কাঁচা সুপারি বা কাঁচা বাদামের ভিতরের সুপারি বা বাদাম শাঁস থেকে তফাৎ করা যায় না। কিন্তু পাকা অবস্থায় সুপারি বা বাদাম আলাদা, শাঁস আলাদা হয়ে যায়। পাকা অবস্থায় রস শুকিয়ে যায়—ব্রহ্মজ্ঞান হলে বিষয় শুকিয়ে যায়।
কিন্তু সে জ্ঞান বড় কঠিন—বললেই ব্রহ্মজ্ঞান হয় না। কেউ জ্ঞানের ভান করে, একজন বড় মিথ্যা কথা কইতো—আবার এদিকে বলতো, “আমার ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে।”
কোন লোক তাকে তিরস্কার করাতে এসে বললে, “কেন, জগত তো স্বপ্নবৎ। সবই যদি মিথ্যা হয়, তবে সত্য কথাটাই কি ঠিক? মিথ্যাটাও মিথ্যা, সত্যটাও মিথ্যা!”
শ্রী রামকৃষ্ণ ভক্তদের সঙ্গে মেঝেতে মাদুরের উপর বসিয়া আছেন। ভক্তদের বলিতেছেন, “আমার পায়ে একটু হাত বুলিয়ে দে তো।” ভক্তেরা পদসেবা করিতেছেন।
মাস্টারের প্রতি সহাস্যে, “এই পদসেবার অনেক মানে আছে।”
আবার নিজের হৃদয়ে হাত রাখিয়া বলিতেছেন, “এর ভিতর যদি কিছু থাকে, অজ্ঞান ও বিদ্যা একেবারে চলে যায়।”
হঠাৎ শ্রী রামকৃষ্ণ গম্ভীর হইলেন, যেন কী গূঢ় কথা বলিবেন।
শ্রী রামকৃষ্ণ মাস্টারের প্রতি—
“এখানে অপর লোক কেউ নাই। সেদিন হরিশ কাছে ছিল। দেখলাম খোলটি ছেড়ে সচিদানন্দ বাহিরে এলো, এসে বললে ‘আমি যুগে যুগে অবতার।’
তখন ভাবলাম বুঝি মনের খেয়ালে ওইসব কথা বলছি।
তারপর চুপ করে থেকে দেখলাম— তখন দেখি আপনি বলছেন, ‘শক্তির আরাধনা চৈতন্য করেছিল।’”
ভক্তেরা সকলে অবাক হইয়া শুনিতে চান। কেউ কেউ ভাবিতে চান— সচিদানন্দ ভগবান কি শ্রী রামকৃষ্ণের রূপ ধারণ করিয়া আমাদের কাছে বসিয়া আছেন? ভগবান কি আবার অবতীর্ণ হইয়াছেন?
শ্রী রামকৃষ্ণ কথা কহিতেছেন, মাস্টারকে সম্বোধন করিয়া আবার বলিতেছেন, “দেখলাম পূর্ণ আবির্ভাব, তবে সত্য, গুণের ঐশ্বর্য।”
ভক্তরা সকলে অবাক হইয়া এই সকল কথা শুনিতেছেন।
Leave a Reply