মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: টানা তৃতীয় বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত। আমেদাবাদের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিল এই জয়। ঘরের মাঠে অপরাজিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পায়নি ভারত। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে পরাজিত হতে হয়েছিল। দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে সেই অস্ট্রেলিয়াকে (India Vs Australia) হারিয়েছে রোহিত-ব্রিগেড। ১১ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ভারত। দলটা অস্ট্রেলিয়া, তাই যেন ম্যাচ না জেতা পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এই জয়ের কৃতিত্ব গোটা দলকে দিয়েছেন তিনি।
দলগত সাফল্যেই জয়
এদিন টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় অজিরা। জয়ের জন্য ভারতের কাছে লক্ষ্য ছিল ২৬৫ রান। ম্যাচ শেষে রোহিত বলেন, “না জেতা পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারছিলাম না। ওদের ইনিংস শেষ হওয়ার পর মনে হচ্ছিল, জিততে গেলে আমাদের ভাল ব্যাট করতে হবে। আমরা সেটাই করেছি। সকলে ঠান্ডা মাথায় খেলেছে। জেতা ছাড়া আমাদের মাথায় কিছুই ছিল না। সকলে মিলে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি।”
রো-‘হিটে’র নজির
এদিন আইসিসি প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার নজির গড়লেন রোহিত। মঙ্গলবার রোহিত আইসিসির প্রতিযোগিতায় নিজের ৬৫তম ছক্কা মারলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ভেঙে দিলেন ক্রিস গেলের বিশ্বরেকর্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন ব্যাটার আইসিসির প্রতিযোগিতায় ৬৪টি ছক্কা মেরেছিলেন। এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁর ছয়ের সংখ্যা ৪৯টি। চতুর্থ স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার। আইসিসির প্রতিযোগিতায় তাঁর ছক্কার সংখ্যা ৪৫টি।
চেজ মাস্টার কোহলি, ছাপিয়ে গেলেন সচিনকে!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (ICC Champions Trophy 2025) সেমিফাইনালে ৮৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস এল বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের জয় এনে দিল তাঁর ইনিংস। একই সঙ্গে আরও একটি কীর্তি গড়লেন কোহলি। রান তাড়া করতে নেমে এক দিনের ক্রিকেটে ৮০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। রান তাড়া করার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার হিসাবে বিবেচনা করা হয় কোহলিকে। তা যে শুধু কথার কথা নয়, তার প্রমাণ কোহলির পরিসংখ্যান। সচিন তেন্ডুলকরের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসাবে রান তাড়া করতে নেমে ৮০০০ রান পূর্ণ করলেন কোহলি। ১৭০টি ম্যাচে এই সাফল্য অর্জন করলেন তিনি। রান তাড়া করতে নেমে সচিন ২৪২টি ম্যাচে করেছেন ৮৭২০ রান। তাঁর স্ট্রাইক রেট ৮৮.৪। কোহলি রান তাড়া করতে নেমে ৮০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ৯৩.৩ স্ট্রাইক রেটে। এ ক্ষেত্রে কোহলির গড় ৬৪.৭১। রান তাড়া করতে নেমে এখনও পর্যন্ত ২৪টি শতরান করেছেন কোহলি। সচিন করেছিলেন ১৪টি শতরান।
কেন হাতছাড়া শতরান
এদিন তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই এক দিনের আন্তর্জাতিকে ৫২তম শতরান হাতছাড়া করলেন কোহলি। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে বিরাট সে কথা মেনেও নিলেন। কোহলি বলেছেন, “যে সময় আউট হয়েছি, তখন শতরান হতে আর ২০ রান মতো বাকি ছিল। আমি চেয়েছিলাম তাড়াতাড়ি সেই রানটা করে নিয়ে আর দু’ওভারের মধ্যে খেলা শেষ করে দিতে। মাঝেমাঝে সে ভাবেই খেলতে চাই। তবে কখনও-সখনও আপনি যেটা চান সেটা কাজে লাগে না।” আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরিরর নিরিখে সবার উপরে রয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর। কেরিয়ারে সব মিলিয়ে একশোটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এদিন সচিনের সঙ্গে বিরাটের ব্যবধান আরও একটু কমবে, এমন সম্ভাবনাই ছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮৪ রানে ফেরেন চেজমাস্টার।
মাত্র ৫টি বাউন্ডারি, কোনও ছয় নেই, সিঙ্গল ৫৬!
বিরাট কোহলির ৮৪ রানের ইনিংসে মাত্র ৫টি বাউন্ডারি। কোনও ছয় নেই। সিঙ্গল নিয়েছেন ৫৬টি! পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির ইনিংসেও ৭টি মাত্র বাউন্ডারি মেরেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি বলেন, “আমার মতে আজকের ইনিংসটাও পাকিস্তান ম্যাচের মতোই। সেখানে সেঞ্চুরি করলেও মাত্র ৭টি বাউন্ডারি মেরেছিলাম। আমার কাছে সবচেয়ে জরুরি পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং করা। স্ট্রাইক রোটেট করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এই ধরনের পিচে পার্টনারশিপ খুবই জরুরি। আজও সেটাই চেষ্টা করেছি। মরিয়া হয়ে রান তাড়া করার চেষ্টা করিনি। মাঠের এ দিক-ও দিক খুচরো রান নিতে পেরে ভাল লাগছিল। যখন আপনি ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে খুচরো রান নিতে পারবেন, তখন বুঝবেন ভাল খেলছেন। পাকিস্তান এবং আজকের ম্যাচে আমার কাছে সবচেয়ে তৃপ্তির জায়গা এই বিষয়টাই। আমার কাছে সবচেয়ে জরুরি পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং করা। স্ট্রাইক রোটেট করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এই ধরনের পিচে পার্টনারশিপ খুবই জরুরি। আজও সেটাই চেষ্টা করেছি।”
পরবর্তী বিশ্বকাপেও থাকবেন কোহলি!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy 2025) আগে তাঁর ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হতেই একের পর এক বড় ইনিংস খেলে সমস্ত সমালোচনা থামিয়ে দিয়েছেন বিরাট কোহলি। তিনি আবার কি এক দিনের ক্রিকেটে সেরা ফর্মে? সহাস্য কোহলির উত্তর, “এটা তো আপনারা ঠিক করবেন। আমি ও সব নিয়ে কখনও মাথা ঘামাই না। মাইলফলকের দিকে না তাকিয়ে দলের জয়ের কথা ভাবলে এ ধরনের জিনিস আপনা থেকেই হতে থাকবে। দল যা চায় সেটা করতে পারলে আমি গর্বিত হই। মাইলফলক আর আকৃষ্ট করে না।” তাহলে কী দলের জন্যই ফের একবার একদিনের বিশ্বকাপে খেলতে চান কোহলি? আপাতত লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। আরও একটি আইসিসি খেতাব।
Leave a Reply