মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহিলা সংরক্ষণ বিল (Womens Reservation Bill) পেশ করে কি এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)? দুই পাখির একটি হল ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মহিলা ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করা। দ্বিতীয় পাখি হল— বিরোধী-ঐক্যকে বা বলা ভাল, অধুনা ‘ইন্ডি’ জোটের ঐক্যকে খান-খান করা। নরেন্দ্র মোদির এই এক সিদ্ধান্তেই বিরোধীদের ‘রাতের ঘুম’ যে উড়ে গিয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। অন্তত এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
মঙ্গলবার, গণেশ চতুর্থীর পুণ্য-লগ্নে নতুন সংসদ ভবনের প্রথম অধিবেশনেই ‘মাস্টারস্ট্রোক’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi)। প্রথমেই মহিলা সংরক্ষণ বিল (নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম বিল, ২০২৩) লোকসভায় পেশ করে মোদি সরকার। দেশের সংসদ ও রাজ্যগুলির বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সংস্থান রয়েছে এই বিলে। মহিলা সংরক্ষণ ইস্যুকে হাতিয়ার করে মোদি সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল অবলম্বন করার কথা ভেবে আসছিল সাম্প্রতিককালে-গঠিত বিরোধীদের ‘ইন্ডি’ জোট।
ইস্যু হারিয়ে দিশাহীন ইন্ডি-জোট!
কিন্তু, গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মহিলা সংরক্ষণ বিলে অনুমোদন দেওয়ায় বিরোধীদের মুখের গ্রাস সেখানেই কেড়ে নেন নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। এদিকে, ইস্যু হাত ফস্কে বেরিয়ে যাওয়ায় সেই থেকেই বিরোধীরা কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়ে। ইন্ডি-জোট যেখানে ভেবেছিল, মোদিকে কোণঠাসা করবে, সেখানে দেখা যায়, উল্টে তারাই চাপে পড়ে গিয়েছে। কারণ, এখন মহিলা সংরক্ষণ বিলের স্বপক্ষেই যাওয়া ছাড়া তাদের কাছে অন্য কোনও পথ নেই। বিরোধীরা ভালমতোই বুঝতে পারছে, তারা যদি এখন সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করার স্বার্থে মহিলা বিলকে (Womens Reservation Bill) সমর্থন না করে, তাহলে, দেশবাসীর সামনে তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়বে। অন্যদিকে, সমর্থন করলেও আখেরে লাভ হবে বিজেপি তথা এনডিএ-র। আগামী লোকসভা নির্বাচনে এর পুরো ফায়দা যে বিজেপির ঘরেই উঠবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই নিয়ে ইন্ডি-জোট উভয় সঙ্কটে। যে কারণে, তারা এখন কৃতিত্বের দাবি করে বেড়াচ্ছে সব জায়গায়।
অতীতে বিরোধিতা, এখন সমর্থন বিরোধীদের!
নরেন্দ্র মোদি সরকারের আনা এই বিলকে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী-জোটের ‘হেড অফ দ্য ফ্যামিলি’ কংগ্রেস। সমর্থনের কথা জানানো হয়েছে বিরোধী জোট-শরিক সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও বহুজন সমাজ পার্টির তরফে। এমনকি, সমর্থন জানাতে সম্মত হয়েছে বিজেপির একসময়ের শরিক তথা বর্তমানে বিরোধী ধরের সদস্য নীতীশ কুমারের জেডিইউ। এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হবে প্রথম তিন শরিক দলের। কারণ, এই দলগুলিই এক সময় সংসদে পেশ হওয়া মহিলা সংরক্ষণ বিল (Womens Reservation Bill) নাকচ করেছিল। সেই ইতিহাসের সাক্ষী রয়েছে সদ্য-প্রাক্তন হওয়া সংসদ ভবন। এখন এই দলগুলির সামনের সারিতে একাধিক মহিলা মুখ আসায়, মনোভাবও পাল্টাতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
মহিলা ভোটাররাই বিজেপির শক্তি
পাশাপাশি, আরেকটা চিন্তা যা বিরোধীদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে তা হল ভোট ব্যাঙ্ক হাতছাড়া হওয়ার ভয়। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিল সংসদে পাশ হয়ে গেলে ভোটে সবচেয়ে লাভবান হবে বিজেপি। তাঁদের মতে, বিজেপির মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক বিপুলভাবে ফুলে উঠবে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পুরুষদের তুলনায় এক শতাংশ ভোট বেশি ছিল মহিলাদের। আবার মহিলা ভোটারদের বেশিরভাগ পছন্দ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Narendra Modi)। লোকসভা নির্বাচনে মহিলাদের ভোটদানের হার ছিল ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৩৬ শতাংশ আর কংগ্রেস পেয়েছিল ২০ শতাংশ মহিলা ভোট। পাঁচ বছর আগে, ২০১৪ সালে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন ২৯ শতাংশ মহিলা। অর্থাৎ, পাঁচ বছরে বিজেপির মহিলা ভোটব্যাঙ্ক অনেকটাই বেড়েছে।
নরেন্দ্র মোদির ‘গেম-চেঞ্জার’ সিদ্ধান্ত!
আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ১২টি এমন রাজ্য ছিল যেখানে পুরুষদের থেকে বেশি সংখ্যক মহিলা ভোট দিয়েছিলেন। ২টো রাজ্য বাদ দিয়ে বাকি ১০টিতে বিপুল সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গেরুয়া শিবির মহিলাদের জন্য একাধিক পদক্ষেপ করেছে। সেই তালিকার অন্যতম ছিল তিল তালাক নিষিদ্ধ করা। এর পাশাপাশি, উজ্জ্বলা যোজনা, মহিলাদের মুদ্রা ঋণ, পোষণ প্রকল্প, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও-এর মতো কর্মসূচি বিপুল জনপ্রিয় হয়েছে। এবার, মহিলা সংরক্ষণ বিল (Womens Reservation Bill) পাশ হলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে এই শতাংশের হার আরও বৃদ্ধি পাবে। আর ঠিক এই জন্যই, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) এই সিদ্ধান্তকে ‘গেম-চেঞ্জার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours