মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: লৌহযুগের (Iron Age India) সূচনা হয়েছিল ভারতে! নতুন আবিষ্কারের ফলে ইতিহাস বদলে যেতে চলেছে এবার। ঐতহাসিক কালানুক্রমিক সময় চিহ্নর একাধিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনের শিবগালাই, মাঙ্গাদু, কিলনামান্ডি, থেলুঙ্গানুর এবং আদিচানাল্লুর (Tamil Nadu) থেকে। জানা গিয়েছে, নিদর্শনগুলি এক-একটি প্রায় ২ হাজার ৯৫৩ থেকে ৩ হাজার ৩৪৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ সময়ের মধ্যেকার। বর্তমান সময়ের হিসেবে ৫ হাজার ৩০০ বছর আগের। ভারতীয় সভ্যতার উদ্ভব এবং বিকাশ প্রায় ৫ হাজার বছরের পুরনো বলে বার বার উল্লেখ করে গিয়েছেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদরা। একই ভাবে, আর্য সভ্যতার উদ্ভব এবং বিবর্তন নিয়ে সিন্ধু সভ্যতার কথা বার বার উল্লেখ করেছনে। গবেষণায় কী বলা হয়েছে আসুন জেনে নিই।
৫ হাজার ৩০০ বছর আগেকার লোহা উদ্ধার (Iron Age India)
সম্প্রতি তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) তুতিকোরিন থেকে খননকার্য চালিয়ে একটি শবাধার সঙ্গে লোহার (Iron Age India) কিছু অতিপ্রাচীন সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। এই সামগ্রীগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। পুরাতাত্ত্বিকরা বলেছেন, তুতিকোরিনে পাওয়া পুরাতাত্ত্বিক উপাদানের সময়কাল নির্ণয় করে বোঝা গিয়েছে যে, আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ বছর আগে এই রাজ্যে লোহার ব্যবহার করেছিল মানুষরা। ফলে এই ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা হচ্ছে সারা বিশ্বে তামিলনাড়ুই হবে লৌহযুগের প্রথম ব্যবহারের পথপ্রদর্শক। ফলে এই প্রমাণ পৃথিবীর ইতিহাসকে বদলে ফেলবে। উল্লেখ্য ভারতের ব্রিটিশ প্রভাব মুক্ত জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদরা খুব স্পষ্ট ভাবে বলে গিয়েছেন, পশ্চিমের সভ্যতার আলো তখনও জ্বলে ওঠেনি, যখন ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রবাহ এবং ইতিহাস উৎকর্ষের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে বয়স নির্ণয়
গত বৃহস্পতিবার ‘অ্যান্টিকুইটি অফ আয়রন’ (Iron Age India) নামে সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করছে তামিলনাড়ু (Tamil Nadu) রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ। গবেষণা পত্রটি লিখেছেন শিবনন্থন এবং পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে রাজন। এই গবেষণাপত্রের ৭৩ পৃষ্ঠায় দাবি করা হয়েছে, “আজ থেকে ৫ হাজার ৩০০ বছর আগে তামিলনাড়ুতে লোহার প্রচলন ছিল। অ্যাক্সিলারেটর মাস স্পেকটোমেট্রি (এএমএস) এবং অপটিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স (ওএসএল) পদ্ধতিতে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় খননকার্য চালানো হয়েছিল। নিদর্শনের সময়কাল যাচাই করার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন গবেষকরা। তাতে খুব স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কার্বন ডেটিংয়ের চেয়েও নির্ভুল ভাবে কোনও নিদর্শনের বয়স নির্ণয় করা যায় এই পদ্ধতিতে।
আরও পড়ুনঃ প্রতি বছর বাজেটের আগে হয় ‘হালুয়া উৎসব’, এরপরেই নিভৃতবাসে যান কর্মীরা, কেন জানেন?
লৌহযুগের সংস্কৃতি নিয়ে বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা হয়েছে গবেষণায়
উল্লেখ্য, আগে গবেষকদের অধিকাংশরাই মনে করেন, ১৩৮০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ বছর আগে তুরস্কের হিতাইতে লোহার (Iron Age India) আবিষ্কার হয়েছিল। হিতাইত রাজত্বের ভৌগলিক অঞ্চলে হেমাটাইট লোহার আকরিকও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। ফলে এই মত সকলেই গ্রহণ করেছিলেন। পুরাতাত্ত্বিক অধ্যাপক রুপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “লৌহযুগ নিয়ে বিতর্ক বহু দিন ধরেই চলছে। আগে মনে করা হতো বাইরে থেকে ভারতের নানা জায়গায় খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অথবা ২০০০ অব্দের লোহার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এই গবেষণায় মেগালিথিক সংস্কৃতি এবং দ্রাবিড়ীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি লৌহযুগের সংস্কৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে একটি প্রমাণের উপর সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না। আরও উপাদানের প্রয়োজন হবে।”
শিবগালাই নিদর্শনগুলি প্রাচীনতা অনেক বেশি
তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনের শিবগালাই, মাঙ্গাদু, কিলনামান্ডি, থেলুঙ্গানুর এবং আদিচানাল্লুর (Tamil Nadu) এলাকায় এই নিদর্শনগুলি পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে শিবগালাই নিদর্শনগুলির কোনও কোনওটা ২ হাজার ৯৫৩ থেকে ৩ হাজার ৩৪৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের অর্থাৎ ৫৩০০ বছরের পুরনো। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পুরাতত্ত্ববিদ দিলীপকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। সেই সময়ের কিছু হরপ্পায়ও লোহার (Iron Age India) নিদর্শন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গাঙ্গেয় উপত্যকার মালহারেও বেশকিছু নিদর্শনগুলির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলিও খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দের সূচনাকালের। ওই সময়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় লোহা আদানপ্রদানের একটা চলাচল ছিল। ফলে এই নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। তবে এই আবিষ্কারের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনেক অনেক অভিনন্দন।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
Leave a Reply