কর্তাটি তখন খুব ব্যস্ত হয়ে চিঠির খোঁজ শুরু করলেন। অনেকক্ষণ ধরে, অনেকজন মিলে খুঁজে শেষে চিঠিখানা পাওয়া গেল। তখন তিনি খুব আনন্দে, অতি যত্নে চিঠিখানা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলেন—দেখতে লাগলেন কী লেখা রয়েছে। লেখা ছিল: ‘পাঁচ সের সন্দেশ পাঠাবে, একখানা কাপড় পাঠাবে’—আরও কত কী!
তখন আর চিঠির দরকার রইল না। চিঠি ফেলে দিয়ে তিনি সন্দেশ, কাপড় আর অন্যান্য জিনিস কিনতে বেরিয়ে পড়লেন।
চিঠির দরকার কতক্ষণ? যতক্ষণ সন্দেশ, কাপড় ইত্যাদির খবর জানা না যায়। খবর জেনে গেলে নিজে কর্মে প্রবৃত্ত হতে হয়।
ঠিক এইরকমই—শাস্ত্রও কেবল ঈশ্বরকে পাবার উপায়ের কথা বলে। কিন্তু খবর সব জেনে গেলে নিজে সাধনা শুরু করতে হয়। তবেই তো বস্তু (ঈশ্বর) লাভ হয়।
শুধু পাণ্ডিত্যে কী হবে?
অনেক শ্লোক, অনেক ছাত্র পণ্ডিতের জানা থাকতে পারে, কিন্তু যার সংসারে আসক্তি আছে,
যার কামিনী-কাঞ্চনে মনে মনে ভালোবাসা আছে,
তার শাস্ত্রধারণা হয় নাই।
মিছে পড়া।
পাঁজিতে লিখেছে — “বিচারে জল”, কিন্তু পাঁজি টিপলে এক ফোঁটাও পড়ে না।
সকলের হাস্য।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে):”পণ্ডিত খুব লম্বা লম্বা কথা বলে, কিন্তু নজর কোথায়? কামিনির, কাঞ্চনের, দেহের, সোনার (টাকার) প্রতি।”
শকুনি খুব উঁচুতে উড়ে, কিন্তু নজর থাকে ভাগাড়ে — কোথায় মরা।
নরেন্দ্র খুব ভালো — গাইতে, বাজাতে, পড়াশোনায়, বিদ্যায়।
এদিকে জিতেন্দ্র, বিবেক, বৈরাগ্য আছে।
সত্যবাদী, অনেক গুণ।
মাস্টারের প্রতি কেমন রে? কেমন গা? খুব ভালো নয়।
মাস্টার: “আজ্ঞে হ্যাঁ, খুব ভালো।”
শ্রীরামকৃষ্ণ: “মাস্টারের প্রতি দেখো — ওর (গিরিশের) খুব অনুরাগ আর বিশ্বাস।”
মাস্টার অবাক হইয়া গিরিশকে একদৃষ্টে দেখিতেছেন।
গিরিশ ঠাকুরের কাছে কয়েকদিন আসিতেছেন মাত্র।
মাস্টার কিন্তু দেখিলেন — যেন পূর্ব পরিচিত, অনেক দিনের আলাপ।
পরম আত্মীয় যেন — এক সূত্রে গাঁথা মণিগণের একটি মণি।
Leave a Reply