মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চলে গেলেন সঙ্গীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই সময় তাঁর নাক দিয়ে আচমকাই রক্তক্ষরণ হয়েছিল। অতিরিক্ত সংক্রমণে প্রভাব পড়ে কিডনি, ফুসফুসে। সম্প্রতি অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। শনিবার সকাল ১০টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আর বাংলার পথ ধরে হাঁটবেন না প্রতুল।
প্রতুলের বেড়ে ওঠা
জন্ম অবিভক্ত বাংলার বরিশালে। ১৯৪২ সালে। বাবা প্রভাতচন্দ্র ছিলেন স্কুলশিক্ষক, মা বীণাপাণি মুখোপাধ্যায় গৃহবধূ। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়। স্কুলে পড়াকালীনই তাঁর এক আশ্চর্য ক্ষমতার পরিচয় পান নিকটজনেরা। মাত্র ১২ বছর বয়সে কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতাটিতে সুরারোপ করে বন্ধুদের চমকে দিয়েছিলেন প্রতুল। পাশাপাশি নিজেও লিখতে থাকেন ছড়া, গানের লিরিক। মানুষ আর মানবতাকে তাঁর গানে সবার আগে রাখতেন। কখনও নিজের গাল, কখনও বা বুক বাজিয়ে, তুড়ি দিয়ে, হাততালি দিয়ে মঞ্চে নিজের বাঁধা গান গাইতেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
গানের জগতে প্রতুল
প্রতুলের প্রথম অ্যালবাম ‘যেতে হবে’ (১৯৯৪) প্রকাশের পর একেবারে অন্য রকম এক শ্রুতির সামনে গিয়ে পড়েন শ্রোতারা। মঞ্চে প্রতুল যন্ত্রানুষঙ্গ বর্জন করলেও এই অ্যালবামে করেননি। তাঁর গানের পিছনে বহু দূরের দিগন্তরেখার মতো থেকেছে যন্ত্র। গানই সেখানে মুখ্য। ইন্টারল্যুডে প্রতুলের নিজেরই কণ্ঠ বেজেছে। তাঁর কণ্ঠ, স্বরক্ষেপণ এবং উচ্চারণ বাঙালির কাছে এক অন্য অভিজ্ঞতা। ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে’-র তরঙ্গপ্রতিম স্বরক্ষেপণ আর ‘ঙ্গ’-এ জোর দেওয়া উচ্চারণ বুঝিয়ে দিল, তিনি একেবারে আলাদা এক গানওয়ালা। ‘বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান, তৃপ্ত শেষ চুমুক’— এমন শব্দচয়ন যে বাংলা গানে উঠে আসতে পারে, তা নব্বই দশকের ফুটতে থাকা কবিকুলও ভাবতে পারেননি। তাঁর ‘আমি বাংলায় গান গাই’ নব্বইয়ের দশকে কলেজ ক্যান্টিনে, ফেস্টে, ফেস্টুনে একাকার হয়েছে। এখনও যেন সেই সুরের মূর্ছনায় ‘বাংলার মুখ’ দেখে সাত সাগরের পাড়ের বাঙালিরাও।
Leave a Reply