শ্রীযুক্ত কেশবচন্দ্র সেনের সহিত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের নৌকাবিহার, আনন্দ ও কথোপকথন
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
সর্বধর্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।
গীতা—১৮।৬৬।
ব্রাহ্মসমাজ ও জনক রাজা-গৃহস্থের উপায়—নির্জনে বাস ও বিবেক
কিন্তু ফস করে জনক রাজা হওয়া যায় না। জনক রাজা নির্জনে অনেক তপস্যা করেছিলেন। সংসারে থেকেও এক-বার নির্জনে বাস করতে হয়। সংসারের বাহিরে একলা গিয়ে যদি ভগবানের (Ramakrishna) জন্য তিনদিনও কাঁদা যায় সেও ভাল। এমনকি অবসর পেয়ে একদিনও নির্জনে তাঁর চিন্তা যদি করা যায়, সেও ভাল। লোক মাগছাগলের জন্য একঘটি কাঁদে, ঈশ্বরের জন্যে কে কাঁদছে বল? নির্জনে থেকে মাঝে মাঝে ভগবানের জন্যে সাধন করতে হয়! সংসারের ভিতর কর্মের মধ্যে থেকে, প্রথমাবস্থায় মন স্থির করতে অনেক ব্যাঘাত হয়। ফুটপাতের গাছ, যখন চারা থাকে, বেড়া না দিলে ছাগল-গরুতে খেয়ে ফেলে। প্রথমাবস্থায় বেড়া, গুঁড়ি হলে আর বেড়ার দরকার থাকে না। গুঁড়িতে হাতি বেঁধে দিলেও কিছু হয় না।
রোগটি(Kathamrita) হচ্ছে বিকার। আবার যে-ঘরে বিকারের রোগী, সেই ঘরে জলের জালা আর আচার তেঁতুল। যদি বিকারের রোগী আরাম করতে চাও, ঘর থেকে ঠাই নাড়া করতে হবে। সংসারী জীব বিকারের রোগী; বিষয়—জলের জালা; বিষয়ভোগতৃষ্ণা-জলতৃষ্ণা। আচার তেঁতুল মনে করলেই মুখে জল সরে, কাছে আনতে হয় না; এরূপ জিনিসও ঘরে রয়েছে; যোষিৎসঙ্গ। তাই নির্জনে চিকিৎসা দরকার।
বীবেক-বৈরাগ্য লাভ করে সংসার করতে হয়। সংসার-সমুদ্রে কামক্রোধাদি কুমির আছে। হলুদ গায়ে মেখে জলে নামলে কুমিরের ভয় থাকেনা। বিবেক-বৈরাগ্য—হলুদ। সদসৎ বিচারের নাম বিবেক। ঈশ্বরই সৎ, নিত্যবস্তু। আর সব অসৎ, অনিত্য; দুদিনের জন্য। এই বোধ আর ঈশ্বরে অনুরাগ। তাঁর উপর টান—ভালবাসা। গোপীদের কৃষ্ণের (Ramakrishna) উপর যেরূপ টান ছিল। একটা গান শোন;
আর উপায়—ঈশ্বর অনুরাগ—গোপীদের মতো টান বা স্নেহ
বংশী বাজিল ওই বিপিনে।
(আমার তো না গেলে নয়) (শ্যাম পথে দাঁড়ায় আছে)
তোরা যাবি কি না যাবি বল গো।।
তোদের শ্যাম কথার কথা।
আমার শ্যাম অন্তরের ব্যাথা (সই)
তোদের বাজে বাঁশী কানের কাছে।
বাঁশী আমার বাজে হৃদয়মাঝে।
শ্যামে বাঁশী বাজে, বেরাও রাই।
তোমা বিনা কুঞ্জের শোভা নাই।
ঠাকুর (Ramakrishna) অশ্রুপূর্ণ নয়নে এই গান গাইতে গাইতে (Kathamrita) কেশবাদি ভক্তেদের বললেন, রাধাকৃষ্ণ মনো আর নাই মানো, এই টানটুকু নাও, ভগবানের জন্য কিসের এইরূপ ব্যাকুলতা হয়, চেষ্টা কর। ব্যাকুলতা থাকলেই তাঁকে লাভ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ “মা এই নাও তোমার পাপ, এই নাও তোমার পুণ্য, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও”
আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”
আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?"
আরও পড়ুনঃ “পশ্চিমে বিবাহের সময় বরের হাতে ছুরি থাকে, বাংলাদেশে জাঁতি থাকে”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours