মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দু’দিনের সফরে মরিশাসে (Mauritius) পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi in Mauritius)। ১২ মার্চ মরিশাসের জাতীয় দিবসে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেবেন মোদি। মঙ্গলবার ভোরে মরিশাসের স্যার সিউওসাগুর রামগুলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী নবীন রামগুলাম। মরিশাসে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। ভারত ও মরিশাসের মধ্যে শক্তিশালী ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কারণে মোদির এই সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী রামগুলাম এটিকে তাঁর দেশের জন্য বিশেষ সম্মান বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, যে প্রধানমন্ত্রী মোদির এই সফর উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
মরিশাসে একগুচ্ছ কর্মসূচি
মরিশাসের সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্ক। দুই দেশের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক মেলবন্ধন রয়েছে। আর রয়েছে ভারত মহাসাগর। মরিশাস যেন ‘মিনি ইন্ডিয়া’। ১২ মার্চ সেদেশের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবারই দু-দিনের সফরে দ্বীপরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন মোদি (PM Modi in Mauritius)। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী নবীন রামগুলাম, উপপ্রধানমন্ত্রী, মুখ্য বিচারক, স্পিকার, বিরোধী দলনেতা-সহ মরিশাসের ২০০ জন পদাধিকারিক মোদিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির মরিশাস সফর, তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদি, মরিশাসের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ভারতের আর্থিক সহায়তায় ২০টির বেশি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মোদি। নরেন্দ্র মোদির এই মরিশাস সফরে ভারত ও মরিশাসের মধ্যে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, উন্নয়নে অংশীদারিত্ব, আন্তর্জাতিক মঞ্চে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান এবং দু দেশের জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মতো একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
মোদির সঙ্গে মরিশাসের সম্পর্ক
প্রধানমন্ত্রী মোদির (PM Modi in Mauritius) সঙ্গে মরিশাসের সম্পর্ক বহু দিনের। তখনও তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীও হননি। মরিশাস সফরে গিয়ে সবার মন জয় করেছিলেন। ১৯৯৮ সালের সেই মরিশাস সফরের কথা এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করেছেন মোদি। এক্স হ্যান্ডলে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, একশো বছরেরও বেশি আগে ভারতের বহু নাগরিক শ্রমিক হিসেবে মরিশাসে যান। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তুলসীদাসের রামায়ণ, হনুমান চালিশা। হিন্দি ভাষা মরিশাসের অন্যতম ভাষা হয়ে ওঠে। ১৯৯৮ সালের ২ থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মরিশাসের মোকাতে ছিলেন মোদি। সেখানে ‘ইন্টারন্যাশনাল রামায়ণ কনফারেন্স’-এ যোগ দিয়েছিলেন। সেইসময় বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোদি। ভারত ও মরিশাসকে এক সূত্রে বাঁধতে রামায়ণ কীভাবে সেতুর কাজ করেছে, ওই কনফারেন্সে তা তুলে ধরেছিলেন মোদি।
ভারত-মরিশাস সম্পর্ক
মরিশাসের সঙ্গে সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতের আত্মিক সম্পর্ক। দুদেশের সম্পর্কের সেতু রামায়ণ। আজও সেদেশে সমান জনপ্রিয় তুলসীদাসের রামায়ণ এবং হনুমান চালিশা। মরিশাসের অন্যতম প্রধান ভাষা হিন্দি। এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের জনসংখ্যা ১৩ লক্ষেরও বেশি। যা কিনা এই দ্বীপের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। উল্লেখ্য ১৯৭৬ সাল থেকে মহাত্মা গান্ধী ইনস্টিটিউট দুদেশের সংস্কৃতির প্রচারের জন্য একটি যৌথ মঞ্চ হিসেবে আজও কাজ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান সফরে দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হবে বলেই আশা কুটনীতিকদের। প্রসঙ্গত চিনা হুমকির কথা মাথায় রেখে ভারত মহাসাগরের বুকে মরিশাসে ভারত একটি বন্দরও গড়ে তুলেছে। সেখানকার পোর্ট লুইসে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য মোতায়নও রাখবে নয়া দিল্লি।
মরিশাসের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক
সিঙ্গাপুরের পর মরিশাস ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারও বটে। বর্তমানে মরিশাস-ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন, নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসিওরেন্স কর্পোরেশন, টেলিকমিউনিকেশনস কনসালটেন্ট ইন্ডিয়া লিমিটেড, ইন্ডিয়ান অয়েল (মরিশাস) লিমিটেড, মহানগর টেলিফোন (মরিশাস) লিমিটেড, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (মরিশাস) সহ ১১ টি ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রয়েছে সেদেশে। উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, মহাকাশ গবেষণা সহ একাধিক প্রকল্পে মরিশাসকে সহযোগিতা করছে ভারত। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এবং মরিশাস রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন কাউন্সিল যৌথ উপগ্রহ নির্মাণের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর একটি সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষরও করেছে। বর্তমানে মরিশাসে সাড়ে ৮৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যায়ে ভারতের সহযোগিতায় গড়ে উঠছে মেট্রো এক্সপ্রেস প্রকল্প, সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং তৈরি, নতুন হাসপাতাল সহ একাধিক প্রকল্প। কোভিডের সময়ও মরিশাসকে ভ্যাকসিন দিয়ে সাহায্য করেছিল ভারত।
Leave a Reply