Maha Kumbh Mela 2025: বিশ্বের আধ্যাত্মিক হৃদয় মহাকুম্ভ, প্রয়াগরাজের মহাতীর্থে মিশল ইউরোপ থেকে আমেরিকা

foreigners-arrive-on-the-banks-of-the-sangam-1829620

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চলছে মহাকুম্ভে (Maha Kumbh Mela 2025) মহাযজ্ঞ। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে সোমবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মহাকুম্ভ। সেখানে একত্রিত হয়েছেন পুণ্যার্থীরা। কোটি কোটি ভক্তের আরাধনায় ত্রিবেণী তীর্থ এখন ভারত তীর্থ। যেখানে মিলে-মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে স্পেন, ব্রাজিল, ইটালি, পর্তুগাল, জাপান। সকলের কাছেই “মেরা ভারত মহান”। কুম্ভমেলার আয়োজন, আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া সর্বোপরি উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই মহান যজ্ঞের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনায় মুগ্ধ সকলে। শুধু ধর্মীয় ভাবাবেগের জন্য নয়, যাঁরা পর্যটনের টানে ভারতে এসেছেন, তাঁদের কাছেও মহাকুম্ভ এক অন্য আবেগ। তাঁদের কথায়, এখানেই ভারতের আসল রূপ দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ

কুম্ভ মেলা (Maha Kumbh Mela 2025) হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ। যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, বলে দাবি এক বিদেশিনীর। এক রাশিয়ান মহিলার কথায়, “‘মেরা ভারত মহান’… ভারত একটি মহান দেশ। আমরা এখানে কুম্ভ মেলায় প্রথমবার এসেছি। এখানে আমরা আসল ভারত দেখতে পাচ্ছি – ভারতীয় মানুষের মধ্যে সত্যিকারের শক্তি আছে। এই পবিত্র স্থানে মানুষের পরিবেশে আমি শিহরিত। আমি ভারতকে ভালোবাসি।”

দক্ষিণ আফ্রিকার এক ভক্তও ভারতের সংস্কৃতি ও মানুষের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “এখানে রাস্তা পরিষ্কার, প্রত্যেকেই একে অপরের বন্ধু। হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এখানে আছেন এবং আমরা তাদের সান্নিধ্য উপভোগ করছি। আমরা সনাতন ধর্ম পালন করি এবং এভাবেই মহাকুম্ভের এই শৃঙ্খলিত আয়োজনকে ভালোবাসি।”

ভারতীয় সংস্কৃতির শক্তি

অ্যারিজোনার সাধ্বী ভাগবতী সরস্বতী, ৩০ বছর ধরে ঋষিকেশের পারমার্থ নিকেতনে বসবাস করছেন। মহাকুম্ভে (Maha Kumbh Mela 2025) যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “এটি শুধু সঙ্গমে পুণ্যস্নান নয়। এটি মানুষের বিশ্বাস এবং ভক্তির মধ্যে এক পবিত্র স্নান। এটি ভারতীয় সংস্কৃতির শক্তি এবং মহানতার উদাহরণ… এটি কোনও রক কনসার্ট বা ক্রীড়া ইভেন্ট নয়। এত বড় সংখ্যায় মানুষ কেন একত্রিত হয়েছে? তাদের বিশ্বাসের জন্য, তাদের ভক্তির জন্য।”

সুন্দর আয়োজন

পোল্যান্ড থেকে এসেছেন ক্লদিয়া নামে এক পর্যটক। তিনি বলেন, “এটা খুবই স্পেশাল। এর আগে কখনও আমি এমন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারিনি।” দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন থেকে আগত এক পুণ্যার্থী বলেন, “এটা কী সুন্দর! রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানকার মানুষও কী সহজে আপন করে নেন। তাঁরা কত সুখী! আমরা সনাতন ধর্ম মেনে চলি।”

আবার হোসে এক স্প্যানিশ পুণ্যার্থী বলেন যে, “এখানে আমাদের প্রচুর বন্ধু রয়েছেন। তাঁরা স্পেন, ব্রাজিল, পর্তুগাল থেকে এসেছেন। আমরা তীর্থযাত্রায় এসেছি। আমি পুণ্যস্নান করেছি। খুবই উপভোগ করেছি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান।” 

মহাকুম্ভে ব্যবস্থাপনা 

সোমবার থেকে শুরু হওয়া মহাকুম্ভ (Maha Kumbh Mela 2025) চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। হবে ৬টি পুণ্যস্নান। ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ’-এর তকমা পাওয়া কুম্ভমেলাকে ঘিরে সাজসাজ রব। প্রয়াগে গঙ্গা, যমুনা আর পৌরাণিক সরস্বতীর সঙ্গমতটে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিকে ২৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার সিসি ক্যামেরা বসিয়ে চলছে নজরদারি। মহাকুম্ভে দেড় লক্ষ তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১২ কিলোমিটার অস্থায়ী ঘাট তৈরি করা হয়েছে। যেখানে মানুষ স্নান করবেন। ৪০০ কিলোমিটার অস্থায়ী পায়ে চলার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ২ লক্ষ ৬৯ হাজার বর্গমিটার এলাকা এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে মানুষের চলার ক্ষেত্রে কোনওরকম সমস্যা না হয়। এছাড়াও থাকছে আরও ব্যবস্থাপনা। ৩০টি অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়েছে। ২০১টি রাস্তা, অলি-গলি চওড়া করা হয়েছে। ১৮০০ হেক্টর জমির উপর পার্কিং তৈরি করা হয়েছে। মহাকুম্ভে আসা পুণ্যার্থীদের জন্য দেড় লক্ষ অস্থায়ী শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। মহিলাদের জন্য ১৪৪টি চেঞ্জিং রুম তৈরি করা হয়েছে। ২৫ হাজার ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৫ হাজার সাফাই কর্মী টানা ৪৫ দিন কাজ করবেন। ৬৯ হাজার এলইডি সোলার লাইট লাগানো হয়েছে। এ সব কিছুই মুগ্ধ করেছে বিদেশিদের।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

 

 

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share