ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে
সপ্তম পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও অবতারতত্ত্ব
একজন ভক্ত (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—আপনার বইয়েতে দেখলাম আপনি অবতার মানেন না। চৈতন্যদেবের কথায় দেখলাম।
ত্রৈললোক্য—তিনি নিজেই প্রতিবাদ করেছেন,—পুরীতে যখন অদ্বৈত ও অন্যান্য ভক্তেরা ‘তিনিই ভগবান’ (Ramakrishna) এই বলে গান করেছিলেন, গান শুনে চৈতন্যদেব ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের অনন্ত ঐশ্বর্য। ইনি যেমন বলেন ভক্ত ঈশ্বরের বৈঠকখানা। তা বৈঠকখানা খুব সাজান বলে কি আর কিছু ঐশ্বর্য নাই?
গিরিশ—ইনি বলেন, প্রেমই ঈশ্বরের সারাংশ—যে মানুষ দিয়ে ঈশ্বরের প্রেম আসে তাকেই আমাদের দরকার। ইনি বলেন, গরুর দুধ বাঁট দিয়ে আসে, আমাদের বাঁটের দরকার। গরুর শরীরে অন্য কিছু দরকার নাই; হাত, পা কি শিং।
ত্রৈলোক্য—তাঁর প্রেমদুগ্ধ অনন্ত প্রণালী দিয়ে পড়ছে! তিনি যে অনন্তশক্তি!
গিরিশ—ওই প্রেমের কাছে আর কোন শক্তি দাঁড়ায়?
ত্রৈলোক্য—যাঁর শক্তি তিনি মনে (Kathamrita) করলে হয়! সবই ঈশ্বরের শক্তি।
গিরিশ—আর সব তাঁর শক্তি বটে,—কিন্তু অবিদ্যা শক্তি।
ত্রৈলোক্য—অবিদ্যা কি জিনিস! অবিদ্যা বলে একটা জিনিস আছে না কি? অবিদ্যা একটি অভাব। যেমন অন্ধকার আলোর অভাব। তাঁর প্রেম আমাদের পক্ষে খুব বটে। তাঁর বিন্দুতে আমাদের সিন্ধু! কিন্তু ওইটি যে শেষ, একথা বললে তাঁর সীমা করা হল।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্য ও অন্যানা ভক্তদের প্রতি)—হাঁ হাঁ, তা বটে। কিন্তু একটু মদ খেলেই আমাদের নেশা হয়। শুঁড়ির দোকানে কত মদ আছে সে হিসাবে আমাদের কাজ কি! অনন্ত শক্তির খপরে আমাদের কাজ কি?
গিরিশ (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—আপনি অবতার মানেন?
ত্রৈলোক্য—ভক্ততেই ভগবান (Ramakrishna) অবতীর্ণ। অনন্ত শক্তির manifestation হয় না,—হতে পারে না!—কোন মানুষেই হতে পারে না।
গিরিশ—ছেলেদের ‘ব্রহ্মগোপাল’ বলে সেবা (Kathamrita) করতে পারেন, মহাপুরুষকে ঈশ্বর বলে কি পূজা করতে পারা যায় না?
শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—অনন্ত ঢুকুতে চাও কেন? তোমাকে ছুঁলে কি তোমার সব শরীরটা ছুঁতে হবে? যদি গঙ্গাস্নান করি তা হলে হরিদ্বার থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত কি ছুঁয়ে যেতে হবে? ‘আমি গেলে ঘুচিবে জঞ্জাল’।

Leave a Reply