Ropeway in Amarnath: রোপওয়ে চড়ে অমরনাথে! ভারতের ১৮টি তীর্থস্থান নিয়ে নয়া ভাবনা কেন্দ্রের

ropeway in amarnath and sabarimala centre develop 18 major projects for helping pilgrimage

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভ্রমণপ্রিয় ভারতবাসী সারাবছরই ভিড় জমান কাশী থেকে কন্যাকুমারী। ভিড় জমে আজমের শরীফ থেকে শিরডির মন্দিরেও । ধর্মীয় পর্যটন ভারতবাসীর কাছে বরাবরই জনপ্রিয়। কেন্দ্রে মোদি সরকার ভারতবাসীর সেই চাহিদাও পূরণ করে চলেছে নিরন্তর। তীর্থস্থানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য নানান ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার ভারতের জনপ্রিয় তীর্থস্থানগুলিতে (Ropeway in Amarnath) শীঘ্রই অত্যাধুনিক রোপওয়ে ব্যবস্থাপনা চালু হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওইসব তীর্থস্থানে বেড়াতে আসা পর্যটক থেকে শুরু করে পুণ্যার্থী, সকলেই উপকৃত হবেন।

অমরনাথে রোপওয়ে

কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভারতের মোট ১৮টি জনপ্রিয় তীর্থস্থানে রোপওয়ে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যোগাযোগের এক নয়া মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা হবে। যার মধ্যে অন্যতম হল অমরনাথ মন্দির। যেসমস্ত নির্মাণ সংস্থা এই কাজের বরাত নিতে আগ্রহী, তাদের কাছ থেকে সরকারের তরফে ইতিমধ্যে ‘ডিটেল্ড প্রোজেক্ট রিপোর্ট’ (ডিপিআর) চাওয়া হয়েছে। সরকারের আশা, এই উদ্যোগ সফল হলে ধর্মস্থান নির্ভর পর্যটন আরও উন্নত ও আকর্ষণীয় হবে। তথ্য বলছে, যে রোপওয়ে প্রজেক্টগুলি নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে অমরনাথের প্রকল্পটি সবথেকে বড়। এক্ষেত্রে অমরনাথের (Ropeway in Amarnath) তীর্থস্থল থেকে সরাসরি বালতাল পর্যন্ত এলাকাকে রোপওয়ের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া হবে। এই দুই স্থানের মধ্যেকার দূরত্ব ১১.৬ কিলোমিটারেরও বেশি। বর্তমানে এই দূরত্ব হেঁটেই অতিক্রম করেন অধিকাংশ তীর্থযাত্রী ও পর্যটক। যাঁদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছেন, তাঁরা ভাড়া করেন হেলিকপ্টার। কিন্তু, রোপওয়ে চালু হলে তা হেঁটে যাতায়াতের থেকে আরামদায়ক ও দ্রুত হবে। আবার এই ব্যবস্থাপনা হেলিকপ্টার পরিষেবার মতো অতটা দামিও নয়। ফলে তীর্থযাত্রীরা ভীষণভাবে লাভবান হবেন।

অন্য়ান্য রোপওয়ে প্রকল্প

এছাড়াও অন্য রোপওয়ে প্রকল্প প্রস্তাবগুলির মধ্যে অন্যতম হল – কেরলের সবরীমালা মন্দির। এই রোপওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ২.৬২ কিলোমিটার। এই পথে রোপওয়ে চালু হলে তীর্থযাত্রীদের আর পাম্বা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার একটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য পথ অতিক্রম করে মন্দিরে যেতে হবে না। দক্ষিণ ভারতের আরও একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থানে রোপওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেটি হল তামিলনাড়ুর পর্বতামালাই মন্দির। এই প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৩.২১ কিলোমিটার। এখানে রোপওয়ে চালু হলে পুণ্যার্থীদের পাশাপাশি পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এই স্থানটি রামায়ণে সঞ্জীবনী পর্বতের একটি ভগ্নাংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে।

