মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্কুলে শিক্ষক (Education Crisis) রয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার। অপর দিকে এক বছরে ভর্তি শূন্য! ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের প্রায় ৪ হাজার স্কুলে কোনও রকম ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়নি। কেন্দ্রীয় রিপোর্টের এই চাঞ্চল্যকর তথ্যে রাজ্যের তৃণমূল সরকার এখন চরম অস্বস্তিতে। এদিকে মমতা (West Bengal) সরকার এগিয়ে বাংলা বলে ঢাকঢোল পেটালেও এই রাজ্যের শিক্ষাঙ্গণের এই তথ্যে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কতটা বেহাল দশা রাজ্যের। দিল্লির রিপোর্টে তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, এই রাজ্যে ৩ হাজার ৮১২টি স্কুলে গত এক বছরে নতুন করে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি। বাংলার পরেই এই তালিকা রয়েছে তেলঙ্গানা ও মধ্যপ্রদেশে।
শূন্য স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা (West Bengal)
সারা দেশে ৭ হাজার ৯৯৩টি স্কুলে (Education Crisis) গত এক বছরে কেউ ভর্তি হয়নি। অবশ্য ভারতবর্ষ জুড়ে এখন এই পরিসংখ্যানের পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে। গত বছর দেশজুড়ে এই রকম স্কুলের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৯৫৪টি। যা চলতি বছর ৫ হাজার কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৯৩-তে। তবে স্কুল ছুটের তালিকায় একেবারে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তেলঙ্গানা, এই রাজ্যে এক বছরে ভর্তিশূন্য দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৪৫টি স্কুল। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। এখানে ভর্তি শূন্য দাঁড়িয়েছে ৪৬৩টি স্কুলে। তবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি না হলেও একাধিক শিক্ষক স্কুলে নিযুক্ত ছিলেন। বাংলার ক্ষেত্রে এই ভর্তি শূন্য স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৯৬৫ জন। তেলঙ্গানায় রয়েছে ১ হাজার ১৬ জন এবং মধ্যপ্রদেশের ক্ষেত্রে ২২৩ জন। আবার যোগীর উত্তরপ্রদেশে ভর্তি শূন্য স্কুলের সংখ্যা হল ৮১টি।
১ লক্ষ এমন স্কুলে ১ জন করে শিক্ষক
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ১ লক্ষ এমন স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষক বা শিক্ষিকার সংখ্যা মাত্র ১ জন। এসব স্কুলে মোট পড়ুয়াদের সংখ্যা প্রায় ৩৩ লক্ষ। তবে এমন স্কুলের সংখ্যা অন্ধ্রপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি। এরপর তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, লাক্ষাদ্বীপ। তবে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা বিশিষ্ট স্কুলগুলিতেই অধিক পরিমাণে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির হিসেব সামনে উঠে এসেছে। ঠিক তারপরেই রয়েছে তালিকায় ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal), মধ্যপ্রদেশ রাজ্য। এবারের রিপোর্টে একজন শিক্ষিক-শিক্ষিকা বিশিষ্ট স্কুলের সংখ্যাও কমেছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমন স্কুলের (Education Crisis) সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১৮ হাজার ১৯০। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে তা কমে হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৯৭১। প্রায় ৬ শতাংশের পার্থক্য।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুণ
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের (Education Crisis) এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “স্কুলশিক্ষা রাজ্যের দায়িত্ব। রাজ্য সরকারগুলিকে আমরা পরামর্শ দেব কেন এইভাবে ছাত্রছাত্রীর অভাবে স্কুলগুলি লাগাতার বন্ধ হচ্ছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুণ।” রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশ কিছু রাজ্যে এমন ভর্তিশূন্য স্কুলের পরিসংখ্যানও পাওয়া যায়নি। এই রাজ্যগুলির মধ্যে হল— হারিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, অসম, হিমাচল প্রদেশ, ছত্তিশগঢ়, নাগাল্যান্ড, সিকিম এবং ত্রিপুরা। একই ভাবেই কোনও কেন্দ্র শাসিত রাজ্যে দিল্লি, পুদুচেরি, লাক্ষাদ্বীপ, দাদরা ও নগর হাভেলী, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চণ্ডীগড়, দমন ও দিউয়ের মতো রাজ্যে একই রকম কোনও স্কুলের সন্ধান মেলেনি।
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষায় অনীহা
রাজ্যে (West Bengal) স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল দেরিতে বের হওয়া, স্কুলে ভর্তিতে অনিশ্চয়তা, ওবিসি সংরক্ষণ জটিলতা, প্রাইভেট স্কুল-কলেজে ভর্তির রমরমা, এসএসসিতে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল, মিড ডে মিলে দুর্নীতি-সহ একাধিক বিষয়ে তৃণমূল সরকারের অপকর্ম পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের জীবনকে অস্থির করে তুলেছে। শিক্ষা এবং শিক্ষার (Education Crisis) ভিত্তিতে কাজের সুযোগ নেই বলেই এই রাজ্যে পড়াশুনার প্রতি সামাজিক অনীহা তৈরি হয়েছে। মমতা সরকারের আমলে সবচেয়ে পরিমাণে শিক্ষকে অবহেলা করা হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।

Leave a Reply