মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত একটা দেশ। ভেঙে পড়া বিমানবন্দর ও তার খানাখন্দে ভরা রানওয়ে। নেই কোনও নেভিগেশন ব্যবস্থা। এমনকী, নেই রানওয়ের ল্যান্ডিং-লাইটও। ভরসা বলতে একমাত্র পাইলটদের নাইট-ভিশন গগলস্। তাই দিয়েই নিরাপদে ছোট্ট এয়ারস্ট্রিপে অবতরণ করল ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force) দৈত্যকায় বিমান। কিছুক্ষণ পর আবার একই কায়দায় ১২১ জনকে নিয়ে আকাশে উড়ল সে। ঠিক এইভাবে একেবারে হলিউড ফিল্মি কায়দায় গতকাল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সুদানে (Sudan) আটকে পড়া ১২১ ভারতীয়কে নিয়ে বিমান উড়িয়ে সাহসী উদ্ধারকার্য চালাল ভারতীয় বায়ুসেনা। এমন উদ্ধারকার্য যা দুর্ধর্ষ সামরিক অভিযানের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।
সুদানে গৃহযুদ্ধ থামার নাম নেই। সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে প্রাণ হারাচ্ছেন শতাধিক মানুষ। সেই দেশে আটকে রয়েছেন বহু ভারতীয়ও। তাদের উদ্ধার করতেই “অপারেশন কাবেরী” (Operation Kaveri) শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় বায়ুসেনা ও নৌসেনার (Indian Navy) তরফে যৌথ উদ্যোগে সুদানে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কলাইকুন্ডায় শেষ হল ভারত ও মার্কিন বায়ুসেনার যৌথ সামরিক মহড়া, কতটা প্রাপ্তি হল?
গত এক সপ্তাহ ধরে একাধিক অভিযানে প্রায় আড়াই হাজার ভারতীয়কে সেদেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছে ভারতীয় নৌ ও বায়ুসেনা। তেমনই একটি উদ্ধারাভিযান বায়ুসেনা চালায় শুক্রবার রাতে। বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়, সি-১৩০জে হারকিউলিস ট্রান্সপোর্ট (C-130J Hercules Transport) পণ্যবাহী বিমানে উদ্ধারকাজ চালানো হয় সুদানের রাজধানী খারতুম থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ওয়াদি সাইদনা বিমানবন্দরে।
#OperationKaveri takes to the Skies!
— Indian Air Force (@IAF_MCC) April 26, 2023
Two #IAF C-130 J aircraft have evacuated more than 250 personnel from Port Sudan.#HarKaamDeshKeNaam pic.twitter.com/dXJ2VQzp19
বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, সুদানের দুই বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে বহু ভারতীয়ের পক্ষেই পোর্ট সুদানে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। শুক্রবার আটকে পড়া ওই ভারতীয়দের উদ্ধারের জন্যই ওই ছোট্ট এয়ারস্ট্রিপে অবতরণ করানো হয় বায়ুসেনার সি-১৩০জে বিমান। সঙ্গে ছিলেন বায়ুসেনার স্পেশাল ফোর্স ইউনিটের আটজন গড়ুড় কমান্ডো।
বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়েছে, ওই এয়ারস্ট্রিপে বিমান অবতরণ করা ও ভারতীয়দের উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনার গোটা প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ, ওই এয়ারস্ট্রিপটির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কোনও নেভিগেশনের ব্যবস্থা যেমন নেই। তেমনই জ্বালানি ভরা বা ল্যান্ডিং লাইটটুকুও নেই। রাতের অন্ধকারে বিনা আলোয় রানওয়েতে সুরক্ষিতভাবে অবতরণের জন্য বায়ুসেনার পাইলটরা নাইট-ভিশন গগলস্ ব্যবহার করেন। বিমানে উপস্থিত ক্রু-রাও ইলেকট্রো-অপটিক্যাল বা ইনফ্রা-রেড সেন্সর ব্যবহার করেন।
This approximately two and a half hour operation between Wadi Sayyidna and Jeddah will go down in the annals of IAF history for its sheer audacity and flawless execution - akin to that carried out in Kabul. (2/2)@giridhararamane @EoI_Khartoum pic.twitter.com/qa0TXjXTz6
— A. Bharat Bhushan Babu (@SpokespersonMoD) April 29, 2023
বায়ুসেনার তরফে এই অপারেশনের বিষয়ে আরও জানানো হয়, অবতরণের পর বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ করা হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আটকে পড়া ১২১ জন ভারতীয়কে সুরক্ষিতভাবে বিমানে তোলেন কমান্ডোরা। তাদের সামগ্রীও বিমানে তুলে দেন। আবার নাইট-ভিশন গগলস্ ব্যবহার করেই বিমানকে টেক-অফ করিয়ে সেখান থেকে উড়ে সৌদি আরবের জেড্ডার উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানটি। এই গোটা অপারেশনের জন্য আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।
উদ্ধারের এই খবর ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই বায়ুসেনা পাইলটদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সব মহল। যে অদম্য সাহস এবং দক্ষতার পরিচয় দেখিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা, তাকে কুর্নিশ।
+ There are no comments
Add yours