মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি কর কাণ্ডে (RG Kar Incident) অধরাই রয়ে গেল সমাধানসূত্র। মঙ্গল, বুধের পর বৃহস্পতিতেও ভেস্তে গেল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের সম্ভাবনা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের শর্ত রাজ্য না মানায় বৈঠকে রাজি হননি আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। তাঁদের প্রশ্ন, “সরাসরি সম্প্রচারে রাজ্য সরকারের কীসের ভয়?’’ কেন তাঁরা এই লাইভ স্ট্রমিংয়ের বিষয়ে অনড়, ঠিক কোন আশঙ্কায়, সেই কারণও খোলসা করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
ভয়ের কারণ খোলসা
বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ আন্দোলনকারীদের ইমেল পাঠান। জানান তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জুনিয়র ডাক্তাররাও বৈঠকে যোগ দিতে আগ্রহী হন। তবে বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার চেয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা যে শর্ত দিয়েছিলেন, তা না মানায় ভেস্তে গেল বৈঠক। সেখান থেকে স্বাস্থ্যভবনের ধর্নাস্থলে ফিরে এসে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দেন, আন্দোলন চলবে। জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রীর মত অত বড় রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। সেই কারণেই ভয় লাগছিল। যদি আমাদের কোনওভাবে চাপ দেওয়া হয়, তখন কী হবে? সেই কারণেই আমরা বারবার সরাসরি সম্প্রচারের কথা বলেছি ৷ তাহলে একটি স্বচ্ছতা থাকে।’’
রাজ্যের আপত্তি
বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে যান জুনিয়র ডাক্তারদের (Junior Doctors Protest) ৩২ জনের প্রতিনিধি দল। সকলকেই নবান্নের সভাগৃহে বৈঠকে প্রবেশের অনুমতিও দেওয়া হয়। তত ক্ষণে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর সঙ্গে সেখানে অপেক্ষা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সভাগৃহে আর প্রবেশ করেননি চিকিৎসকরা। বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দেন, তাঁদের এই শর্ত না মানলে বৈঠকে প্রবেশ করবেন না। একে একে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যসচিব মনোজ, স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার, এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ছিলেন অনড়। এই আবহে মুখ্যসচিব এবং রাজ্যপুলিশের ডিজি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, এই শর্ত মানছে না রাজ্য। সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে তিনি দাবি করেন, কেউ কেউ (আন্দোলনকারী) বিচার চান না। চান ক্ষমতার চেয়ার।
আন্দোলন চলবে
নবান্নে দাঁড়িয়েই পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা দাবি করেন, চেয়ারে ভরসা রেখেই এসেছিলেন, তাই চেয়ার তাঁরা চান না। চান উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। চান নিজেদের বোনের বিচার। সে কারণেই চলবে তাঁদের অবস্থান। এর পর নবান্ন থেকে বেরিয়ে রওনা হন স্বাস্থ্যভবনের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে তাঁরা জানিয়ে দেন, ৩৩ দিন পথে থেকেছেন, প্রয়োজনে আরও ৩৩ দিন পথে থাকবেন তাঁরা। তবু বিচারের দাবি থেকে সরবেন না। তাঁদের কথায়, “সরাসরি সম্প্রচারে রাজ্য সরকারের কিসের ভয়? আমরা ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম। যাতে কর্মস্থলে নিরাপত্তা থাকে এবং কর্মস্থলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকে, সে নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম।’’ দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘আমাদের আশা ছিল আজকের বৈঠককে নিয়ে। আমরা সবাই জানতাম আজকে বৈঠকটা হবে। আমরা যদি জানতাম বৈঠকটা হবে না তাহলে এতদূর যেতামই না। আমরা হতাশ। আমাদের এই আন্দোলন স্বাস্থ্যভবনের সামনে চলবে।’’
আরও পড়ুন: মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে? ঘরোয়া উপাদানেই পেতে পারেন আরাম
জুনিয়রদের পাশে সিনিয়ররা
কোন কোন জুনিয়র ডাক্তার (Junior Doctors Protest) কাজে যোগ দিলেন, এবার খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্য ভবন। বৃহস্পতিবার মেডিক্যাল কলেজগুলির কাছে কাজে যোগ দেওয়া জুনিয়র ডাক্তারদের তালিকা চেয়েছে রাজ্য। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে রাজ্যের সব হাসপাতালকে জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশ পাঠিয়ে বলা হয়, দুপুর ২টোর মধ্যে জমা দিতে হবে ওই সংক্রান্ত রিপোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কাজে যোগ দেননি কেউ। এই আবহেই এবার স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দিল, কারা কাজে আসছেন, অবিলম্বে জমা দিতে হবে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট। রাজ্যের সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই ওই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তবে, এই রিপোর্ট তলবের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারি দেয় সিনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনও রকম শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হলে কর্মবিরতির পথে যাবেন বলে জানিয়ে দেন সিনিয়র ডাক্তাররাও। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনে সাংবাদিক বৈঠক করে ১০টি চিকিৎসক সংগঠনের সদস্যরা জানান, প্রয়োজনে সরকারি এবং বেসরকারি দুই হাসপাতালেই কর্মবিরতি শুরু করবেন তাঁরা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours