মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কলকাতায় যাঁরা থাকেন বা কলকাতায় যাঁরা ঘুরতে যান, তাঁদের মধ্যে কেউ ভিক্টোরিয়া (Victoria Memorial) ঘুরতে যাননি, এমনটা হতেই পারে না। কলকাতায় ভ্রমণ পিপাসুদের মূল কেন্দ্রবিন্দুই হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। শহরজোড়া কংক্রিটের ভিড়ের মাঝখানে যেন স্নিগ্ধতায় মোড়া পরিবেশে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে এক সৌধ। একবার এসে পৌঁছালে চোখ সরানো যায় না। শ্বেত পাথরের তৈরি এই স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে একটি জাতীয় সংগ্রহশালা এবং কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে বানানো এই মেমোরিয়াল গড়ে ওঠার পিছনে আছে অনেক ইতিহাস ও অজানা তথ্য।
কেন ও কীভাবে গড়ে উঠল এই ইমারত?
ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। গোটা ভারতের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল আজকের মহানগরী। আর সেই সময় ভারতের সম্রাজ্ঞী ছিলেন রানী ভিক্টোরিয়া। ১৮৫৭ থেকে ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি মৃত্যুদিন পর্যন্ত তাঁর শাসনকাল চলেছিল। তাঁর মৃত্যুর পরেই ভারতীয় উপনিবেশে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি সৌধ নির্মাণ করা হবে বলে তখনকার ব্রিটিশরাজের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এমনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, সেই স্মৃতিসৌধটি হবে আগ্রার তাজমহলের আদলে। রানীর মৃত্যুর পরেই তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন এক বৈঠকের আয়োজন করেন। সেখানেই তিনি এই তাক লাগানো সৌধের (Victoria Memorial) নির্মাণের কথা তুলে ধরেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, তাজমহলের আদলে এটি তৈরি হবে এবং প্রচুর ফুলের গাছ ও জলাধার থাকবে এই সৌধকে ঘিরে, যা দেখতে কলকাতায় ভিড় জমাবে মানুষ এবং যা তাজমহলকেও টেক্কা দেবে। এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রস্তাবটি তৈরি করা হয় ১৯০১ সালে। এর পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ১৯০৬ সালে এর সম্পূর্ণ নকশা তৈরি করা হয় এবং নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজা পঞ্চম জর্জ। ভিক্টোরিয়া পঞ্চম জর্জের বোন ছিলেন। ভিক্টোরিয়া মারা যাওয়ার পর তাঁরই রাজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবা সপ্তম এডওয়ার্ড যেহেতু বেঁচে ছিলেন, তাই তিনি ততদিন রাজা হতে পারেননি। পঞ্চম জর্জ ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের বিদ্বেষমূলক মনোভাব মেনে নিতে পারেননি। তাঁরই রাজত্বকালে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
ভিক্টোরিয়া গড়ে উঠতে কত বছর সময় লেগেছিল? কে এর নকশা তৈরি করেছিল?
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হওয়ার পর ১৯১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর (Victoria Memorial) নির্মাণকার্য শুরু হয় এবং তা শেষ হতে প্রায় এগারো বছর সময় লাগে। এরপরেও সম্পূর্ণরূপে এই নির্মাণকার্যটি শেষ হয় ১৯২১ সালে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে কুড়ি বছর সময় লেগেছিল এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গড়ে উঠতে। তৎকালীন ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্ট-এর প্রেসিডেন্ট স্যার উইলিয়ম এমার্সন এর নকশা তৈরি করেন। ভিক্টোরিয়া সংলগ্ন বাগানটির নকশা তৈরি করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল ও স্যার জন প্রেইন। এই সমস্ত নির্মাণকার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মার্টিন অ্যান্ড কোং কে। এই কোম্পানির কর্ণধার ছিলেন দুজন যথা স্যার থমাস অ্যাকুইনাস এবং স্যার রাজেন মুখার্জি। রাজেন মুখার্জিকে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে সেই সময় নাইট উপাধি দেওয়া হয় এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য।
জায়গাটি কার বা কাদের ছিল? তৈরিতে মোট কত খরচ হয়েছিল?
শুনলে হয়তো একটু অবাক লাগতে পারে, বর্তমানে আমরা যে স্থানে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে (Victoria Memorial) দেখতে পাই, সেটি মূলত ছিল প্রেসিডেন্সি জেলের জমি। সেই সময়কার প্রধানত রাজনৈতিক বন্দিদের এই জেলে রাখা হত। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জেলটিকে এই স্থান থেকে আলিপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে আলিপুরে সেই জেলটি অবস্থিত।ব্রিটিশদের সিদ্ধান্তে এই স্মৃতিসৌধ গড়ে উঠতে দেশের টাকাই খরচ করা হয়েছিল, ব্রিটিশদের খরচ ছিল তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। তৈরি করার জন্য তৎকালীন জমিদার, রাজা, ধনী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, অভিজাত ব্যক্তিদের কাছে থেকে লর্ড কার্জন অর্থ প্রদানের আবেদন জানান। এই আদেশ খণ্ডন করার সাহস কারও ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে সবার উদ্যোগে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours