৫০ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতা নগরে ভক্তমন্দিরে
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ২৮শে জুলাই
শ্রীযুক্ত নন্দ বসুর বাটীতে শুভাগমন
চৈতন্যলাভ ভোগান্তে—না তাঁর কৃপায়
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তোমরা কোথায়? তিনিই সব হয়েছেন। যতক্ষণ না তাঁকে জানতে পাচ্ছ, ততক্ষণ ‘আমি’ ‘আমি’ করছ!
“সকলে তাঁকে জানতে পারবে—সকলেই উদ্ধার হবে, তবে কেহ সকাল সকাল খেতে পায়, কেহ দুপুর বেলা কেউ বা সন্ধ্যার সময়; কিন্তু কেহ অভুক্ত থাকবে না! সকলেই আপনার স্বরূপকে জানতে পারবে।”
পশুপতি — আজ্ঞা হাঁ, তিনিই সব হয়েছেন বোধ হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—আমি কি, এটা খোঁজো দেখি। আমি কি হাড়, না মাংস, না রক্ত, না নাড়ীভুঁড়ি? আমি খুঁজতে খুঁজতে ‘তুমি’ এসে পড়ে, অর্থাৎ অন্তরে সেই ঈশ্বরের শক্তি বই আর কিছুই নাই। ‘আমি’ নাই! — তিনি। তোমার অভিমান নাই! এত ঐশ্বর্য। ‘আমি’ একেবারে ত্যাগ হয় না; তাই যদি যাবে না তবে থাক শ্যালা ঈশ্বরের দাস হয়ে। (সকলের হাস্য) ঈশ্বরের ভক্ত, ঈশ্বরের ছেলে, ঈশ্বরের দাস, এ-অভিমান ভাল। যে ‘আমি’ কামিনী-কাঞ্চনে আসক্ত হয়, সেই ‘আমি’ কাঁচা আমি, সে ‘আমি’ ত্যাগ করতে হয়।
অহংকারের এইরূপ ব্যাখ্যা শুনিয়া গৃহস্বামী ও অন্যান্য সকলে সাতিশয় প্রীতিলাভ করিলেন।
ঐশ্বর্যের অহংকার ও মত্ততা
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)— জ্ঞানের দুটি লক্ষণ, প্রথম অভিমান থাকবে না; দ্বিতীয় শান্ত স্বভাব। তোমার দুই লক্ষণই আছে। অতএব তোমার উপর ঈশ্বরের অনুগ্রহ আছে।
“বেশি ঐশ্বর্য হলে, ঈশ্বরকে ভুল হয়ে যায়; ঐশ্বর্যের স্বভাবই ওই। যদু মল্লিকের বেশি ঐশ্বর্য হয়েছে, সে আজকাল ঈশ্বরীয় কথা কয় না। আগে আগে বেশ ঈশ্বরের কথা কইত।
“কামিনী-কাঞ্চন একপ্রকার মদ। অনেক মদ খেলে খুড়া-জ্যাঠা বোধ থাকে না, তাদেরই বলে ফেলে, তোর গুষ্টির; মাতালের গুরু-লঘু বোধ থাকে না।”
নন্দ বসু—তা বটে।
Theosophy — ক্ষণকাল যোগে মুক্তি — শুদ্ধাভক্তিসাধন
পশুপতি—মহাশয়! এগুলো কি সত্য— Spiritualism, Theosophy? সূর্যলোক, চন্দ্রলোক? নক্ষত্রলোক?
শ্রীরামকৃষ্ণ—জানি না বাপু! অত হিসাব কেন? আম খাও; কত আমগাছ, কত লক্ষ ডাল, কত কোটি পাতা, এ হিসাব করা আমার দরকার কি? আমি বাগানে আম খেতে এসেছি, খেয়ে যাই।
“চৈতন্য যদি একবার হয়, যদি একবার ঈশ্বরকে কেউ জানতে পারে তাহলে ও-সব হাবজা-গোবজা বিষয় জানতে ইচ্ছাও হয় না। বিকার থাকলে কত কি বলে,—‘আমি পাঁচ সের চালের ভাত খাবো রে’ — ‘আমি একজালা জল খাবো রে।’— বৈদ্য বলে, ‘খাবি? আচ্ছা খাবি!’ —এই বলে বৈদ্য তামাক খায়। বিকার সেরে, যা বলবে তাই শুনতে হয়।”

Leave a Reply