মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ক্যান্সার নিরাময়ে জোর দিল কেন্দ্রীয় সরকার। বাজেটে (Union Budget 2025) স্বাস্থ্যখাতে বড় ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman)। এদিন কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় ক্যান্সার সেন্টার তৈরি করা হবে। দেশে আরও ২০০টি ডে কেয়ার ক্যান্সার সেন্টারও করা হবে। অর্থমন্ত্রী জানান দাম কমতে পারে অনেক বহুমূল্য ক্যান্সারের ওষুধের। ক্যান্সার-সহ ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধ পুরোপুরি শুল্কমুক্ত করল কেন্দ্র। আগামী দিনে ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অনেকটাই সুবিধে দিতে পারে এই পদক্ষেপ।
ক্যান্সার রোগীদের ওষুধে ছাড়
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman) এই নিয়ে আটবার অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট (Union Budget 2025) পেশ করলেন। মোদি সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর অষ্টম কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের সময় জানালেন, এবার সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিচ্ছে। এই বাজেট মধ্যবিত্তের কথা ভেবে, বলে জানান নির্মলা। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্যতম মাথা ব্যথার কারণই হল চিকিৎসা। ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তের মাথায় বাজ পড়ে যায়। তাই এই পরিস্থিতিতে মানুষকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধে দিল সরকার। ক্যান্সার ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি বিরল রোগের ওষুধকে আরও সহজলভ্য করে দেওয়া হল। এর ফলে বিপদের সময়ও অনেকটা সাশ্রয় হতে পারে। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এবার ক্যান্সার সহ ৩৬টি কঠিন রোগের ওষুধের ওপর থেকে মৌলিক শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হল। এর ফলে ওষুধের দাম আরও সস্তা হবে। এটা নিঃসন্দেহে বড় সুরাহা।
ক্যান্সার সেন্টার গড়ে তোলা
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, এদেশে উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার (মুখ এবং গলার ক্যান্সার সহ)। এছাড়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা। সারভাইকাল ক্যান্সারেও আক্রান্ত হচ্ছেন বহু। সবাইকে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর, পরিবেশে, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের তত্ত্বাবধানে যদি ভালভাবে ডে-কেয়ার সেন্টারগুলিতে কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা দেওয়া যায়, তাহলে তা খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে। সেই লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেন যে দেশের প্রতিটি জেলায় ক্যান্সার সেন্টার তৈরি করা হবে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে সব জেলায় জেলা হাসপাতালগুলিতে ক্যান্সার সেন্টার তৈরি করা হবে। ২০০টি ক্যান্সার কেয়ার কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তৈরি করা হবে ডে-কেয়ার সেন্টার।
গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে ১ কোটি কর্মীকে স্বাস্থ্য এবং বিমার আওতায় আনা হবে। নির্মলা সীতারামন আজ বাজেটে ‘চিকিৎসা পর্যটনে’র উপর জোর দেওয়ার কথাও বলেছেন। সেক্ষেত্রে পিপিপি মডেলে কাজ হবে বলে জানান তিনি। তবে বারবার অভিযোগ ওঠে দেশের সরকারি হাসপাতালে রোগী এবং চিকিৎসকের সংখ্যার অনুপাত অনেক কম। তাই চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হবে। শনিবার বাজেট পেশের সময়ে নির্মলা সীতারামন বিশেষ করে গ্রামীণ এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামো উন্নত করার উপর জোর দেন। দেশের চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়াতেও বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ১০ হাজার আসন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে মেডিক্যাল পড়ার সুবিধা পাবে আরও ছাত্র-ছাত্রী। আগামী ৫ বছরে ৭৫ হাজারটি বেশি সিট বাড়ানো হবে মেডিক্যাল কলেজে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ আরও বাড়াতে এআই সেন্টার তৈরি করা হবে। এর জন্য সরকার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সবকটি পদক্ষেপই সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নয়ন ঘটাবে। সেটা চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা হোক বা চিকিৎসায় প্রযুক্তির ব্যবহার অথবা চিকিৎসার খরচ কমানো, সব ক্ষেত্রেই।
বাজেটে খুশি স্বাস্থ্যক্ষেত্র
বাজেটে (Union Budget 2025) কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর (Nirmala Sitharaman) ঘোষণায় খুশি স্বাস্থ্যক্ষেত্র। বাজেট পেশের পর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ক্যান্সার-সহ ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধকে পুরোপুরি শুল্কমুক্ত করা নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য ঘোষণা। ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্যয়ভার বইতে বইতে ন্যুব্জ পরিবারগুলোকে অনেকটা স্বস্তি দেবে এই সিদ্ধান্ত। এর ফলে কমতে পারে ক্যান্সারের ওষুধের দাম। এই বাজেটে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এফআইসিসিআই ক্যান্সার টাস্ক ফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ গোর আইএএনএস-কে বলেন, এই শুল্ক অব্যাহতি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার খরচ কমাবে । রোগীদের কাছে ওষুধ আরও সহজলভ্য করে তুলবে। মেডিকেল টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ভিসা প্রক্রিয়াটি সহজ করে দেওয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন।
Leave a Reply