মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: খোদ মুখ্যমন্ত্রীর খাসতালুকে সরস্বতী পুজোয় (Saraswati Puja) বাধা দেওয়ার অভিযোগ। এতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সাব্বির আলি। অভিযোগ, তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি দিয়েছেন সরস্বতী পুজো করলে খুন করে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে এক আইন পড়ুয়াকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ঘটনা দক্ষিণ কলকাতার যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল কলেজে। এই নিয়েই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। মমতা সরকারকে এই ইস্যুতে একহাত নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই ঘটনায় ইমেল মারফত কলেজের পড়ুয়ারা অভিযোগ জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। একইসঙ্গে অভিযোগ জানানো হয়েছে কলেজের পরিচালনা সমিতিতে থাকা মালা রায় এবং দেবাশিস কুমারকে। এঁদের দুজনই আবার তৃণমূলের নেতা-নেত্রী। মালা রায় দক্ষিণ কলকাতার সাংসদও বটে। পড়ুয়াদের (Saraswati Puja) করা সেই ইমেলেরই স্ক্রিনশট সমাজমাধ্যমের পাতায় তুলে ধরেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অন্যদিকে দিল্লি থেকে ফিরে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন রাজ্যর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সমাজমাধ্যমে (Saraswati Puja) কী লিখলেন সুকান্ত মজুমদার?
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) লেখেন, ‘‘বাংলাদেশে এতদিন ধরে উগ্র ইসলামপন্থী মৌলবাদীদের কাছ থেকে যে ধরনের হুমকি শোনা যাচ্ছিল, তা এখন আমাদের বাড়ির চারপাশেই শোনা যাচ্ছে। রাস্তার নাম ‘আনোয়ার শাহ’ হওয়ায় এলাকায় সরস্বতী পুজোর কোনও আয়োজন করা যাচ্ছে না! একটি ইসলামি মৌলবাদী দল দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী কলেজে প্রবেশ করে ফতোয়া জারি করে চলে গিয়েছে। একটু ভেবে দেখুন- তুষ্টিকরণ চালানো অযোগ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে তারা কতটা সাহসী হলে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটাতে পারে? এক মুহূর্ত ভেবে দেখুন। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে এই ঘটনাগুলি প্রকাশ্যে ঘটছে। তবুও তিনি কিছুই জানেন না!’’
শুভেন্দু অধিকারীর বিবৃতি
গতকাল বৃহস্পতিবারই দিল্লি থেকে কলকাতায় ফেরেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এর আগে কুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে সরস্বতী পুজো বন্ধ ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরস্বতী পুজোয় কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে মন দিন।’’ এদিন শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, ‘‘এটা রাজনীতি করার সময় নয়। সনাতনীরদের একটা কর্মসূচি দেখে ওদের হিংসা হয়। তাই এই কথা বলছেন! বিরোধীরা তুষ্টিকরণের কাজ করছে। হরিণঘাটায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি সরস্বতী পুজো রুখছে, সেদিকটা দেখা উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’’
‘‘সাব্বির আলির দাপটে কলেজ যেতে পারি না’’, দাবি অধ্যক্ষের
এই বিষয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়। তাঁর দাবি, ‘‘আমি সাব্বির আলির দাপটে কলেজে যেতে পারি না। বাড়ি থেকে কাজ করতে হয়। কলেজে গেলেই ওর ছেলেরা আমায় হেনস্থা করে। যে ঘটনা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গত বছর কলেজে ঢুকতে গিয়ে আমায় হেনস্থা করা হয়েছে। আমার ৪০ বছরের শিক্ষকতার জীবনে এমন দেখিনি। এর মধ্যে রাজনীতি নেই। আছে অর্থনীতি। অর্থাৎ পয়সা খোলামকুচির মতো দাও। নয়ত ঝামেলা করবে।’’
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য
এই ইস্যুতে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলার সংস্কৃতিতে কোনও কালেই সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে দেখা হত না। যদি কলকাতার বুকে মুখ্যমন্ত্রীর কলেজে সরস্বতী পুজো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তাহলে বুঝতে হবে চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভু যেমন চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি হয়ে গিয়েছেন, তেমন হিন্দু উদ্বাস্তু বাঙালি তৃণমূলের কারাগারের বন্দি হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে বাঁচাতে হবে। বাংলাকে তৃণমূলের শাসন থেকে মুক্তি করতে হবে।’’
এবিভিপির প্রতিবাদ কর্মসূচি
এই ইস্যুতে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে আরএসএস-র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। সংঠনের রাজ্য নেতাদের সাফ কথা, আইনের ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি ও পুজো বন্ধ করার নিদান দিয়ে ফের একবার নিজেদের ছাত্রবিরোধী প্রমাণ করল তৃণমূল কংগ্রেস। এবিভিপি জানিয়েছে, দীর্ঘদিন রাজ্যের কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। এমন অবস্থায় হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। শুক্রবার এই ঘটনার প্রতিবাদে টালিগঞ্জে নবীনা সিনেমা হলের বিপরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে এবিভিপি।
গুন্ডাগিরির অভিযোগ আগেও উঠেছে সাব্বিরের বিরুদ্ধে
উল্লেখ্য, যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল কলেজে সরস্বতী পুজো করলে ধর্ষণ ও প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সাব্বির আলি। এমনটাই অভিযোগ পড়ুয়াদের। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চারু মার্কেট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ল কলেজের পড়ুয়ারা। একইসঙ্গে তাঁরা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন অধ্যক্ষের কাছেও। পড়ুয়াদের বিস্ফোরক অভিযোগ, কলেজে ঢুকে সরস্বতী পুজো না করতে হুমকি দেন তৃণমূলের নেতা সাব্বির আলি। একইসঙ্গে ওই পুজোর আয়োজন হলে ছাত্রদের খুনের হুমকি দেন তিনি। হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় বেরোলে দেখে নেব। মেয়েদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব।’’ প্রসঙ্গত, এই সাব্বির আলির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। এর আগেই সাব্বিরের বিরুদ্ধে কলেজে গুন্ডাগিরির অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয় মামলা। এর পর সাব্বিরের কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে উচ্চ আদালত। কিন্তু তার পরও সাব্বির ও তাঁর শাগরেদরা ক্যাম্পাসে গুন্ডামি করে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি নদিয়ার হরিণঘাটা থানা এলাকার নগরউখড়ার একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে সরস্বতী পুজো বন্ধ করার হুমকি দেয় তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় বুথ সভাপতি আলিমুদ্দিন। পুজো করলে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ১ দিনের মধ্যে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন এই আলিমুদ্দিন। এরপরে ফের সামনে এল দক্ষিণ কলকাতার ঘটনা।
Leave a Reply