Lord Harihar Temple: সম্ভলের বিতর্কিত মসজিদ আদতে হরিহরের মন্দির, এর পৌরাণিক মাহাত্ম্য জানেন?

harihar-shiv-hari

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সম্ভলের (Sambhal) জামা মসজিদ সমীক্ষা নিয়ে বিরাট শোরগোল পড়েছে গোটা দেশ জুড়ে। হিন্দু পক্ষের দাবি, এই মসজিদ ছিল হিন্দু বিষ্ণু বা হরিহর দেবতার মন্দির (Lord Harihar Temple)। কিন্তু মুসলমান শাসক বাবর নিজে মন্দিরের স্থাপত্য, স্তম্ভ এবং গম্বুজের উপর মসজিদের কাঠামো নির্মাণ করেন। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ, বাবরনামা, শিলালিপি এবং নানা পুথির উল্লেখে স্পষ্ট যে এই মসজিদ কাঠামো আদতে হিন্দু মন্দিরের রূপান্তর। গত ২৪ নভেম্বর মসজিদের জরিপ করতে গেলে স্থানীয় মুসলিম দুষ্কৃতীরা সরকারি কর্মী, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের উপর ব্যাপক ভাবে পাথর বর্ষণ করে। এখন এই হরিহর বা ভগবান বিষ্ণুর ঐতিহাসিক এবং পৌরাণিক মাহাত্ম্য কেমন তা জানার চেষ্টা করব।

বিষ্ণু-শিবের সম্মিলিত রূপ (Lord Harihar Temple)

হরিহর হলেন হরি এবং হর-এর সমন্বয়ে তৈরি শব্দ। এক শব্দের অর্থ হল বিষ্ণু এবং আরেক শব্দের অর্থ হল শিব। ঐতিহাসিক এবং পৌরাণিক ভাবে এই দুই দেবতার অর্ধেক অর্ধেক অংশ নিয়ে পূর্ণ ভাগবানের রূপ হরিহর বিরাজমান হন। ভগবান হরিহর হলেন শিব এবং বিষ্ণুর একীকরণ। তাঁদের বিভিন্ন গুণের জন্য পুজো করা হয়। একদিকে ভগবান ভোলেনাথ হলেন ধ্বংসের দেবতা, অন্যদিকে বিষ্ণু হলেন সৃষ্টির ধারক। তবু উভয়ে হরিহর রূপে একত্রে উপস্থিত। তার মানে সৃষ্টির জন্য ধ্বংস ও সুরক্ষা উভয়ই প্রয়োজন। শিব এবং বিষ্ণুর সম্মিলিত রূপ হল হরিহর (Lord Harihar Temple)। ভগবান হরিহরের রূপ নিয়ে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে।

আরও পড়ুনঃ “প্রাণনাথ, হৃদয়বল্লভ তোরা কৃষ্ণ এনে দে…না হয় আমায় নিয়ে চল; তোদের চিরদাসী হব”

পৌরাণিক গল্প

একটি পৌরাণিক গল্পে আছে, একবার ভগবান ব্রহ্মা ও বিষ্ণু ভগবান শিবের উপাসনা করেছিলেন। শিবশঙ্কর খুশি হয়ে দুজনকেই বর চাইতে বললেন। এতে বিশ্বজগতের স্রষ্টা ব্রহ্মা শিবকে তাঁর পুত্র হিসেবে পাওয়ার জন্য শিবের কাছেই বর চাইলেন। শিব বলেছিলেন যে, তিনি ব্রহ্মার ইচ্ছা পূরণ করবেন যখন তিনি বিশ্ব সৃষ্টির সময় সাফল্য পাবেন না এবং ক্রুদ্ধ হবেন। তারপর সেই ক্রোধ থেকে শিবের জন্ম হবে এবং একাদশ রুদ্র বলা হবে তাঁকে। একই সময়ে, ভগবান বিষ্ণু বর হিসাবে শিবের কাছে ভক্তি চেয়েছিলেন। এতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান শিব বিষ্ণুকে তাঁর দেহের অর্ধেক হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি হরিহর রূপে পূজিত হতে থাকেন। শাস্ত্রে বলা হয়, ভগবান হরিহরের (Lord Harihar Temple) ডান পাশে রুদ্র এবং বাম পাশে বিষ্ণুর চিহ্ন রয়েছে। ভগবান হরিহর তাঁর ডান হাতে একটি কুঁড়ি এবং বাম হাতে একটি চাকতি এবং একটি গদা ও চক্র ধারণ করেন। গৌরী তাঁর ডানদিকে এবং লক্ষ্মী তাঁর বাম দিকে অবস্থান করেন।

