সপ্তম পরিচ্ছেদ
ঠাকুর অহেতুক কৃপাসিন্ধু
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এখনও দাঁড়াইয়া রহিয়াছেন কেন? মূলমন্ত্র করে জপিতেছেন; জপিতে জপিতে ভাবাবিষ্ট হইয়াছেন। অহেতুক কৃপাসিন্ধু! বুঝি যাইবার সময় মহাত্মা বিদ্যাসাগরের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য মার কাছে প্রার্থনা করিতেছেন।
ঠাকুর ভক্তসঙ্গে সিঁড়ি দিয়া নামিতেছেন। একজন ভক্তের হাত ধরিয়া আছেন। বিদ্যাসাগর স্বজনসঙ্গে আগে আগে যাইতেছেন—হাতে বাতি, পথ দেখাইয়া আগে আগে যাইতেছেন। শ্রাবণ কৃষ্ণষষ্ঠী, এখনও চাঁদ উঠে নাই। তমসাবৃত উদ্যানভূমির মধ্য দিয়া সকলে বাতির ক্ষীনালোক লক্ষ্য করিয়া ফটকের দিকে আসিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ভক্তসঙ্গে ফটকের কাছে যাই পৌঁছিলেন, সকলে একটি সুন্দর দৃশ্য দেখিয়া দাঁড়িয়া পড়িল। সম্মুখে বাঙালীর পরিচ্ছদধারী একটি গৌরবর্ণ শ্মশ্রুধারী পুরুষ, বয়স আন্দাজ ৩৬/৩৭, মাথায় শিখদিগের ন্যায় শুভ্র পাগড়ি, পরনে কাপড়, মোজা, জামা। চাদর নাই। তাঁহারা দেখিলেন, পুরুষটি শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করিবামাত্র মাটিতে উষ্ণীষসমেত মস্তক অবলুণ্ঠিত করিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া রহিছেন। তিনি দাঁড়াইলে ঠাকুর বলিলেন, বলরাম! তুমি? এত রাত্রে?
বলরাম (সহাস্যে)—আমি অনেকক্ষণ এসেছি, এখানে দাঁড়িয়েছিলাম।
শ্রীরামকৃষ্ণ—ভিতরে কেন যাও নাই?
বলরাম--আজ্ঞা, সকলে আপনার কথাবার্তা শুনিছেন, মাঝে গিয়া বিরক্ত করা।
(এই বলিয়া বলরাম হাসিতে লাগিলেন।)
ঠাকুর (Ramakrishna) ভক্তসঙ্গে গাড়িতে উঠিতেছেন।
বিদ্যাসাগর (মাস্টারের প্রতি মৃদুস্বরে)—ভাড়া কি দেব?
মাস্টার—আজ্ঞা না, ও হয়ে গেছে।
বিদ্যাসাগর ও অন্যান্য সকলে ঠাকুরকে প্রণাম করিলেন।
গাড়ি উত্তরাভিমুখে হাঁকাইয়া দিল। গাড়ি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে যাইবে। এখনও সকলে গাড়ির দিকে তাকাইয়া দাঁড়াইয়া আছেন। বুঝি ভাবিতেছেন, এ মহাপুরুষ কে? যিনি ঈশ্বরকে ভালবাসেন, আর যিনি জীবের ঘরে ঘরে ফিরছেন, আর বলছেন, ঈশ্বরকে ভালবাসাই জীবনের উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুনঃ“গীতা গীতা দশবার বলতে গেলে, ত্যাগী ত্যাগী হয়ে যায়”
আরও পড়ুনঃ “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”
আরও পড়ুনঃ “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours