মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাক সেনা সকালে দাবি করেছে, অভিযান শেষ। জঙ্গি মুক্ত জাফর এক্সপ্রেস (Pakistan Train Hijack)। মুক্ত সমস্ত পণবন্দী। ঘটনায় ৩৩ জঙ্গি নিহত হয়েছে। তারপরই বালোচদের পাল্টা ঘোষণা, পাক সেনা মিথ্যে কথা বলছে। বালোচ লিবারেশন আর্মির (Balochistan Liberation Army) পাল্টা দাবি, ১৫৪ জন বন্দী এখনও তাদের কবজায় আছে। সব মিলিয়ে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। দাবি, পাল্ট দাবিতে উত্তপ্ত পাকিস্তান।
পাক সেনার দাবি
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ জানান, সশস্ত্র বাহিনী সব জঙ্গিকে হত্যা করেছে। সব যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করে বুধবার সন্ধ্যায় সফলভাবে অভিযান শেষ করেছে সেনা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ৩৩ জঙ্গির সবাই নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, “খবর পাওয়ার পরই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হয়েছে। কারণ বিএলএ জঙ্গিরা স্যাটেলাইট ফোনে আফগানিস্তানে তাদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল।’’ ট্রেনে মহিলা ও শিশুদের নিরাপদে বের করে আনাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথমেই আত্মঘাতী জঙ্গিদের খতম করে পাকিস্তানি সেনার স্নাইপাররা। যাতে আচমকা বিস্ফোরণে তারা গোটা ট্রেন উড়িয়ে দিতে না পারে। এরপর একে একে ট্রেনের সমস্ত কামরা খালি করা হয়। নির্মূল করা হয় বালোচ জঙ্গিদের। বিএলএ যাত্রীদের মানবঢাল বানিয়ে রেখেছিল। তাই যে কোনও মূল্যে সাধারণ মানুষকে বাঁচানোই পাকিস্তানি সেনার প্রথম কাজ। এমনটাই বলেছেন আহমেদ শরিফ।
মুক্ত পণবন্দির দাবি
হামলা থেকে কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরেছেন মুশতাক মহম্মদ। তিনি বলেন, “আচমকাই বিশাল বিস্ফোরণ হল। তারপরই এলোপাথাড়ি গুলি চলতে শুরু করল। এই দৃশ্য আজীবন মনে থাকবে।” জাফর এক্সপ্রেসে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে পেশোয়ার যাচ্ছিলেন ইশাক নূর। তিনি বলেন, “গুলির আওয়াজ পেতেই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরি। স্ত্রীও তাই করেন। গুলি লাগলে আমাদের লাগুক। সন্তানদের যেন কিছু না হয়।’’ মুশতাক জানান, জঙ্গিরা সবার পরিচয়পত্র খুঁটিয়ে দেখে কয়েকজনকে আলাদা সরিয়ে নিয়ে যায়। তাঁর কথায়, “আমাদের কামরার সামনে ৩ জন জঙ্গি পাহারায় ছিল। তারা বলে দিয়েছিল, সাধারণ নাগরিক, বৃদ্ধ, মহিলা এবং বালোচদের কোনও ক্ষতি হবে না।’’ সন্ধ্যা নাগাদ বন্দীদের এক এক করে ছাড়তে শুরু করে বিএলএ। মুক্ত পণবন্দিদের কথায়, ট্রেনের ভিতর সারি সারি লাশ পড়ে রয়েছে। অভিযানের সময় যাঁরা নিহত হয়েছেন বলে অনুমান।
বালোচ লিবারেশন আর্মির দাবি
বিএলএ দাবি করেছে যে ট্রেনে মোট ৪২৬ জন যাত্রী ছিল, যার মধ্যে ২১৪ জন পাকিস্তানি সেনা ছিল। বিএলএ জানিয়েছে, তারা ৬০ জন সৈন্যকে হত্যা করেছে এবং ১৫০ জন এখনও তাদের হেফাজতে রয়েছে। এর সাথে সাথে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণে তিনজন বিএলএ কমান্ডারও নিহত হয়েছেন। বিপরীতে, পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে যে তাদের সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনী অভিযান সম্পন্ন করেছে, ২১ জন যাত্রী এবং ৪ জন সৈন্য নিহত হয়েছে। পাকিস্তান বলছে যে ৩৩ জন বিএলএ যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং ২১২ জন নাগরিককে কোনও ক্ষতি ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক মহলের অনুমান
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং সরকারের আর বালোচিস্তানের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই, বলে মনে করছে বিশ্ববাসী। বালোচিস্তানের ৬-৭টি জেলা সম্পূর্ণরূপে সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। পাকিস্তান সরকার বা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। অনেকের মতে, বালোচিস্তান এবং সিন্ধ প্রদেশের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি এখন একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে এই যৌথ বাহিনী। বালোচিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।