কে?
গিরিশ (সহাস্যে)—It needs no ghost to tell me that.
মাস্টারের ভয় হইয়াছে পাছে পাঁচজন জানিতে পারিলে ছেলের বাড়িতে গোলযোগ হয় আর তাঁহার নামে দোষ হয়। ছেলেটির সঙ্গে ঠাকুরও সেইজন্য আস্তে আস্তে কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ—সে সব কর?—যা বলে দিছিলাম?
ছেলেটি—আজ্ঞা, হাঁ।
শ্রীরামকৃষ্ণ—স্বপনে কিছু দেখ?—আগুন-শিখা, মশালের আলো? সধবা মেয়ে?—শ্মশান-মশান? এ-সব দেখা বড় ভাল।
ছেলেটি—আপনাকে দেখেছি—বসে আছেন—কি বলছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ—কি—উপদেশ?—কই, একটা বল দেখি।
ছেলেটি—মনে নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ—তা হোক,—ও খুব ভাল!—তোমার উন্নতি হবে—আমার উপর তো টান আছে?
কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর বলিতেছেন—“কই সেখানে যাবে না?”—অর্থাৎ দক্ষিণেশ্বরে। ছেলেটি বলিতেছে, “তা বলতে পারি না।”
শ্রীরামকৃষ্ণ—কেন, সেখানে তোমার আত্মীয় কে আছে না?
ছেলেটি—আজ্ঞা হাঁ, কিন্তু সেখানে যাবার সুবিধা হবে না।
গিরিশ কেশবচরিত পড়িতেছেন। ব্রাহ্মসমাজের শ্রীযুক্ত ত্রৈলোক্য শ্রীযুক্ত কেশব সেনের ওই জীবনচরিত লিখিয়াছেন। ওই পুস্তকে লেখা আছে যে পরমহংসদেব আগে সংসারের উপর বড় বিরক্ত ছিলেন, কিন্তু কেশবের সহিত দেখাশুনা হবার পরে তিনি মত বদলাইয়াছেন — এখন পরমহংসদেব বলেন যে, সংসারেও ধর্ম হয়। এই কথা পড়িয়া কোন কোন ভক্তরা ঠাকুরকে বলিয়াছেন। ভক্তদের ইচ্ছা যে, ত্রৈলোক্যের সঙ্গে আজ এই বিষয় লইয়া কথা হয়। ঠাকুরকে বই পড়িয়া ওই সকল কথা শোনান হইয়াছিল।
ঠাকুরের অবস্থা—ভক্তসঙ্গ ত্যাগ
গিরিশের হাতে বই দেখিয়া ঠাকুর গিরিশ, মাস্টার, রাম ও অন্যান্য ভক্তদের বলিতেছেন — “ওরা ওই নিয়ে আছে, তাই ‘সংসার সংসার’ করছে! — কামিনী-কাঞ্চনের ভিতর রয়েছে। তাঁকে লাভ করলে ও কথা বলে না। ঈশ্বরের আনন্দ পেলে সংসার কাকবিষ্ঠা হয়ে যায়, — আবার মাঝে ভক্তসঙ্গ-ফঙ্গও ত্যাগ করেছিলাম! দেখলুম পট্ পট্ মরে যায়, আর শুনে ছট্ফট্ করি! এখন তবু একটু লোক নিয়ে থাকি।”
Leave a Reply