Uttarakhand Forest Fire: দাবানলের গ্রাসে উত্তরাখণ্ড, কীভাবে ছড়ায় আগুন? প্রতিরোধের ব্যবস্থাই বা কী?

forest_fire

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিধ্বংসী দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরাখণ্ডের বনগুলিতে (Uttarakhand Forest Fire)। রাজ্যের বন বিভাগ যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, গত ২ দিনে কুমায়ুন অঞ্চলের ২৬টি বন দাবানলের গ্রাসে। ২৬টি বন রাজ্যের প্রায় ১০৮ হেক্টর জমি জুড়ে অবস্থান করছে। সব থেকে বেশি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে গাড়োয়াল অঞ্চলের বনগুলিতে। সেখানকার ৩৪.১৭৫ হেক্টর বন ধ্বংস হয়েছে দাবানলের কারণে।

কী বলছেন বন দফতরের আধিকারিকরা? 

বন দফতরের শীর্ষ আধিকারিক (Uttarakhand Forest Fire) চন্দ্রশেখর জোশী জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই নন্দা রেঞ্জে দাবানলের খবর মিলেছে। নৈনিতাল, হলদোয়ানি, রামনগর প্রভৃতি বনবিভাগ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই সমস্ত অঞ্চলগুলিতে দাবানলকে রোধ করার জন্য তড়িঘড়ি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকারও। বন দফতরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দাবানলকে রোধ করার জন্য একযোগে প্রয়াস চালিয়েছে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স, আর্মি, প্রান্তীয় রক্ষক দলের স্বেচ্ছাসেবকরা এবং হোম গার্ডরা। কুমায়ুন রেঞ্জের বনদফতরের শীর্ষ আধিকারিক প্রসন্ন কুমার পাত্র জানিয়েছেন, কুমায়ুন অঞ্চলে নৈনিতাল জেলার দুই থেকে তিনটি জায়গায় এবং আলমোরা, পিথোরাগড় প্রভৃতি স্থানের একটি করে অঞ্চল দাবানলের গ্রাসে গিয়েছে।

দাবানলের প্রধান কারণ কী?

উত্তরাখণ্ডের বিধ্বংসী দাবানলের (Uttarakhand Forest Fire) কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করছেন, নেপাল সীমান্তবর্তী চম্পাওয়াত ও নৈনিতাল জেলার তীব্র তাপপ্রবাহকে। কারণ এর জেরেই বেড়ে গিয়েছে শুষ্কতা। বনের পর বন দাবানলের গ্রাসে চলে গিয়েছে। অন্যদিকে অপর একটি কারণ হল, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শীতকালীন বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের পরিমাণ খুবই কম হয়েছে।

সাধারণভাবে উত্তরাখণ্ডের দাবানলের (Forest Fires in Uttarakhand) ঘটনাগুলি লক্ষ্য করা যায় ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে। এই সময়ে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে এবং গরম থাকে। বেশিরভাগ দাবানলের ঘটনা ঘটেছে শুকনো পাতা এবং বনে থাকা অন্যান্য দাহ্য পদার্থের কারণে। যা আগুনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। তবে পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনে থাকা ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একটি রিপোর্ট জমা করে ২০১৯ সালে। তাতে তারা জানিয়েছে, ৯৫ শতাংশই দাবানলের কারণ মনুষ্যসৃষ্ট।

দাবানলের প্রাকৃতিক কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বজ্রপাত, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া। কারণ যাই হোক না কেন দাবানল ছড়িয়ে পড়ার তিনটি মূল উপাদান হল- জ্বালানি, তাপ এবং অক্সিজেন। জ্বালানি হল দাহ্য পদার্থ। এর মধ্যে রয়েছে গাছ, ঘাস, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ইত্যাদি। অন্যদিকে অক্সিজেন আগুনকে জ্বলতে সাহায্য করে।

কীভাবে দাবানল ছড়ায়?

জ্বালানি যেমন, ঘাস গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদগুলি সাধারণভাবে দ্রুত পুড়ে যায়। গাছ এবং গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদগুলিতে তেল এবং রজন জাতীয় পদার্থ থাকার কারণে আগুন দ্রুত এবং তীব্রভাবে ছড়াতে থাকে। আবার শুষ্ক আবহাওয়া হওয়ার কারণে কিছু ধরনের (Forest Fires in Uttarakhand) গাছপালাতে আদ্রতাও কম থাকে। আবার সেই সময় যদি বায়ু চলাচলটা প্রবল ভাবে হয় তবে সেই বায়ু থেকে অক্সিজেন আগুনকে আরও ভয়ঙ্কর করে তোলে।

কীভাবে  বনের আগুন প্রতিরোধ করা যায়?

পরিবেশ মন্ত্রকের মতে, প্রাথমিকভাবে দাবানলপ্রবণ বনাঞ্চলগুলিতে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রাখা, স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ফায়ার লাইন তৈরি এই সমস্ত কিছুর দ্বারা আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বনবিভাগ বনের দাবানলকে (Uttarakhand Forest Fire) প্রতিরোধ করার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলি হল-

– ফায়ার অ্যালার্ট সিস্টেম:  ফায়ার অ্যালার্ট সিস্টেম geospatial প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়ে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় দাবানলের স্থানগুলিকে। স্থানগুলি চিহ্নিত করা হয়ে গেলে তা বন বিভাগের আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

– মোবাইল স্কোয়াড: দাবানলকে প্রতিরোধ করতে মোবাইল স্কোয়াড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রাজ্যের বনদফতর তার কর্মীদের নিয়োগ করে এবং দাবানলের সম্ভাবনা রয়েছে এমন স্থানগুলিতে ওই কর্মীরা টহলদারি চালাতে থাকে।

– লিফ ব্লোয়ার: লিপ ব্লোয়ার সিস্টেমের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করেন বনদফতরের কর্মীরা।

– স্থানীয় মানুষজনের সাহায্য নেওয়া: বনাঞ্চলের কাছাকাছি বসবাসরত মানুষজনদের নিয়ে যৌথ বনব্যবস্থা কমিটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই কমিটির কাজ হল দাবানল সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা এবং দাবানলের পরিস্থিতি তৈরি হলে তা রোধ করা।

কীভাবে ভারতীয় বিমান বাহিনী উত্তরাখণ্ডের বনের দাবানল প্রতিরোধ করল?

ভারতীয় বিমান বাহিনী দাবানল প্রতিরোধ করার জন্য Mi-17v5 হেলিকপ্টার মোতায়ন করেছে। এই হেলিকপ্টারটি পাঁচ হাজার লিটার জল বহন করতে সক্ষম। হেলিকপ্টারটি সেজে উঠেছে বড় বাম্প বালতি দ্বারা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে হেলিকপ্টারটি (Uttarakhand Forest Fire) নদী বা পুকুরে নামিয়ে প্রথমে সেখান থেকে ভরাট করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তা দাবানলের অঞ্চলে উড়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে জল ঢেলে দেয়।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share