ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে নরেন্দ্রাদি অন্তরঙ্গ ও অন্যান্য ভক্তসঙ্গে
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
গুরুশিষ্য-সংবাদ—গুহ্য কথা
আর-এক থাক আছে, তাকে বলে সিদ্ধের সিদ্ধ। বাবুর সঙ্গে যদি বিশেষ আলাপ হয় তাহলে আর একরকম অবস্থা—যদি ঈশ্বরের সঙ্গে প্রেমভক্তির দ্বারা বিশেষ আলাপ হয়। যে সিদ্ধ সে ঈশ্বরকে (Ramakrishna) পেয়েছে বটে, যিনি সিদ্ধের সিদ্ধ তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে বিশেষরূপে আলাপ করেছেন।
কিন্তু তাঁকে লাভ করতে হলে একটা ভাব আশ্রয় করতে হয়। শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য বা মধুর।
শান্ত—ঋষিদের ছিল তাদের অন্য কিছু ভোগ করবার বাসনা ছিল না। যেমন স্ত্রীর স্বামীতে নিষ্ঠা–সে জানে আমার পতি কন্দর্প।
দাস্য—যেমন হনুমানের। রামের কাজ করবার সময় সিংহতুল্য। স্ত্রীরও দাস্যভাব থাকে,–স্বামীকে প্রাণপণে সেবা করে। মার কিছু কিছু থাকে—যশোদারও ছিল।
সখ্য—বন্ধুর ভাব; এস, এস কাছে এসে বস। শ্রীদামাদি কৃষ্ণকে কখন এঁটো ফল খাওয়াচ্ছে, কখন ঘাড়ে চড়েছে।
বাৎসল্য—যেমন যশোদার। স্ত্রীরও কতকটা থাকে,–স্বামীকে প্রাণ চিরে খাওয়ায়। ছেলেটি পেট ভরে খেলে তবেই মা সন্তুষ্ট। যাশোদা কৃষ্ণ খাবে বলে ননী হাতে করে বেড়াতেন।
মধুর—যেমন শ্রীমতির। স্ত্রীরও মধুরভাব। এ-ভাবের ভিতরে সকল ভাবই আছে—শান্ত, দাস্য, বাৎসল্য।
মণি—ঈশ্বরকে দর্শন কি এই চক্ষে হয়?
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তাঁকে চর্মচক্ষে দেখা যায় না। সাধনা করতে করতে একটি প্রেমের শরীর হয়–তার প্রেমের চক্ষু, প্রেমের কর্ণ। সেই চক্ষে তাঁকে দেখে,–সেই কর্ণে তার বাণী শুনা যায়। আবার প্রেমের লিঙ্গ যোনি হয়।
এই কথা শুনিয়া মণি হো-হো করিয়া হাসিয়া ফেলিলেন। ঠাকুর বিরক্ত না হইয়া আবার বলিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ—এই প্রেমের শরীরে আত্মার সহিত রমণ হয়।
মণি আবার গম্ভীর হইলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ঈশ্বরের প্রতি খুব ভালবাসা না এলে হয় না। খুব ভালবাসা হলে তবেই তো চারিদিকে ঈশ্বরময় দেখা যায়। খুব ন্যাবা হলেই চারিদিকে হলদে দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ “ঈশ্বরলাভ-এর মানে কি? ঈশ্বরদর্শন কাকে বলে? কেমন করে হয়?”
আরও পড়ুনঃ “সচ্চিদানন্দলাভ হলে সমাধি হয়, তখন কর্মত্যাগ হয়ে যায়”
আরও পড়ুনঃ “তিনি দাঁড়াইলে ঠাকুর বলিলেন, বলরাম! তুমি? এত রাত্রে?”
আরও পড়ুনঃ “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
Leave a Reply