৫০ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতা নগরে ভক্তমন্দিরে
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ২৮শে জুলাই
গুহ্যকথা—“তিনজনই এক”
বলরামের বাড়ির বৈঠকখানার পশ্চিমপার্শ্বের ঘরে ঠাকুর বিশ্রাম করিতেছেন, নিদ্রা জাইবেন। গণুর মার বাড়ি হইতে ফিরিতে অনেক রাত হইয়া গিয়াছে। রাত পৌনে এগারটা হইবে।
ঠাকুর (Ramakrishna) বলিতেছেন, “যোগীন একটু পায়ে হাতটা বুলিয়ে দাও তো।”
কাছে মণি বসিয়া আছেন।
যোগীন পায়ে হাত বুলাইয়া দিতেছেন (Kathamrita); এমন সময় ঠাকুর বলিতেছেন, আমার ক্ষিদে পেয়েছে, একটু সুজি খাব।
ব্রাহ্মণী সঙ্গ সঙ্গে এখানেও আসিয়াছেন। ব্রাহ্মণীর ভাইটি বেশ বাঁয়া তবলা বাজাইতে পারেন। ঠাকুর ব্রাহ্মণিকে আবার দেখিয়া বলিতেছেন, “এবার নরেন্দ্র এলে, কি আর কোনও গাইয়ে লোক এলে ওঁর ভাইকে ডেকে আনলেই হবে।”
ঠাকুর একটু সুজি খাইলেন। ক্রমে যোগীন ইত্যাদি ভক্তেরা ঘর হইতে চলিয়া গেলেন। মণি ঠাকুরের পায়ে হাত বুলাইতেছেন, ঠাকুর তাঁহার সহিত কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—আহা, এদের (ব্রাহ্মণীদের) কি আহ্লাদ!
মণি—কি আশ্চর্য, যীশুকৃষ্টের সময় ঠিক এইরকম হয়েছিল! তারাও দুটি মেয়েমানুষ ভক্ত, দুই ভগ্নী। মার্থা আর মেরী।
শ্রীরামকৃষ্ণ (উৎসুক হইয়া)—তাদের গল্প কি বল তো (Kathamrita)।
মণি—যীশুকৃষ্ট তাঁদের বাড়িতে ভক্তসঙ্গে ঠিক এইরকম করে গিয়েছিলেন। একজন ভগ্নী তাঁকে দেখে ভাবোল্লাসে পরিপূর্ণ হয়েছিল। যেমন গৌরের গানে আছে,—
‘ডুবলো নয়ন ফিরে না এলো।
গৌর রূপসাগরে সাঁতার ভুলে, তলিয়ে গেল আমার মন।’
“আর-একটি বোন একলা খাবর-দাবার উদ্যোগ করছিল। সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যীশুর কাছে নালিশ করলে, প্রভু, দেখুন দেখি—দিদির কি অন্যায়! উনি এখানে একলা চুপ করে বসে আছেন, আর আমি (Ramakrishna) একলা এই সব উদ্যোগ করছি?
“তখন যীশু বললেন, তোমার দিদিই ধন্য, কেন না মানুষ জীবনের যা প্রয়োজন (অর্থাৎ ঈশ্বরকে ভালবাসা—প্রেম) তা ওঁর হয়েছে।”
শ্রীরামকৃষ্ণ—আচ্ছা তোমার এ-সব দেখে কি বোধ হয়?
মণি—আমার বোধ হয়, তিনজনেই এক বস্তু!—যীশুখ্রীষ্ট, চৈতন্যদেব আর আপনি—একব্যক্তি!
শ্রীরামকৃষ্ণ—এক এক! এক বইকি। তিনি (ঈশ্বর),—দেখছ না,—যেন এর উপর এমন করে রয়েছে!
এই বলিয়া ঠাকুর নিজের শরীরের উপর অঙ্গুলি নির্দেশ করিলেন যেন বলছেন, ঈশ্বর তাঁরই শরীরধারণ করে অবতীর্ণ হয়েই রয়েছেন।

Leave a Reply