ধর্মীয় পর্যটনে জোর

২০২৪ সালে অর্থাৎ আগের বছর চারজনের মধ্যে একজন ভারতীয় ধর্মীয় স্থানে ভ্রমণ করেছেন, এমনটাই বলছে কেন্দ্রের রিপোর্ট। অযোধ্যা, বারাণসী, হরিদ্বারে ভিড় করেছেন লক্ষাধিক মানুষ। এবার মহাকুম্ভেও পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। দুর্গমতা উপেক্ষা করে প্রতিবছরই অমরনাথ দর্শনেও যান হাজার হাজার ভক্ত। ২০২৪ সালে প্রায় ৫৪ শতাংশ ভারতীয় হরিদ্বারে ভ্রমণ করেছেন। ভক্তদের মধ্যে ৮২ শতাংশ তিরুপতিতে ভ্রমণ করেছেন। বালাজির মন্দিরে প্রায় সব সময়েই ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে। শিরডিতে সাইবাবার দর্শনেও আসেন বহু ভক্ত। ধর্মীয় পর্যটন নিয়ে ভারতবাসীর আগ্রহ প্রাচীনকাল থেকেই। কেন্দ্রের মোদি সরকার ভারতবাসীর শিকড়ের টান অনুভব করেই ধর্মীয় পর্যটনে গুরুত্ব দিয়েছে। বাজেটে বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। ফলে জোয়ার এসেছে উন্নয়নে।

রোপওয়ে-তে গুরুত্ব

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্থির করা হয়েছে, দেশজুড়ে পর্যটনে জোয়ার আনতে শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থানগুলিই নয়, সেইসঙ্গে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলিতেও প্রয়োজন মাফিক রোপওয়ে নির্মাণ করা হবে। যাতে আমজনতা বেড়াতে এসে এক অনন্য অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারে এবং নির্ঝঞ্ঝাট সফর করতে পারে। ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় এবং পর্যটন গন্তব্যে পুণ্যার্থী এবং পর্যটকদের যাত্রা আরও সহজ করতে, কেন্দ্রীয় সরকার ১৮টি প্রধান রোপওয়ে প্রকল্প উন্নয়ন করতে একটি বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ধর্মীয় স্থানগুলির পাশাপাশি,আরও নানা জায়গায় রোপওয়ে চালু করার কথা ভাবা হয়েছে।

কোন কোন জায়গায় রোপওয়ে

জম্মু ও কাশ্মীরের সোনামার্গ থেকে থাজিওয়াস হিমবাহ পর্যন্ত ১.৬ কিলোমিটার রোপওয়ে প্রকল্প পর্যটন শিল্পকে শক্তিশালী করবে। রাজস্থানের জয়পুরে ৬.৪৫ কিলোমিটার রোপওয়ে আমের দুর্গ এবং নাহাড়গড় দুর্গের মধ্যে একটি আকাশপথ তৈরি করবে। এর ফলে রাজ্যের দুটি ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা সহজ হবে। মুসৌরির পাহাড়ি স্টেশনেও ৩.২১ কিলোমিটার রোপওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের প্রিয় স্থান কেম্পটি ফলসের কাছে নিয়ে যাবে। মহারাষ্ট্রের শিবনেড়ি দুর্গে ১.৪১ কিলোমিটার রোপওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে চতুর্থ ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের জন্মস্থলে যাওয়া সহজ হবে। এছাড়া, কর্নাটকের সর্বোচ্চ শিখর মুল্লায়ান গিরিতে ২.৩৮ কিলোমিটার রোপওয়ের মাধ্যমে পর্যটনের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই প্রকল্পটির আওতায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু মন্দিরগুলিতে রোপওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে, যেমন: চামুন্ডা দেবী মন্দির (হিমাচলপ্রদেশ), কুণজাপুরি মন্দির (উত্তরাখণ্ড), জ্বালা নরসিংস্বামী মন্দির (অন্ধ্রপ্রদেশ), শ্রী বয়াকোন্ডা গঙ্গাম্মা মন্দির (অন্ধ্রপ্রদেশ), সালকানপুর ওয়ালি মাতা মন্দির (মধ্যপ্রদেশ), এবং ভুবন পাহ মাহাদেব মন্দির (অসম)। এই প্রকল্পটি ‘পর্বতমালা পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত, যা ন্যাশনাল হাইওয়েজ লজিস্টিকস ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড (এনএইচএলএমএল) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে কেদারনাথ (উত্তরাখণ্ড), মাতা বৈষ্ণো দেবী (জম্মু ও কাশ্মীর), এবং শঙ্করাচার্য মন্দির (শ্রীনগর) এর জন্য কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share