মাধ্যম নিউজ জেস্ক: হিন্দুরাষ্ট্রের দাবিতে উত্তাল নেপাল (Nepal Unrest)। বিক্ষোভের আগুনে পুড়ল ঘরবাড়ি। পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা জনতার। অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ায় বিক্ষোভকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ছোড়ে পুলিশ। তার পরেও নেভেনি অশান্তির আগুন। যার জেরে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশ-জনতার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজন সাংবাদিক-সহ দুজনের। জখম হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে টিংকুনের কান্তিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নেপালে রাজতন্ত্র (Nepal Unrest)
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট দেশ নেপাল। এক সময় দেশটিতে ছিল রাজতন্ত্র। বিশ্বে একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবেও পরিচিত ছিল দেশটি। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। ঘুচে যায় হিন্দু রাষ্ট্রের তকমাও। তার পর থেকে মাঝে মধ্যেই রাজতন্ত্র ও হিন্দুরাষ্ট্রের দাবিতে সরব হয়েছেন নেপালের নাগরিকরা। শুক্রবার সেই আন্দোলনই ব্যাপক আকার ধারণ করে। যার বলি হলেন দুজন।
হিন্দুরাষ্ট্রের তকমা ফেরানো দাবিতে মিছিল
জানা গিয়েছে, গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্র এবং হিন্দুরাষ্ট্রের তকমা ফেরানোর দাবিতে শুক্রবার মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন রাজতন্ত্রের সমর্থক রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি এবং আরও কয়েকটি দলের নেতারা। মিছিল শেষে রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে শুরু হয় বিক্ষোভ প্রদর্শন। সেই বিক্ষোভ দমন করতে গিয়েই খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে জনতা ও নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় একজনের। তাঁর নাম সাবিন মহার্জন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এক সাংবাদিকেরও। জখম হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। দেশে অশান্তির এই আবহে জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তলব করা হয়েছে সেনাকে। জারি করা হয়েছে কারফিউও। এদিন আন্দোলনকারীরা টিংকুনের একটি রাস্তার পাশের ভবনে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে পুলিশের তৈরি ব্যারিকেডও।
জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ
তার জেরেই বেঁধে যায় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ। নিরাপত্তারক্ষীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে জনতা। বিক্ষোভ দমনে ফাটানো হয় টিয়ার গ্যাসের শেল। ব্যবহার করা হয় জলকামান। তার পরেও আন্দোলনকারীদের দমন করতে না পেরে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় একজনের। অশান্তি এড়াতে কাঠমাণ্ডুজুড়ে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। নিউ বাণেশ্বর এলাকায় যাওয়ার পথে বহু তরুণকে আটক করে পুলিশ (Nepal Unrest)।
মিছিলে যোগী আদিত্যনাথের ছবিও
এদিন আন্দোলনকারীরা স্লোগান দেন ‘নেপাল সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘দেশে রাজতন্ত্র ফিরে আসুক’। এই দাবিতে টিংকুনে এলাকায় পথে নামেন হাজার হাজার রাজতন্ত্র সমর্থক। নেপালের জাতীয় পতাকা ও দেশের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের ছবি হাতে ‘রাজা আসুন, দেশ বাঁচান’, ‘আমরা রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই’ – স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলে জ্ঞানেন্দ্রর পাশাপাশি ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ছবিও তুলে ধরেছিলেন অনেকে। জেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত দশটা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। এই সময় কয়েকটি এলাকায় কাউকে রাস্তায় বেরতে দেওয়া হবে না। সূত্রের খবর, কারফিউয়ের সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছিল শনিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। শুক্রবার অশান্তির পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১০০ জনকে (Nepal Unrest)।
রাজতন্ত্রের অবসান
২০০৮ সালে সংসদীয় ঘোষণার মাধ্যমে অবসান ঘটে নেপালের ২৪০ বছরের পুরানো রাজতন্ত্রের। হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল পরিণত হয় ধর্মনিরপেক্ষ, যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে। এর ঠিক সতের বছর পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নেপালের গণতান্ত্রিক দিবসে প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ একটি ভিডিও বার্তা দেন। নেপালে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন জানান জনগণের কাছে। তার পরেই তৎপর হয়ে ওঠে রাজতন্ত্রের সমর্থক দলগুলি। গত ৯ মার্চ জ্ঞানেন্দ্রর সমর্থনে বিশাল মিছিল হয় নেপালে।জানা গিয়েছে, এদিনের এই প্রতিবাদ নেতৃত্বে ছিল নাওয়ারাজ সুবেদীর নেতৃত্বাধীন যৌথ আন্দোলন কমিটি। এছাড়াও, রাজেন্দ্র লিংডেনের নেতৃত্বাধীন রাজতন্ত্রপন্থী রাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক দল (আরপিপি)-ও এই আন্দোলনকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে, যা ব্যাপকভাবে রাজতন্ত্রপন্থী দাবিগুলির সঙ্গে সহমত পোষণ করে। গত কয়েক মাসে নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্রর প্রতি সমর্থন বেড়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সেই কারণেই এদিন ব্যাপক অশান্তি হয় নেপালে।
এদিকে, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী সেন্টার)-এর প্রধান পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ডর হুঁশিয়ারি, রাজতন্ত্রের বাহিনীরা যেন স্বাধীনচেতা নেপালবাসী ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলিকে দুর্বল না ভাবে। রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ যেন ফের একই ভুল না করেন (Nepal Unrest)।