Tamralipti: মহাভারতেও মেলে উল্লেখ, প্রাচীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাম্রলিপ্ত, জানুন ইতিহাস

তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল প্রাচীন ভারতের পূর্ব দিকের প্রবেশদ্বার
Untitled_design(637)
Untitled_design(637)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সিন্ধু সভ্যতার বন্দর হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত ছিল লোথাল, সোপারা প্রভৃতি। সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে এই বন্দরগুলির মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশের বাণিজ্য চলত পশ্চিমের বিভিন্ন দেশগুলির সঙ্গে। একইভাবে প্রাচীন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল তাম্রলিপ্ত। তাম্রলিপ্ত (Tamralipti) বর্তমানে পরিচিত তমলুক শহর হিসেবে যা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতে অবস্থিত। গবেষকদের মতে, তাম্রলিপ্ত নামটি এসেছে তামা থেকে। অনেকের ধারণা সে সময় বিহারের সিংভূম জেলার ঘাটশিলা থেকে তামা খনন করা হত এবং তাম্রলিপ্ত বন্দরের মাধ্যমেই তা রফতানি করা হত। মহাভারতেও তাম্রলিপ্তের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাম্রলিপ্ত ছিল রাজা তাম্রধ্বজ্যের রাজধানী। অশ্বমেধযজ্ঞের সময় পাণ্ডবদের অশ্ব এই তাম্রধ্বজ ধারণ করেন এবং অর্জুনের সঙ্গে তাঁর ভয়ানক যুদ্ধ হয়। রাজার বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে কৃষ্ণ ও অর্জুন তাঁর সঙ্গে সখ্যসূত্রে আবদ্ধ হন বলে জানা যায়। 

কোন কোন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চলত?

তাম্রলিপ্ত বন্দর (Tamralipti) থেকে জাহাজগুলি পশ্চিমবঙ্গ, বর্তমান বাংলাদেশ ও মায়ানমারের উপকূল ধরে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে বাণিজ্যে যেত। পূর্ব ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের মাধ্যমে বিদেশের ব্যবসায়ী, নাবিক এবং ধর্মপ্রচারকরাও আসতেন বলে জানা যায়। এই বন্দর থেকেই নীল, সিল্ক এবং তামা বোঝাই জাহাজগুলি শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকার উপকূল, আরব সাগরের অন্যান্য দেশেও পৌঁছে যেত।

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে অষ্টম খ্রিষ্টাব্দ শতাব্দী পর্যন্ত বিকাশ লাভ করেছিল

ঐতিহাসিকদের মতে তাম্রলিপ্ত (Tamralipti) বন্দরটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে অষ্টম খ্রিষ্টাব্দ শতাব্দী পর্যন্ত বিকাশ লাভ করেছিল। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল কলিঙ্গ যুদ্ধ। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, তাম্রলিপ্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের দখল নেওয়ার জন্যই অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করেছিলেন। সে সময়ে মৌর্য রাজাদের রাজধানী বিহারের পাটলিপুত্রের সঙ্গে তাম্রলিপ্ত সড়কপথে যুক্ত হয়ে উঠেছিল।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারেও তাম্রলিপ্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারেও তাম্রলিপ্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বলে মনে করেন ঐতিহাসিকরা। বৌদ্ধ সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল জাতকের কাহিনী। এখানে তাম্রলিপ্তের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই বন্দরের মাধ্যমে তৎকালীন সুবর্ণভূমি অর্থাৎ বর্তমান দিনের মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে ঘনঘন সমুদ্রযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অশোক তাঁর ছেলে মহেন্দ্রকে তাম্রলিপ্ত বন্দরের (Tamralipti) মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার ইতিহাস নিয়ে রচিত গ্রন্থ মহাবংশ দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দে লেখা হয়েছিল, এখানে উল্লেখ মেলে তাম্রলিপ্ত বন্দরের।

অনেক নামেই পরিচিত ছিল তাম্রলিপ্ত

পশ্চিমী দুনিয়ার বিভিন্ন দার্শনিকের গ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে তাম্রলিপ্ত বন্দরের উল্লেখ মেলে। যেমন রোমান দার্শনিক ও পরিব্রাজক প্লিনি দ্বিতীয় শতাব্দীতে তাঁর লেখা বই 'ন্যাচারাল হিস্টরি'তে তাম্রলিপ্তকে একটি সমৃদ্ধ বন্দর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং প্রভৃতি বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজকরা তাম্রলিপ্ত বন্দর পরিদর্শন করেছিলেন বলে জানা যায়। পরিব্রাজকদের বিবরণ থেকে তাম্রলিপ্তের অনেক নাম মেলে। যেমন, তাম্রলিপ্ত, তাম্রলিপ্তি, তালুক্তি, তমালিকা, তমালিশি, দামলিপ্ত, তমলিটিস, তমোলিত্তি ইত্যাদি।

পতনের কারণ

সপ্তম শতাব্দী থেকে তাম্রলিপ্ত বন্দরের পতন শুরু হয়। তবে এর কারণ কী তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট ভাবে জানা যায় না। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে, তাম্রলিপ্ত বন্দরের পতনের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক কারণ রয়েছে। অনেকে মনে করেন নদী বন্দরের পলি ও নদীর গতিপথের পরিবর্তনের কারণেই এই বন্দরের পতনের হয়। আধুনিক যুগে ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত এই বন্দরের অস্তিত্বের ব্যাপারে সেভাবে কিছু জানা যায়নি। সে সময়ে বাঙালি লেখক এবং গবেষক গৌর দাস কিছু খনন কার্য চালিয়েছিলেন এবং ১৮৮৯ সালে 'প্রসিডিংস অফ দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল'-এ তাঁর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। তারপর থেকেই সারা দেশে প্রাচীন ভারতের অন্যতম বন্দর হিসেবে তাম্রলিপ্তের (Tamralipti) নামও উঠে আসে।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles