মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গত মঙ্গলবারই ৪০০ জনেরও বেশি যাত্রীবাহি একটি ট্রেন হাইজ্যাক করে বালোচ বিদ্রোহীরা (Balochistan Liberation Army)। এরপরেই পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে ৩৩ জন বালোচ বিদ্রোহীকে তারা হত্যা করতে পেরেছে। যদিও পাকিস্তানের (Pakistan Army) এই দাবিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি। তারা জানিয়েছে, এমন বিবৃতি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৩ মার্চ এই মর্মে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে তাদের তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়েছে বলে দাবি বিদ্রোহীদের। তাদের এও দাবি যে ২১৪ জন পণবন্দি পাক সেনাকে হত্যা করেছে তারা। এই পণবন্দিদের হত্যার দায় তারা চাপিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ওপরে।
আলোচনায় না বসে পণবন্দিদের মৃত্যুকে নিশ্চিত করেছে পাক সেনা, তোপ বালোচ বিদ্রোহীদের
এক্ষেত্রে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি বলছে যে পাকিস্তান (Pakistan Army) সেনাবাহিনী তাদের সঙ্গে কখনও আলোচনায় বসতে চায়নি, যদি তারা আলোচনায় বসত, তাহলে এমনটা হত না। অর্থাৎ পণবন্দিদের মৃত্যুর দায় একেবারে পাকিস্তানের সেনার ওপরেই চাপাচ্ছে বালোচ বিদ্রোহীরা। প্রসঙ্গত, বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র হলেন জিয়ান বালোচ। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে আমরা যে ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা দিয়েছিলাম। তারা সেটাকে উপেক্ষা করেছে। এই কারণেই এর ফল ভুগতে হয়েছে ওই রেল যাত্রীদের অর্থাৎ পণবন্দিদের। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এমন উপেক্ষার কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই পণবন্দিদের।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘৪৮ ঘণ্টার সময় সীমার মধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের দেশের নাগরিকদেরকে বাঁচাতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি।’’ একইসঙ্গে পাকিস্তান (Pakistan Army) সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বিএলএ মুখপাত্র জিয়ান বালোচ আরও বলেন, ‘‘পাকিস্তান প্রথম থেকেই একগুঁয়ে মনোভাব ঔদ্ধত্য ও স্পর্ধা দেখিয়ে গিয়েছে। যেমনটা তারা চিরকাল করে এসেছে। তারা এড়িয়ে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলি। তাদের এই ধরনের কার্যকলাপের কারণেই তারা বাস্তবতাকে বুঝতে পারেনি। আর এটা না বোঝার কারণে ২১৪ জন পনবন্দিকে তারা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।’’
শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে শহিদ হওয়া বালোচ বিদ্রোহীদের উদ্দেশে
একই সঙ্গে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি পাকিস্তানি (Pakistan Army) সেনার সঙ্গে যুদ্ধে তাদের যে সমস্ত সদস্যরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বিএলএ-এর মুখপাত্র এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে তাঁদের বারো জন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি তাঁরা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর (Pakistan Army) সঙ্গে যুদ্ধে শহিদ হওয়া ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যাঁরা শত্রুর বিরুদ্ধে এক অসাধারণ যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। এই অবিস্মরণীয় যুদ্ধের কারণেই তাঁদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। বুধবার রাতে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। বৃহস্পতিবার রাতে আরও চারজন যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়াও মাজিদ ব্রিগেডের পাঁচ জন আত্মঘাতী বাহিনীর সদস্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা শত্রুপক্ষকে উচিত জবাবও দিতে পেরেছেন। যার কারণে ইতিহাস তাঁদের সর্বদা মনে রাখবে।’’ বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির তরফ থেকে আরও দাবি করা হয়েছে যে তারা আন্তর্জাতিক আইন সীমার মধ্যেই কাজ করছেন।
ভুল তথ্য দিচ্ছে পাক সেনা!
গত মঙ্গলবার, গুদালার এবং পিরু কুনরির কাছে মাশকাফ টানেলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস। এই ট্রেন অপহরণ করে বিএলএ। জানা গিয়েছে, ট্রেনটি বালোচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে আসছিল। গত বুধবার অর্থাৎ ১২ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হাইজ্যাক করা জাফর এক্সপ্রেস থেকে সমস্ত পণবন্দিদের উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা করে। বিবৃতিতে বলা হয় অভিযানের সময় ৩৩ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন এবং ২১ জন যাত্রী এবং ৪ জন পাকিস্তানি সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। ট্রেনটিতে মোট ৪৪০ জন ছিলেন বলে জানায় পাক সেনা। কিন্তু পাক সেনার দাবি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উড়িয়ে দেয় বিএলএ। তাদের বক্তব্য ছিল, জাফর এক্সপ্রেস অভিযানে পাক সেনা চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে তাই তারা বাস্তবকে অস্বীকার করছে এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে পাক সেনা। জানা গিয়েছে, বালোচ বিদ্রোহীরা সাধারণ যাত্রীদের মানবঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। বিস্ফোরক ভর্তি জ্যাকেট পরে যাত্রীদের মধ্যে মিশে গিয়েছিলেন বেশ কিছু বালোচ বিদ্রোহী। তার ফলে পাক বাহিনীকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় ওই অভিযানে। উদ্ধারকাজ নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। তবে পাক নিরাপত্তা বাহিনী (Pakistan Army) পরে জানায়, স্নাইপার বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বিদ্রোহীদের কৌশলকে ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। পরে অবশ্য জাফর এক্সপ্রেস অপহরণের নেপথ্যে আফগানিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু সেখানকার তালিবান সরকার সাফ জানিয়ে দেয়, এই ঘটনায় তাদের আদৌ কোনও যোগ নেই।
Leave a Reply