ঐতিহাসিক লোক কাহিনি

পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি একটি ঐতিহাসিক লোক কাহিনিতে রয়েছে, একবার শৈব সম্প্রদায় ভগবান বিষ্ণুর উপাসকদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ ঈশ্বর, তা নিয়ে বিবাদ শুরু হয়েছিল। শৈব লোকেরা ভগবান শিবকে শ্রেষ্ঠ এবং বৈষ্ণবরা ভগবান বিষ্ণুকে শ্রেষ্ঠ বলছিলেন। এই বিবাদ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন শিবশঙ্করের কাছে পৌঁছায়। তিনি মনে করেন, এ ধরনের বিতর্ক যেন না হয়। তাই তিনি হরিহরের (Lord Harihar Temple) রূপ ধারণ করেন। ফলে দেহের অর্ধেক বিষ্ণু এবং অর্ধেক শিব। এতে ভক্তরা বুঝতে পেরেছেন যে এই দুই পরাশক্তির মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কোনও বিরোধ থাকা উচিতও নয়। আবার হিন্দু শাস্ত্রের বিশ্বাস অনুসারে, কল্কি কলিযুগ শেষ করে সত্যযুগ শুরু করতে সম্বলে আবির্ভূত হবেন। বিভিন্ন যুগে সম্বলের বিভিন্ন নাম ছিল। একে সত্যযুগে সম্ভলেশ্বর, ত্রেতাযুগে মহাদগিরি, দ্বাপর যুগে পিংলা এবং কলিযুগে সম্বল বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই স্থানেই (Sambhal) বিষ্ণুর মন্দির নির্মাণ হয়।

হরিহর ধাম কোথায় কোথায় রয়েছে?

প্রাচীনকালে শৈব ও বৈষ্ণবের মধ্যে দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি ছিল না। হরি ও হর যৌথভাবে একই স্থানে স্থাপিত হয়, যার নাম স্বরূপ বলা যায় ‘হরিহর ক্ষেত্র’ (Lord Harihar Temple)। আজ এই জায়গাটি বিহারের সোনপুরে অবস্থিত। যেখানে পশুদের সবচেয়ে বড় মেলা বসে। এখানে হরিহর মন্দির প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে ভগবান হরিহরের একটি মন্দির রয়েছে যা ‘হরিহর ধাম’ নামে পরিচিত। ‘হরিহর ধাম’ জেলা সদর গিরিডি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পশ্চিমে বাগোদরের জিটি রোড থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ২০ ফুট শিবলিঙ্গ এখানে স্থাপন করা হয়েছে। একই ভাবে বাংলায় বিষ্ণুর উপাসক এবং শৈব ধর্মের অদ্ভূত সমন্বয় দেখা গিয়েছে। বাংলার ঘরে ঘরে হরিহর নাম, গ্রামের নাম, মন্দিরের নাম খুব সহজ উপলব্ধ। তাছাড়া নাথযোগী, সিদ্ধা যোগী, সহজিয়া বৈষ্ণব, তন্ত্র, বাউল ধর্মের মধ্যেও বিষ্ণু এবং শৈব ধর্মের মিশ্রণ দেখা যায়।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share