মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৫ দিন ধরে খাবার মিলছে না রোগীদের, বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে ওয়ার্ড। নেই সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থাও। প্রতিবাদ করলেই মেলে হুমকি! চরম দুর্দশা এবং বেহাল অবস্থা নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের (West Bengal Health)। কৃষ্ণগঞ্জের বাসিন্দাদের একমাত্র ভালো চিকিৎসার জায়গা হল শক্তিনগর হাসপাতাল। কিন্তু অনেকটা দূর হওয়ায় এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসার জায়গা এই কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল। ওই হাসপাতালে হাতেগোনা যে কটি বেড রয়েছে, প্রতিদিনই সেগুলিতেই রোগীরা ভর্তি থাকেন। কিন্তু অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ওই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা একদম তলানিতে। শুধু চিকিৎসা নয়, অন্যান্য পরিষেবাও মাঝেমধ্যেই ব্যাহত হয়। অনেক সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে হাসপাতাল। সেখানে জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলেও তার পরিষেবা মেলে না। এমনকী গত ১৫ দিন ধরে হাসপাতালে খাবার দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীর আত্মীয়দের বাইরে থেকে খাবার কিনে রোগীকে খাওয়াতে হচ্ছে।
কী বলছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা?
ওই হাসপাতালে রোগী ষষ্ঠী রায় বলেন, গতকাল আমি ভর্তি হয়েছিলাম। একজন ডাক্তার এসেছিলেন। কিন্তু তারপরে ২৪ ঘণ্টা পার হলেও কোনও চিকিৎসক আর আসেনি। তিনি জানান, হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনও খাবার দেওয়া হয়নি। অন্য এক রোগীর আত্মীয় রিঙ্কি সরকার বলেন, রোগী নিয়ে হাসপাতালে এসে কোনও চিকিৎসা (West Bengal Health) পাচ্ছি না। শুধুমাত্র একটা স্যালাইন দিয়ে বসিয়ে রেখেছে। আর কোনও চিকিৎসক আসেনি। তাহলে এখানে যদি এভাবেই পড়ে থাকতে হয়, বাড়িতে থাকাই ভালো ছিল। পাশাপাশি তিনিও বলেন, রোগীদের কোনও খাবার দেওয়া হচ্ছে না হাসপাতালের তরফ থেকে।
প্রতিক্রিয়া দিল না কেউই
যদিও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি হাসপাতাল (West Bengal Health) কর্তৃপক্ষ। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে সূত্রের খবর, ওই হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করার জন্য কোনও একজনের উপর দায়িত্ব দেওয়া ছিল। যে টাকা তাকে দেওয়া হত, তাতে কোনও লাভ হত না বলে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন। অভিযোগ, টাকা তো বাড়ানো হয়ইনি, বরং দীর্ঘদিন ধরে প্রাপ্য টাকাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিচ্ছিল না। সেই কারণে তিনি বাধ্য হয়ে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি যিনি জেনারেটরের দায়িত্বে ছিলেন, তিনিও দীর্ঘদিন ধরে পেমেন্ট না পাওয়ার কারণে পরিষেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। যদিও তাঁরা কেউ প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
জানা নেই তৃণমূলের
তবে এ বিষয়ে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অশোক হালদার বলেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি প্রকল্পের উপর নজর রেখেছেন এবং পরিষেবা প্রদান করেছেন। তবে হাসপাতালে (West Bengal Health) দীর্ঘদিন ধরে খাবার পরিষেবা বন্ধ, এটা সত্যিই আমার জানা ছিল না। যত দ্রুত সম্ভব বিএমওএইচ-এর সঙ্গে কথা বলব। কী কারণে তা বন্ধ রয়েছে, জানার চেষ্টা করব। পাশাপাশি যাতে রোগীরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, অতি দ্রুত তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।
কটাক্ষ বিজেপির
তবে পুরো ঘটনায় স্বাস্থ্য পরিষেবা (West Bengal Health) নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক আশিষকুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, এটা আমি আগেই জেনেছিলাম, কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের করুণ অবস্থা। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে ওই হাসপাতাল। শুধু তাই নয়, কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়। দিন ১৫ আগে থেকে খাবার বন্ধ হয়ে গেছে রোগীদের জন্য। সেই কারণে আমি বিএমওএইচ ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন তোলেননি। পাশাপাশি তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, যিনি কিনা ঘোষণা করছেন ১৫ দিনের মধ্যে নার্স তৈরি করতে হবে এবং তিন বছরের মধ্যে ডিপ্লোমা কোর্স কমপ্লিট করে চিকিৎসক তৈরি করতে হবে, তাঁর কাছ থেকে এর থেকে ভালো পরিষেবা আশা করা যায় না। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, একজন নার্স ১৫ দিনে কী শিখতে পারবে? কীভাবে সে মানুষকে সুস্থ করে তুলবে?
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours